Bohemian Travelogue Issue: September – October || 2021

Table of Content

সম্পাদকের কলমে

শ্রীধর ব্যানার্জী

আমরা যারা মনে ও প্রাণে চারণিক, শারদীয়া ছুটি তাদের কাছে যেন মুক্তির খোলা দুয়ার। ঝোলা পিঠে নিয়ে আমরা সব বেরিয়ে পড়ি পাহাড়ে-পর্বতে, জলে-জঙ্গলে। চলে সম্বৎসরের স্মৃতি সঞ্চয়। বোহেমিয়ান মনের খোরাক সংগ্রহ। ছুটি ফুরালে দেখা যায় মানুষগুলো সব ঘরে ফিরেছে, আর নির্জন সৈকতে পড়ে আছে স্মৃতির স্তুপ, পাহাড়ি নদীর স্রোতে ভেসে চলেছে অজস্র আলোকিত মুহূর্ত। এমনটাই হয়ে থাকে, এমনটাই দস্তুর৷ তবু কখনও কখনও হিসাব ওলটপালট করে দিয়ে পথে নামা মানুষগুলো আর ঘরে ফেরে না। পথেই হারিয়ে যায় নিঃশেষে। এবারের শরৎ তেমনই এক ওলট-পালট হয়ে যাওয়া শরৎ। অসময়ের মেঘভাঙা বৃষ্টি আর ধ্বস এবছর অনেকগুলো প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। উত্তরাখণ্ড আর হিমাচলের পাহাড়ে যাঁরা হারিয়ে গেলেন Bohemian Travelogue -এর বর্তমান সংখ্যাটি তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশে নিবেদিত হল।

বোহেমিয়ান ট্রাভেলগের জুলাই-আগস্ট সংখ্যা থেকে শুরু হয়েছে নতুন একটি ধারাবাহিক। মৈনাক কর্মকারের কলমে ‘অন্য পথে কেদার’। বর্তমান সংখ্যায় রয়েছে লেখাটির দ্বিতীয় পর্ব।

লোপামুদ্রাদির গল্পের ঝুলি থেকে এবারের প্রাপ্তি শ্রীশৈলম – নাল্লামালা অরণ্যের গভীরে অবস্থিত দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গের আখ্যান।

সুদূর ইউরোপ থেকে শান্ত এক লেকের কাহিনী শোনাবেন মঞ্জিষ্ঠা মুখার্জী। শুনে নেব সপ্তর্ষি চৌধুরীর বয়ানে মেঘালয় ভ্রমণের বৃত্তান্ত।

আর প্রতিবারের মত এবারেও কিচির-মিচিরদের খবর নিয়ে হাজির আমাদের পাখিওয়ালা সৌম্য চ্যাটার্জী। সুপরিচিত ট্রেকিং রুট ফোকতে দারার পথে যে সমস্ত পাখিদের দেখা মেলে তাদের তিনি সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন এই সংখ্যায়।

আসুন Bohemian Travelogue -এর পাতায় পাতায় শুরু করি আমাদের মানস ভ্রমণ। We the Bohemians টিমের পক্ষ থেকে আমাদের সকল সুধী পাঠক পাঠিকাকে জানাই শারদীয়া ও দীপাবলির শুভেচ্ছা। সবাই সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন – এই প্রার্থনা রইল।

**********************************

অন্য পথে কেদার (পর্ব ২)

মৈনাক কর্মকার

Traveler, Kolkata

থৌলী (উচ্চতা ১২৮০০ ফুট )

ঝকঝকে আলোর সকাল। সকালে আমাদের তাড়া একটু বেশী থাকে। সবাই ফ্রেশ হয়ে মাল গুছিয়ে রেডি। আজ হাঁটা শুরু করতে ৮ টা বেজে গেল। ১০০ মিটারের মতো হালকা চড়াই পেরিয়ে ছোট একটা সমতল জায়গা, তারপর সামনে টানা চড়াই প্রায় ৬০ডিগ্রী ঢালে উঠতে হবে । থোকা থোকা বড় বড় ঘাস আর পাথর।

খাড়াই ঢালে বেয়ে উঠে আসার পর এক সমতল ঘাসের প্রান্তর দেখতে পেলাম | সেখানে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিলাম| আমরা উত্তর পশ্চিম কোন বরাবর যাবো, এখানে আর কোন গাছের দেখা পেলাম না । পাহাড়ের কোল দিয়ে আড়াআড়ি চলেছি । টানা ২ ঘন্টা হাঁটার পর পৌঁছলাম থৌলী, আজকের ক্যাম্প সাইট, উচ্চতা ১২৮০০ ফুট |

বিকেল হতেই শুরু হল ঝোড়ো হাওয়া । সবাই টেন্টের ভিতরে । টেন্টের পোল ধরে বসে আছি, যাতে টেন্ট না পরে যায়। এবার শুরু হল মুশল ধারায় বৃষ্টি। ৫ মিনিটের বৃষ্টির পর সাবুদানার মতো বরফ পরা শুরু করলো। বরফের মধ্যেই বেরিয়ে টেন্টের দড়ি গুলো টান করে বড় বড় পাথরের সাথে বাঁধলাম। কিছুক্ষন পর দেখি টেন্টের outer লুজ হয়ে গেছে। আবার বেরলাম ! দেখি আমি যে পাথরে বেঁধে ছিলাম সেটা তুলে নিয়ে পাশের টেন্টের দড়ি বাঁধা। এটা জীবনদার কাজ, জীবনদা বেড়িয়ে ছিল ওদের টেন্ট ঝাড়তে তখনই পাথর চুরি !

৮টা নাগাদ সব শান্ত হল, খেয়ে জম্পেশ ঘুম ।

এই ছবির জন্য অনেকক্ষন বসাই যায়

সকালে পরিষ্কার আকাশ দেখে মনেই হল না কাল সন্ধ্যায় ঐ রকম ঝড় বৃষ্টি হয়েছে । চৌখাম্বা একদম হাতের নাগালেই । চৌখাম্বা ছাড়াও থৌলী থেকে দেখা যায় পার্বতি শৃঙ্গ, পার্বতি গলি, কাচনী খাল, ঘিউবিনায়ক পাস, বুড়া মদমহেশ্বর ।

থৌলী জায়গাটা এক কথায় অসাধারন । আমাদের দলের সবাই বাইরে দাড়িয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে শৃঙ্গ গুলোকে চিনে নেবার চেষ্টা করছি । তপা সবাইকে চা দিয়ে গেল । রান্নাঘরের লোকজন প্যাকড লাঞ্চ রেডি করতে ব্যস্ত । খুব সুন্দর একটা সকাল ।

আচ্ছা আমরা পাহাড়ে যাই কেন? শুধু পিঠে sack নিয়ে মাথা নিচু করে হাঁটবো বলে। এই যে চারদিকে চেনা অচেনা পিক, সবুজ বিস্তীর্ণ ভ্যলি, উপর থেকে নীচে তাকিয়ে বুড়া মদমহেশ্বর দেখা, এই গুলোর জন্যই এতো খরচ করে, পরিশ্রম করে ট্রেকে আসি । আর এই সাত দশ দিন ধরে প্রকৃতিকে যে ভাবে কাছে পাই নিবিড় করে সেটা সারা জীবন স্মৃতির মণিকোঠায় থেকে যায়। পাহাড়কে অনেক রকম ভাবে দেখা যায়… কেউ দেখে দূর থেকে নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে থেকে আবার কেউ কেউ তার কোলের কাছ ঘেঁষে পাহাড়কে বুকে জড়িয়ে ধরে।

আজ হাঁটা শুরু করতে সাড়ে আটটা বেজে গেলো | অনেকটা হাঁটা । পাহাড়ের গা বেয়ে আড়াআড়ি উপরে ওঠা। এখানে নির্দিষ্ট কোন পথ নেই। কোথাও ঘাস কোথাও বোল্ডার, যার যেখানে খুশী পা ফেলুন শুধু মনে রাখবেন সাবধানে দেখে এগোতে হবে! আপনি কি হাঁপিয়ে গেলেন তাহলে একটু দাঁড়িয়ে আশপাশটা দেখুন বুক ভরে নিঃশ্বাস নিন আবার চলুন সামনে আরোও চড়াই একটু এগিয়ে গিয়ে কোথাও বসবো। প্রায় দুঘন্টা একটানা চলার পর একটা সমতল জায়গা পেয়ে সবাই বসলাম । ছোট সমতল ঘাসের জমি |

রডোডেনড্রন গাছের ফাঁক দিয়ে দেখা দূরের বরফ শৃঙ্গ

এবারের চড়াইটাকে চড়াই না বলে খাড়াই বলাই ভালো । সবাই এগিয়ে গেল, পোর্টাররা আরো আগে, দেখি একটা টিলার মতো; তার উপর দিয়ে যেতে হবে । নীচ থেকে ছবি তুলে রওনা হলাম। উঠতে উঠতে এক ঘন্টা পনের মিনিটের মাথায় পৌছলাম বিনায়ক টপ। এই “টপ” শব্দটা যখনই শুনবেন, মনে রাখবেন টানা চড়াই। এবার তপা আর অরবিন্দদা পূজো করলো বিনায়ক বাবার। আমরা প্রসাদ খেলাম কাজু বরফি।

আরো ঘন্টাখানেক চলার পর পৌছলাম দোয়ারা পাস(১৩৫০০ ফুট)।এখান থেকে পশ্চিম দিকে নেবে যাবো । বড় বড় বোল্ডারের উপর দিয়ে কিছুটা যাওয়ার পরই ঘাসের ঢাল বেয়ে নীচের দিকে নাবতে শুরু করি আবার বোল্ডার শুরু, এই জায়গাটার নাম নাকি শিলাসমুদ্র। বোল্ডার টপকে নেমে এলাম একটা বুগিয়ালে। সবাই বসলাম ছরিয়ে ছিটিয়ে। খুব খিদে পেয়েছে তাই ম্যগি আর চা । ১:২০ তে ঢুকে ছিলাম এখানে খেয়ে উঠতে উঠতে ২:৩০ বেজে গেল। বুগিয়ালের উপর দিয়ে হাঁটা খুবই মজার, কিন্তু সেই মজা বেশিক্ষন রইলো না। শুরু হলো বৃষ্টি, গহেরী বুগিয়াল (১৩২২০ ফুট) ছারিয়ে ঘাসের ঢাল ধরে উপরে উঠে এসে ছোট একটা জায়গায় টেন্ট লাগালাম বৃষ্টির মধ্যেই। সবাই খুব ক্লান্ত তাই তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুম।

পরদিন ভোর ৫ টায় উঠে পড়লাম । আকাশ নীল, একটুও মেঘ নেই । গতকাল আমাদের যাবার কথা ছিল মান্দানি, কিন্তু এত লম্বা রাস্তা তার উপর বৃষ্টি তাই থেকে গেছিলাম এই গহেরী বুগিয়ালের শেষ প্রান্তে। আজ আমাদের গাইড সুন্দর সিং ফিরে যাবে, ওর আর একটা টিম আসবে তাই, এখান থেকে আমাদের পথ দেখাবে দেবেন্দর। সকালে সুন্দর সিং কে ভাত খাওয়ানো হল, সাথে রুটি তরকারী প্যাক করে দিয়ে দেওয়া হল । সুন্দর সিং ওর পথ ধরলো, আর আমরা আমাদের পথে এগোলাম ।

আজ বেশ কম হাঁটা, পথটাও দারুন। চোখের সামনে বিশালী শৃঙ্গ, তার ডান দিকে মান্দানি শৃঙ্গ। ছোট ছোট পাহাড়ের ঢিপি । ঘাসের রং কোথাও হলুদ, কোথাও হলকা সবুজ | ছোট ছোট হাম্পের উপর দিয়ে চলতে একটু কষ্ট হয় বটে কিন্তু আনন্দ বেশ, ক্রমশ বিশালী শৃঙ্গ হাতের নাগালে চলে আসছে। হালকা উৎরাই পথে নাবছি, হঠাৎ চোখে পরলো রডড্রেনডন গাছের ঝোপ। গোটা দশ পনের গাছ এক জায়গায় দল বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে আর কোথাও কোন গাছ নেই। চলে এলাম মন্দানী ময়দানের মুখে, ছোট একটা জলের ধারা বয়ে চলেছে। যেহেতু জুন মাস তাই জল খুবই কম আর খুবই ঠান্ডা, একে একে সবাই পেড়িয়ে গেল। আমি দেবেন্দরের কাছে বায়না করলাম, আমি জলে পা দেবো না খুব ঠান্ডা । আমি অবশ্য ইয়ার্কি করেই বলেছিলাম কথাটা | কিন্তু, কিছু বোঝার আগেই ও আমায় কাঁধে তুলে হাঁটা শুরু করলো | জলের মাঝখানে নিয়ে গিয়ে বলে, ” এবার নাবিয়ে দেব?” আমি বললাম,” না, না ! জুতো ভিজে যাবে !”

হাতনি পাসের উপর থেকে বরফ ঢাকা পথে নেমে আসছি কেদারনাথ

যাই হোক পাড়ে পৌঁছে একটু এগিয়ে টেন্ট লাগালাম। ১২ টা বাজে আজকের মত হাঁটা শেষ | পৌঁছে গেলাম মান্দানি | এদিকে দেবেন্দর দেখি স্নান করছে । খুব ঠান্ডা জল তবুও স্নান করলো পুজো দেবে বলে । মান্দানীতে পাথর সাজিয়ে ছোট একটা মন্দির আছে। মন্দিরটি চূড়া নিয়ে প্রায় সাড়ে সাত ফুট হবে ভিতরে চার ফুট মত উচ্চতা, হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হয়, একজন বসতে পারে মন্দিরের ভেতর। যে দেবতা আছেন আমাদের খুব পরিচিত তবে পাহাড়ে আমি তাকে এই প্রথম দেখলাম। দেবী দুর্গা । মূর্তির মাপ নয় ইঞ্চি বাই এগারো ইঞ্চি হবে, কালো পাথরের তৈরি তবে আমরা যেমন দুর্গা মূর্তি দেখে অভ্যস্ত দশহাত অসুরের বুকে ত্রিশুল, সেরকম না। এখানে দুর্গার চার হাত বাঁদিকের নীচের হাত দিয়ে অসুরের চুলের মুঠি ধরা আর এক হাতে সম্ভবত ধনুক। ডান দিকের এক হাতে ত্রিশুল সোজা করে ধরা আর এক হাতে তলোয়ার, লক্ষ্মী ও সরস্বতী খুব ছোট আকারে। দুর্গার ডান দিক ও বাঁ দিকে আলাদা করে কার্তিক গনেশ আছে, বহু বছরের পুরনো মুর্তি ক্ষয়ে গিয়ে আবছা হয়ে আছে। এই দেবতা এখানে মান্দানী মাতা নামে পরিচিত। আমাদের কাছে লজেন্স ছিল আর ফুল বলতে ছিল রডোবেনড্রোন গাছের ফুল| তাই দিয়েই দেবেন্দর পুজো করলো…উপকরণ অতি সামান্য |

সবুজ ময়দান, এদিক ওদিক ছড়ানো ছোট ছোট বোল্ডার | পাশে ছোট্ট একটা নালার জলের শব্দ, উত্তর দিকে বিশালী ও উত্তর পূর্ব দিকে মান্দানী শৃঙ্গ একেবারে হাতের নাগালে। দারুন লাগছিল বিকেলটা ! আমরা জুন মাসে এসেছি, তাই ফুল দেখতে পাই নি| কিন্তু আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে এলে প্রচুর ফুলে ফুলে ভরে থাকে | বিশাল বড় ভ্যালি যেন সবুজ কার্পেট পাতা | মনে হয় বাচ্চাদের মত হুটপাটি করে খেলে বেড়াই ! কাছেই একটা বড় গ্লেসিয়ার, তাই খুব ঠান্ডা হাওয়া | এই রকম জায়গায় সময় কখন বয়ে যায় বোঝাই যায় না। সবাই টেন্টে বসে সামনের দরজা খুলে আড্ডা শুরু হলো। সূর্য পাহাড়ের আড়ালে যেতেই জোরে ঠান্ডা হাওয়া শুরু হলো, তপা চা নিয়ে এলো সঙ্গে পকোরা, আজ সন্ধ্যার আড্ডা টেন্টের ভিতরেই চলবে।

যত রাত বাড়ে তত জোরে হাওয়া, সঙ্গে প্রচন্ড ঠান্ডা | আমরা যখন খেতে গেলাম, তখন রাতের আকাশ পরিষ্কার | তারার আলোয় দেখলাম মান্দানি আর বিশালী শৃঙ্গ ঝকঝক করছে। রাতের আকাশে তারার আলো এত্তো সুন্দর না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না |

পরদিন সকাল ৫:৩০ টা| তপা হাতে চা ধরিয়ে দিল, বাইরে এলাম | ঠান্ডা হাওয়া বইছে | উত্তরপূর্ব দিকে মান্দানী শৃঙ্গে তখনও আলো পরে নি । পূর্ব দিকে পাহাড় থাকায় সূর্যের আলো ক্যাম্প সাইটে পরতে দেরি আছে। মান্দানী শৃঙ্গের মাথায় প্রথম আলো পরলো | অসাধারণ দৃশ্য ! দুচোখ সার্থক ! এবার তৈরী হয়ে বেরতে হবে ।

আজ হাঁটা শুরু হল ৭ টা ১০ নাগাদ। কিছুটা সমতল ঘাসের উপর হেঁটে চড়াই শুরু । ১০:৩০ টা নাগাদ জঙ্গল শেষ হল, কিন্তু চড়াই শেষ হল না। ছোট ছোট ঝোপ ঘাসের উপর নানা রঙের ফুল, একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার চলা । হঠাৎ কোথা থেকে একদলা মেঘ এসে সূর্য ঢেকে দিল। দেড়টা নাগাদ বৃষ্টি এলো, প্রথমে ঘাসের ঢালে ছাতা মাথায় বসে ছিলাম। তারপর বৃষ্টির মধ্যেই আরো কিছুটা উপরে উঠে একটা বড় পাথরের নীচে আশ্রয় নিলাম। সামনেই উপরে একটা বড় বোল্ডার দেখিয়ে দেবেন্দর বললো ঐ বোল্ডারটার পাশ দিয়ে যেতে হবে। এখন কারো মুখে কোন কথা নেই শুধু নিশ্বাসের শব্দ । মেঘলা থাকায় উপর থেকে নিচের দিকে কিছুই দেখতে পারিনি। এবার বড় বড় বোল্ডারের মধ্যে দিয়ে সাবধানে নেবে আসি। বিকেল ৫ টা নাগাদ পৌঁছাই ভান্ডারা ক্যাম্প সাইটে (১২৬০০ ফুট), প্রায় দশ ঘন্টা আজ হেঁটেছি | মাঝে বৃষ্টি | তাই সবাই ক্লান্ত |তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুম ।

ভোরের আলোয় কেদারনাথ মন্দিরের পিছনে ভার্তেকুন্ডা শৃঙ্গ

পরদিন সকালে চকচকে রোদে টেন্ট শুকিয়ে নেওয়া হল। আকাশ পরিস্কার বা ঘুম ভালো হয়েছে ঠিক কি কারন জানি না কিন্তু সবার মুখে খুব হাসি। সকাল সকাল গোবিন্দ ভোগ চালের ফ্যনা ভাত, ডিম সিদ্ধ, মাখন খেয়ে নিয়েছি। আজ হাঁটা কম, তবে, একটা পাস ক্রস করতে হবে। বড় বড় বোল্ডার টপকে পৌঁছলাম সবুজ ঘাসের ঢালে, কিছুটা সোজা গিয়ে ডানদিকে পাহাড়ের খাঁজে ঢুকে টানা ঘাস আর বোল্ডারের খাড়াই পথ পেরিয়ে সিমতোলি ধার বা সিমতোলি পাস, এখানে অনেকক্ষন বসলাম । চোখের সামনে বিশালী শৃঙ্গ তার থেকে নেমে এসেছে কালীগঙ্গা নদী, উপর থেকে দেখতে দারুন লাগছে । বেশ কিছুটা বোল্ডারের উপর হাঁটার পর, ঘাসের ঢাল বেয়ে নিচে নামা শুরু করি, বেশী সময় লাগলো না | দুপুরে পৌঁছে গেলাম বুগিয়ালে। ঘন সবুজ কার্পেটে মোরা খাম বুগিয়াল দেখে যেন চোখের আরাম | একটু এগিয়ে টেন্ট লাগানো হল। এই জায়গাটার নাম বলজোতিয়া(১২২০০ ফুট)।

সামনেই বিশালী হিমবাহ, তার থেকেই নেমে এসেছে কালীগঙ্গা নদী। বিশাল বড় একটা সবুজ মাঠ একদম সমতল । ট্রেকে এতো সুন্দর ক্যাম্প সাইট খুব কম পেয়েছি। ৪টে নাগাদ বেড়িয়ে পরলাম কালীগঙ্গার কাছে । বেশ কিছুক্ষন ওখানেই বসে রইলাম। হিমবাহের ঠান্ডা হাওয়া সরাসরি আমাদের গায়ে লাগছে | ৬ টা নাগাদ আগুন জ্বালিয়ে জমে গেল আড্ডা। এই ট্রেকে টেন্টে থাকার আজই শেষ রাত। যদিও হাঁটা বাকি দু দিন। শুতে রাত ১০টা বেজে গেল।

দেবেন্দরের ডাকে ঘুম ভাঙলো। সকালে টেন্টের ভিতরে বসে চা পাওয়ার মজাই আলাদা।আজ সবাই তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে গেল। সব বাসন, স্টোভ গুছিয়ে নেওয়া হল কারন এগুলোর আর দরকার হবে না। আজকের ট্রেকটা খুবই কষ্টকর এটা আমরা সবাই জানি| সকাল ৬:২০টায় হাঁটা শুরু করলাম, গাছের গুড়ি দিয়ে তৈরী সেতু কালীগঙ্গার উপরে বেশ চওড়া তাই সহজেই পার হয়ে এলাম । নীল আকাশ ঘাস পাথরের খাড়াই পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতে শুরু করলাম । সামান্য হেঁটেই হাঁপিয়ে যাচ্ছি | একটু দাঁড়িয়ে আবার হাঁটা, মঝে মধ্যেই চার হাত পায়ে উঠতে হচ্ছে। সাড়ে নটায় একটা ঢালে বসলাম এবার টিফিন করে নি। আবার হামাগুড়ি দিয়ে ওঠা শুরু করি।

অবশেষে ১১:৫০ টায় হাতনি পাসের উপরে আমরা। সরু একটা রিজের ওপর বসার একটুও জায়গা নেই। কোনো রকমে ঢালের গায়ে যে যেখানে পারছে বসে পরেছে, চোখে পরলো নদীর পারে সরু সুতোর মতো রাস্তা, ঐ পথ ধরেই লোকে কেদার যায়। হাতনী পাস কে টাটা করে নামা শুরু, সবাইকে বলা হল খুব সাবধানে কারন পাথরের উপর বরফ পরে আছে । আগের লোকের পায়ের ছাপ দেখে পা ফেলবে সবাই। বরফের উপর থেকে নামছি আকাশ কালো একটু পরেই বরফ পরা শুরু । কখনো পাথর, কখনো বরফ, এই ভাবে এসে একটা সমতল জায়গায় বসলাম । এখান থেকে পুরো কেদারনাথ শহর দেখা যায়।অসাধারন সেই দৃশ্য, মনে হল যেন পাখির চোখ দিয়ে কেদারনাথ দর্শন হলো।

আমরা নেমে এসে দাড়ালাম ভৈরব মন্দিরের কাছে। যারা কেদারনাথ গেছেন অনেকেই হয়তো এই ভৈরব মন্দির দর্শন করেন নি। কেদারনাথ মন্দির থেকে ডান দিকে দেড় কি.মি. উপরে উঠলেই এই মন্দির | খাড়াই পথ উঠতে এক ঘন্টা লাগে, তবে এখান থেকে এই ছোট্ট জনবসতি আর কেদারনাথকে অন্য রূপে দেখা যায় । এত সুন্দর জায়গায় এই মন্দিরের অবস্থান, মন্দিরের সামনে দাড়ালে অনেক বরফের শৃঙ্গ দেখা যায় | কেদারনাথ শৃঙ্গ, কেদার ডোম, ভার্তেকুন্ডা আরো অনেক।

কেদারনাথ মন্দির

পরদিন সকালে ঠিক হল কেদারনাথ মন্দিরের সামনে খাবার হোটেল থেকে পরোটা খেয়ে হাঁটা শুরু করবো। সকাল ৭টা, কিন্তু তখনই মন্দিরের সামনে সাংঘাতিক ভীড়। রাস্তায় প্রচুর মানুষ, সবাই চলেছে কেদারনাথ দর্শন করতে । নানা রকমের অভিজ্ঞতা হল এই মানুষগুলোর সাথে কথা বলে। বেশীর ভাগ মানুষই অবাঙালী। সোজা রামওয়ারায় এসে কিছু খেয়ে এক টানে নেমে এলাম গৌরীকুন্ড। খুব ঘিঞ্জি জায়গা কোনরকমে এক গ্লাস চা খেয়ে একটা গাড়ী ধরে সোজা গুপ্তকাশী । এখানটা কিছুটা হলেও ফাঁকা তীর্থযাত্রীদের ভীড় নেই একটা হোটেলে উঠলাম ।

আমাদের অন্য পথে কেদার ট্রেক এখানেই শেষ হল।

**********************************

দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ-মল্লিকার্জুনম

লোপামুদ্রা বর্মন

Traveler, Writer, Photographer 

কবি বলেছিলেন, ‘সকল দিকে আমায় টানে।’ এ বড় সত্য কথা। আর এই টানাটানিটা আমার বড়োই ভালো লাগে। এবার টেনেছে শ্রীশৈলম, চলেছি মল্লিকার্জুনস্বামী দর্শনে। হায়দ্রাবাদ শহর ছেড়ে এগিয়ে চলেছি। নতুন রাজ্য এই তেলেঙ্গানা। কিন্তু শ্রীশৈলম রয়ে গেছে অন্ধ্রপ্রদেশেই। মসৃণ কালো পীচের রাস্তা। রাস্তার দুধারে মাটির রং লাল। দূরে দূরে পাথুরে টিলা। ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ। বেশ গরম। প্রকৃতি যেন একটু রুক্ষ। বড় গাছ কম। ইতিউতি ঝোপঝাড়। ছোট ছোট ফুল ফুটে আছে সাদা, হলুদ। মাঝে মাঝে ধান জমি। হঠাৎ, আরে ওটা কি? রুক্ষ জমির উপর সটান সোজা দাঁড়িয়ে আছে এক পলাশ, একলা। সমস্ত শরীর দিয়ে তার বসন্তের রং চুঁইয়ে নামছে। মন ভরে গেল। ‘মহারাজ একী সাজে এলে… ‘। একা, একদম একাই চারপাশ আলো করে ফেলেছে।

গাড়ি ছুটে চলেছে হাইওয়ে ধরে। এক ধরণের হলুদ ফুলে ছেয়ে রয়েছে চারপাশ। গাড়ির চালক জানায়, এই ফুলগুলো ওদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। দশেরা একদিন আগে ওই ফুল দিয়ে পুরো তেলেঙ্গানা জুড়ে উৎসব পালিত হয়।

খুব মেঘ করেছে। আগের দিন সারারাত ধরে বৃষ্টি পড়েছে। চাল, তুলো প্রভৃতি এখানকার অর্থকরী ফসল। বৃষ্টিটা এই ফসলের জন্য খুবই প্রয়োজন। মাঝখানে একবার খাওয়ার জন্য নামতে হলো। গাড়ি থেকে নামতেই টুপ টাপ দুফোঁটা মাথার ওপর, শুদ্ধিকরণ আর কি! পেট পুজো করে আবার চলা শুরু। মাঝে একটা ব্যাঘ্র প্রকল্প পড়লো। জাতীয় সড়ক গুলো সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে । সারা ভারতেই প্রায় এই একই দৃশ্য। রাতের অন্ধকারে সভ্যতার উন্মত্ত গতি পিষে দিয়ে চলে যায় অমূল্য বন্যপ্রাণগুলোকে। শেয়াল শকুনেরাবন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনের গুনগান করে। আর আইনের পক্ষে কি চোখ বাঁধা অবস্থায়, দাঁড়িপাল্লা, বাটখারা নিয়ে জঙ্গলে যাওয়া সম্ভব? যাইহোক, এই রাস্তায় যেখানে সেখানে নাম নিষেধ। এই করোনা কালে জঙ্গল পথে মানুষের কম চলাচলের জন্য জীবজন্তুরা জঙ্গলের থেকে বাইরে চলে আসছে। তার ওপর আছে নকশালদের আনাগোনা। রাত নয়টার পর এই জঙ্গলপথের দুদিকেই গেট ফেলা হয়। এইপথে রাত্রিবেলায় চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ।

আরো কিছু পথ পার করে, রাস্তা দুভাগে ভাগ হলো। আমরা ডানদিকের পথ ধরলাম। খুবই প্রাচীন এক মন্দির দর্শন করতে যাচ্ছি। উমা মহেশ্বর মন্দির। গাড়ি পাকদন্ডি পথে উঠতে লাগলো। দুদিকে ঘন জঙ্গল। হটাৎ একটা শুকনো গাছ, পাতাবিহীন। তাতে  হলুদ-রঙ্গা ফুল, অনেকটা আমাদের শিমুলের মতো, আকারে একটু ছোট। জিজ্ঞাসা করে জানলাম, এটা হলুদ শিমুল।   

সামনের পাহাড়টাও মেঘে ঢাকা পড়েছে প্রায়। ফলে জঙ্গলের মধ্যেও অন্ধকারের ছায়া, বেশ গা ছমছমে ভাব। যাইহোক,  পৌঁছে গেছি মন্দিরে। এদিকে বৃষ্টি নেমেছে ভীষণ জোরে। মন্দির না বলে গুহা মন্দির বলা ভালো। গুহার মধ্যে গম্ভীর, ধ্যানমগ্ন উমামুর্তি, মহেশ্বর মূর্তি, পাথর কুঁদে বানানো। হৃদয়ের অন্তস্থল পর্যন্ত শান্ত করে দেয় সেই সমাহিত রূপ। এক শক্তিশালী ধ্বনাত্মক তরঙ্গ যেন প্রবেশ করছে শরীরের ভিতরে,  কালো পাথর থেকে ধ্যানরশ্মি বিচ্ছুরিত হয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে আত্মাকে। প্রাণ আনন্দে পূর্ণ হয়ে উঠছে। তাল তাল ভস্ম রাখা রয়েছে। ভস্ম দিয়ে কপালে ত্রিপুন্ড্র আঁকছে ভক্তরা। ওদের দেখাদেখি আমিও একটা ভস্মের ফোঁটা দিয়ে নিলাম কপালে।

এখন থেকে সোজা চলে যাবো শ্রীশৈলম পর্বতে। আবার জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একই পথে ফেরা। বৃষ্টিটা ধরেছে। শ্রীশৈলম পৌঁছতে প্রায় পাঁচটা বাজলো। পথে কৃষ্ণা নদীর ওপর শ্রীশৈলম বাঁধ ও তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র পেরিয়ে গেলাম। বেশ কয়েক বছর আগে এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে অনেক প্রানহানি  হয়েছিল এখানে।

পরেরদিন সকালবেলায় তৈরি হয়ে নিলাম। আজ দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ, মল্লিকার্জুনস্বামীর দর্শন করবো। মন্দির চত্বরে পা রাখতেই এক বিচিত্র অনুরণন অনুভূত হলো। প্রাচীন মন্দির, তার পাথরের খিলান, সেই কোন পুরাযুগের স্মৃতি আগলে মহাকালের স্পর্শ বাঁচিয়ে আজও বেঁচে আছে। চারদিকে চারটি গোপুরম দ্বারা বেষ্টিত একটি নয়, দু দুটি প্রাচীন মন্দির। একটি শ্রী মল্লিকার্জুনস্বামী মন্দির আর অপরটি হলো আঠারো সিদ্ধপীঠের অন্যতম, ভ্রামরাম্মা/ভ্রমরাম্বিকা মন্দির। এটি আবার শক্তিপীঠও বটে। সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলাম। শেষ সিঁড়ি পার করে পা রাখলাম মন্দিরের গর্ভগৃহের চৌকাঠে। অনন্ত কাল ধরে বয়ে চলা সময়ের স্রোতের মাঝে এই মুহূর্তটা যেন স্থির হয়ে আমারই অপেক্ষা করছিল। মল্লিকার্জুনস্বামী আমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে। মাত্র চার হাত দূরে। সেইলগ্নে শুভদৃষ্টি হলো। আমি চোখ সরাতে পারছি না। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মৃদুমৃদু হাসছেন। এক গাঢ় প্রশান্তি আমায় ঘিরে ধরছে ক্রমশঃ। পূজারী আরতি করছেন। প্রদীপের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে আছে গর্ভগৃহ। প্রার্থনা করলাম, সন্ধ্যায় আরতির সময় যেন উপস্থিত থাকতে পারি। তারপর ভ্রামরিআম্মা দর্শনের জন্য এগিয়ে গেলাম। মন্দিরটি মল্লিকার্জুনস্বামীর মন্দিরের থেকে একটু উপরেরদিকে অবস্থিত। আঠারো শক্তিপীঠের অন্যতম এই পীঠ খুবই জাগ্রত। আবার সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠে  পায়েপায়ে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম গর্ভগৃহের বিগ্রহের সামনে। মুখে হাসি,প্র শান্তিমাখা, যেন জানাই ছিল তাঁর।। প্রণাম জানালাম। ধন্যবাদ জানালাম দর্শন দেওয়ার জন্য। এই দেবী, মহালক্ষ্মীরূপে মল্লিকার্জুনস্বামীর ক্রিয়াশক্তি। এই মন্দিরে এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম। বৈদিক ঋষি, বিদুষী লোপামুদ্রা এই মন্দিরে দেবী রূপে পুজিতা। মন্দির থেকে বেরিয়ে শ্রীশৈলম পাহাড়ের  আরো কিছু প্রাচীন মন্দির দর্শন করলাম। এর মধ্যে সাক্ষী গনপতি, হাটকেশ্বর মহাদেব মন্দির উল্লেখযোগ্য।

আকাশে সারাদিনই ছেঁড়া ছেঁড়া বাদলমেঘের আনাগোনা। সাড়ে পাঁচটায় সন্ধ্যারতি শুরু হবে মন্দিরে। তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম মন্দিরের উদ্দেশ্যে। বিকেল গুটিয়ে সন্ধ্যা নামছে কৃষ্ণা উপত্যকায়। ঘড়িতে এখন ঠিক পাঁচটা বেজে পনেরো মিনিট। দাঁড়িয়ে আছি গর্ভগৃহের বন্ধ দরজার সামনে। ভিতরে গম্ভীরস্বরে মন্ত্র  উচ্চারণ, বাইরে শিবমালা সম্প্রদায়ের ‘ওম নমো শিবায়’ ধ্বনিতে মন্দির প্রাঙ্গন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। গোপুরমের মাথার সোনার  শীর্ষকলসগুলো সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে। ঘড়িতে ঠিক সাড়ে পাঁচটা। গর্ভগৃহের দরজা খুলে গেলো। এক ঐশ্বরিক অনুভূতি হচ্ছে। আনন্দ যেন ধরে রাখা যাচ্ছে না। আঃ, মাঝখানে আর একটা মাত্র পর্দার আবরণ। হাতজোড় করে উচ্চারণ করলাম, ‘ ওম নমঃ শিবায়’। সেই মন্ত্র নিজের কানে স্পষ্ট শুনতে পেলাম। ধীরে ধীরে নয়, প্রধান পুরোহিতের হাতের একটানে সরে গেলো সেই পর্দার আবরণ।  আমার সামনে আমার দেবতা, মুখোমুখি। কবি ঠাকুরের ভাষায়, ‘তিনি আর আমি মাঝে কেহ নাই, কোনো বাধা নাই ভুবনে’। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো। চারপাশের দেওয়ালগুলো মন্ত্র উচ্চারণ করতে লাগলো। ঘণ্টাধ্বনি, ডমরু ধ্বনিতে সারা পরিমণ্ডল যেন মুখর হয়ে উঠলো। অন্ধকার গর্ভগৃহে শত প্রদীপের আলোয় দেবাদিদেবের আরতি-মুহূর্ত মনের মধ্যে চিরস্থায়ী হয়ে রয়ে গেল। সেই গম্ভীর মন্ত্রনাদে, সারা দেবালয় যে কি আনন্দে মেতে উঠেছিলো তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আরতি শেষে পুরোহিত হাতে ফুল দিলেন। আবার মন্ত্রোচ্চারণ শুরু হলো। তিনি ফুলগুলো  আমাদের থেকে এক ডালায় করে সংগ্রহ করে  সেগুলো শিবলিঙ্গের চারপাশে ছড়িয়ে দিলেন। তারপর সেই ফুল গুলো আবার  পূজার শেষে আশীর্বাদরূপে আমাদের হাতে ফিরিয়ে দিলেন। আরতি শেষ হয়ে গেছে।। মন্দির আজকের মতো বন্ধ হয়ে যাবে।

বাইরে বেরিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম। মেঘেদের গর্জনের মাঝে শোনা যাচ্ছে মহাকালের মন্ত্র। যেন মানুষের পূজার শেষে প্রকৃতিদেবী পূজায় বসলেন। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ঘনঘন। আকাশকে  চিরে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিচ্ছে। ‘হর হর মহাদেব’  বিড়বিড় করতে করতে পথে নামলাম। পিছনের থেকে কে যেন বলে দিলেন, এটা অর্জুনের রথের চাকার শব্দ। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। মুখে তাঁর প্রশ্রয়ের হাসি। বললেন, অর্জুনের রথ যখন আকাশ পথে তীব্র বেগে ছুটে যায় তখন ওই গুরুগুরু শব্দ উৎপন্ন হয়। আর ঘর্ষণের ফলে যে আগুনের স্ফুলিঙ্গ দেখা যায়, সেটাই বজ্র হয়ে পৃথিবীতে নেমে আসে। তাই, ‘হর হর মহাদেব’ নয়, এই সময় অর্জুন, অর্জুন বলতে হয়। চাকার গুরুগুরু ধ্বনি শুনতে শুনতে ঘরে ফিরে এলাম। সেই ধ্বনি ক্রমশঃ বাড়তে বাড়তে শ্রীশৈলম পর্বত পার করে কৃষ্ণানদীর নদীখাত ধরে দূর থেকে আরও দূরে ছড়িয়ে যেতে লাগলো। সমস্ত উপত্যকা যখন অর্জুন অর্জুন ‘ জপ করতে লাগলো, আমি তখনও ‘হর হর মহাদেব’ বলতে লাগলাম, দুলে দুলে। একদিনে কি আর জন্মগত অভ্যাস যায়!

**********************************

শান্ত Oeschinensee লেক

ঞ্জিষ্ঠা মুখার্জী

Post Doctoral Fellow, Switzerland

ছবির মতো সুন্দর Kanderstag শহর

একদা, ছিল এক অলস মেয়ে ! ঘর থেকে বেরোতে হলেই তার হাত এবং পা সহ গোটা শরীর এমন ভারি হত যে God Particle ও লজ্জা পেয়ে বলত ‘ ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’ ! কিন্তু সেই কন্যাকে জীবন এবং জীবিকার স্বার্থে ছাড়তে হলো প্রাণের শহর, দূরে যেতে হলো নিজের মানুষগুলোর থেকে! শেষে সে এসে পড়ল Alps এর পাদদেশে স্বপ্নের দেশ সুইজারল্যান্ড-এ।

হলিউড, বলিউড, বা ইদানিং টলিউডের সিনেমার দৌলতে যে সুইজারল্যান্ডকে চেনা যায়, বাস্তবে তার থেকে অনেক বেশিই বুনো কিন্তু এই দেশটা ! সবার মত আমিও রূপকথার মত সুন্দর  এই দেশে এসে প্রথমেই সেই জায়গাগুলোতে গেছি যেখানে কাজলকে স্ক্রীনে হাঁটতে দেখেছিলাম, যেখানে শাহরুখকে নাচতে দেখেছিলাম, কিংবা যেখানে জেমস বন্ড পাহাড় থেকে ঝাঁপ মেরে ছিল। কিন্তু এখানে আসার মাস খানেকের মধ্যেই যাকে বলে native Swiss সহকর্মীদের পাল্লায় পড়ে পৌঁছে গেলাম দেশ টার বুনো প্রান্তরে, পাহাড়ের ঠিক কোলে ! তারপর সেই যে অদ্ভুত এক প্রেম জন্ম নিলো এই পাহাড় গুলোর সঙ্গে, তাদের নিস্তব্ধতার মাঝে, পাহাড়ের কোলে ফুটে থাকা ফুলগুলোর সঙ্গে, সেই প্রেমকে ছয় মাসের মধ্যে মাত্র দশ বারোটা হাইক দিয়ে জাস্টিফাই করা হয়তো সম্ভব না l

একটা  কথা শুরুতেই বলে নি, আমার এই গাছপাথর হীন বয়সে, আমি হিমালয় দেখে উঠতে পারিনি । তাই, উত্তেজনা আর কাঠিন্যের নিরিখে দুধভাত এই হাইক গুলো করেই আমি উত্তেজিত হয়ে পড়ি, আর গল্প লিখতে বসে পড়ি ।

আজ যে জায়গাটার গল্প লিখতে বসেছি তার নাম Oeschinensee। কর্মসূত্রে আমি থাকি Basel নামে একটা ছোট্ট আটপৌরে শহরে। এই শহরটা সুইজারল্যান্ড এর উত্তর-পশ্চিম কোণে রয়েছে। এখান থেকে তাই আমি Alps দেখতে পাই না । Alps দেখতে গেলে আমায় যেতে হবে দেশটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। তা Basel থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ঘন্টাখানেক ট্রেনে গেলে পরে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী Bern। সেখান থেকে ট্রেনে আরো এক ঘন্টা গেলে পরে Kandersteg নামে একটা শহর। বলতে পারেন, Bern ঢোকা মাত্রই  আপনি Alps এর কাছাকাছি আসতে শুরু করেছেন । Kandersteg শহরটা  ঐ Bernese Alps এর উত্তর দিকে অবস্থিত। এই সেই শহর যেখান থেকে শুরু হবে আমাদের আজকের গল্প ।

আমার জীবনের প্রথম হাইক্। সঙ্গী আমার ৬ জন সুইস- সহকর্মী । এখানে বলা ভালো যে পাহাড় চরা তো দূরের কথা, সাধারণ কোনো চড়াই-উৎরাই করতে হলেই আমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া দশা হয়! Kanderstag পৌঁছনোর একাধিক পথ রয়েছে । হাইক শুরুতেই জানতে পারলাম সাধারণত যে পথটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, শেষ কিছুদিন ক্রমাগত পাথর গড়িয়ে পড়ার কারণে সাময়িক ভাবে সেটি বন্ধ রয়েছে। অগত্যা অন্য একটি পথ ধরে আমাদের এগোতে হবে ।  সে রাস্তা যেমন চরাই, তেমনই পিচ্ছিল ।

ভিন্নরূপে লেকের নীল জলরাশি

শুরুতে উত্তেজনায় ডগমগ, কিন্তু চলা শুরু করার কুড়ি মিনিট পর থেকেই মনে মনে সহকর্মীদের শাপশাপান্ত করতে শুরু করলাম । তাদের চলার গতি দেখে মনে হচ্ছিল যেন পাড়ার মাঠে ছুটে বেড়াচ্ছে । কিন্তু, আমার অবস্থা একদমই উল্টো। কিছুটা উঠি তো কিছুক্ষণ থামি। বোতল বার করে গলা ভিজিয়ে নি। আবার সামনের ঢাল দেখে কিছুটা এগিয়েই থমকে যাই।

আমাদের পথের দূরত্ব খুব বেশি না । ৪ থেকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যেই হবে । আরও কিছুদূর এগিয়ে আসতেই বুঝতে পারলাম আমার সঙ্গীরা আমার থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে পরেছে। তা যাক ! পথরেখা স্পষ্ট। তাই দেখে এগিয়ে চললেই হবে। পথ যদিও পাথুরে, কিন্তু দুচোখ চেয়ে দেখলেই উপভোগ করা যায় আশেপাশের সবুজের দৃশ্য। হালকা হাওয়া এসে ভাসিয়ে দিয়ে যায় শরীর – মন, উড়িয়ে দিয়ে যায় চুল গুলো । চারিদিক এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা । এক প্রশান্ত পরিবেশ । শব্দ বলতে শুধুই পা ফেলার খস খস আর খট খট আওয়াজ, আর নিশ্বাসের শব্দ। এভাবেই এগিয়ে চললাম। ধীরে ধীরে যত এগোচ্ছি, সেই কষ্ট আর ক্লান্তিকে যেন একটু একটু করে উপভোগ করতে শুরু করলাম । ধীরে ধীরে যেন পাহাড়ি পথে আমার পায়ে খড়ি হচ্ছে ।

এক সময় এসে পৌঁছলাম পান্না সবুজ রঙের একটি লেকের ধারে। কিছুটা দূরে থাকতেই অবশ্য দেখতে পাচ্ছিলাম তাকে। এই হলো আমাদের আজকের গন্তব্য। বাকিদের ঘন্টা দেড়েক লাগলেও, আমার লেগে গেলো আড়াই ঘন্টা ! পথে পেরিয়ে এলাম কিছু অজানা ঝরনা, বুনো স্ট্রবেরি লতা, সাদা হলুদ ডেইজি ফুল এর ঝোপ, আরো কত কী !

কিন্তু এই পৌঁছানোর পরেই শুরু হলো আমার অবাক হবার পালা ! নীল আকাশে তখন খেলে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘ। চারপাশে পাহাড়ের ঘেরাটোপে চুপ করে বসে রয়েছে একরাশ পান্না সবুজ জলরাশি, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা ওই পাঁচ হাজার ফিট মত হবে । এই লেক টিরই নাম Oeschinensee lake। বছরের ৫ মাস লেকের জল পুরোপুরি বরফ হয়ে থাকে। সদ্য বরফ গলা জলে তাই তীব্র শীতের কামড়। সাঁতার কাটার জন্য জলে নামার ১০ মিনিটের মধ্যেই মনে হল পা দুটো আর দেহের সাথে লেগে নেই, খসে পড়ে গেছে। তাই সঙ্গীদের সহায়তায় তাড়াতাড়িই জল থেকে উঠে আসতে হল। ইতিমধ্যেই আমার সম্পর্কে তাদের যে ধারণা জন্মে গেছে, সে আর নাইবা বললাম ! তা যাই হোক, জল থেকে বেরিয়ে সঙ্গে করে আনা খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম লেকের পাশে যে ঝরনাটা রয়েছে, তার উৎস সন্ধানে ।

ঝরনার উৎস সেদিন পাইনি, কিন্তু এক অদ্ভূত বিশালতার অনুভূতি পেয়েছিলাম! লেক টাকে ঘিরে থাকা সারি সারি পাহাড় গুলোর কোনও একটার মাথায় উঠে যখন লেক টাকে দেখছি, তখন চোখে আসছে আরো দূরের অনেক অনেক পাহাড়, মেঘ গুলো এসে বসেছে পাশে । তখন নিজেকে তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতর, ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর মনে হচ্ছিল ! দুঃখ হচ্ছিল না, কিন্তু তবুও গাল বেয়ে একটা উষ্ণ স্রোত নেমে আসছিল, কেন কে জানে! বেশ কিছু রকফল জোন পাশেই থাকায় ওখানে ক্যাম্প করা যাবে না। আমরা তৈরি হয়েও এসেছিলাম, এমন টাও না । কিন্তু, একদমই ইচ্ছে করছিল না এই রূপকথার রাজ্য থেকে নেমে আসতে।  ইস! যদি একটা রাত এমন একটা পরিবেশে কাটানো যেত! একটা সূর্যাস্ত, কিংবা একটা সূর্যদয় দুচোখ মেলে দেখা যেত ! এবারের মত হলো না ।

যাই হোক, এই বিশালত্বের নেশায় বিভোর হয়ে আবার নেমে আসলাম Kanderstaag । ওখান থেকে ট্রেনে বার্ন হয় ফিরলাম বর্তমান আটপৌরে শহরটায় যেখানে আমার বাসা। আসার পথে একটা কথাও মুখ দিয়ে বেরোয়নি। আমার এক পাহাড় প্রেমিক বন্ধু বলে পাহাড় চড়তে যাওয়াকে অনেকেই নেশা ভাবলেও, এটা আসলে নেশা নয়। ‘নেশা’ শব্দটির সাথে জড়িয়ে রয়েছে লঘু একটা ভাবনা। আসলে পাহাড় এমন এক প্রেমিক (বা প্রেমিকা) যাকে ছোঁয়া যায়না, যাকে  কাছে পাওয়া যায়না, যে কোনোদিন শুধু একজনের ব্যাক্তিগত সম্পত্তি নয়। তার কাছে কিছু পাওয়ার চাহিদা নিয়ে যাওয়া যায়না। তাই সে ভিন্ন, তাই সে সবচেয়ে আলাদা। এত গভীর দর্শন বুঝিনা, তবে ছ-মাস সুইজারল্যান্ড- এ থাকতে থাকতে বুঝছি যে পাহাড় হল নিজেকে খুঁজে পাওয়ার জায়গা! পাহাড়, জঙ্গল, নদীর সংস্পর্শে যখন আসা যায় তখন মনে হয় সব ঠিক আছে, সব ঠিক হয়ে যাবে, কিছু আটকাবে না, কিছু আটকায় না পৃথিবীতে!

**********************************

Tales from Wild: Birds on the Phoktey Dara Trail (Part-I)

Soumyo Chatterjee

Research Associate, School of Physical Sciences, Indian Association for the Cultivation of Science, Kolkata.

A Oriental Turtle Dove

A pristine trail through evergreen forests dotted with quaint hamlets and dressed with the panoramic beauty of Nepal/Sikkim Himalayan peaks is what defines the Phoktey Dara trek in West Sikkim. Apart from the scenic encounters with snow-capped mountains, lush meadows, and sleek streams, this trek additionally provides a one of a kind opportunity to treat ourselves with a vibrant collection of bird species all along the trail. This series of ‘tales from wild’ will present a brief overview of the bird species that we encountered during our Phoktey Dara trek in the last spring.

Okhrey was soaking in the last rays of the Sun for the day when we reached our homestay after a daylong journey from Siliguri and immediately, the “her-her-oo-oo” call of an oriental turtle dove or rufous turtle dove (Ram Ghughu in Bengali) caught my attention. My eyes followed the guidance of my ears and found the bird sitting on a high perch of a rhododendron tree just behind the homestay. The black and white striped patch on the side of its neck along with characteristic scaly patterned wing-feathers was shining brightly in the afternoon sunlight as the bird was busy in preening itself. Oriental turtle doves are medium sized dove species that are distributed in the Indian subcontinent, parts of West Asia, Central Asia and Southeast Asia. They are moderately forest dependent and mostly consume seeds. grains, cereals, green shoots and herbs as their primary food. There are six subspecies of oriental turtle doves amongst which a couple of species are migratory whereas the rest of the four are resident in their ranges. They make nests in the trees and post breeding, the juvenile doves disperse and establish in new locations within the range.

A Rufous Sibia

Just after my encounter with the oriental turtle dove, I met, rufous sibia, another very common resident bird of lower to middle Himalayas of India, Nepal and Bhutan. Called as ‘Sambriak-pho’ in local Lepcha language, this bird species belongs to the family of  laughingthrushes but has a distinct appearance with its rufous-dominated colouration at the back, parts of wings and tail along with a black head. Rufous sibia generally forages around rhododendron and silk-cotton tree flowers in search of nectar, berries and insects which the bird species consumes as its primary food. Beside its characteristic rufous coloration, rufous sibia can also be identified with its melodious songs and on that day, amidst the blooming rhododendron trees it was a song to remember.

Our first night of the trek passed with the warmth of old memories, brief planning for the next few days and last but not the least a tight sleep to refresh ourselves. On the next day morning I could only manage a brief birding session before we set out for Hilley but within that short period of time Okhrey did not disappoint me. I first met a group of chestnut-crowned laughingthrush, typically known as ‘Badami-chandi Penga‘ in Bengali or ‘Tarphom-pho‘ in local Lepcha language, foraging close to the ground in the undergrowth nearby. As the name suggest, they belong to the family of laughingthrushs and can be characterized with beautiful patterns on their plumage, black neck spots, golden wings and a distinct chestnut-coloured crown on the head. They actually have a very vast habitat range from the Himalayas of northern India to the east over Nepal, Bhutan, and northeast towards Myanmar and a common sighting along the Phoktey dara trek route up to Kalijhar campsite.

A Chestnut-Crowned Laughingthrush

As the group of laughingthrushs was foraging the rhododendron scrubs in the search of insects, berries, and seeds, their squeaky whistle-like calls and rattling kept the entire forest noisy enough to suppress the call of other birds. When the flock suddenly decided to leave the spot and fly away silence was restored and then my ears picked up a faint high-pitched buzzy call. Immediately thereafter a fire-tailed sunbird pair peeped out from the green rhododendron leaves and no wonder it was a treat to the eyes. Fire-tailed sunbirds are typically found in the northern parts of the Indian subcontinent, primarily in conifer forests at altitudes up to 4,000 meters in the Himalayas, but in harsh winter season they come down to the valleys. Like many other sunbird species, fire-tailed sunbirds are also small, brightly colored birds but the distinctive bright red tail in the males is what stands out in their presence. The females, on the other hand, are yellow-green with a grayish head and have a rufous tinge to their tail. Their meal mainly contains energy-rich nectar, small fruits, seeds, pollen etc and therefore, they are often found near rhododendron trees in blooming season.

To be continued…

Resources:

1. Collins Field Guide, “Birds of India, Pakistan, Nepal, Bhutan, Bangladesh and Sri Lanka” (2015).

2. Salim Ali, “Birds of Sikkim” (1896).

3. Pranabesh Sanyal & Biswajit Roychowdhury, “Paschimbanglar Pakhi” (1994). 

4. Salim Ali and Ripley Dillon, “Handbook of the Birds of India and Pakistan: Vol 4” (1987).

Acknowledgement:

The author acknowledges the support of Mr. Sangdup Lepcha for the local bird-names.

Photo Courtesy:

Soumyo Chatterjee (Author)

**********************************

টুক করে শিলং

সপ্তর্ষি চৌধুরী

Traveler, Kolkata

পাহাড়ি ঝর্ণা

বছরে টুকটাক ট্যুর করেই থাকি, কিন্তু গত নভেম্বরব সিকিমের পর অনেক দিন কোথাও যাওয়া হয়নি। মনটা হাঁসফাঁস করছিল, তাই কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম কোথাও একটা যেতেই হবে। সময় ও টাকা দুটোই সীমিত, অতএব প্রথমেই মাথায় এলো উত্তরবঙ্গের কথা। কিন্তু উত্তরবঙ্গের প্রায় সব জায়গাই ঘোরা, একটু অন্য স্বাদের ট্রিপ করতে মন চাইছিল। ঠিক করলুম শিলং ঘুরে আসবো। সময় কম, তাই ভরসা একমাত্র ফ্লাইট। নেট সার্চ করে দেখলাম যাওয়া আসা মিলিয়ে মোট হাজার চারেক খরচা। ভাবলাম ঠিকই আছে। তার উপরে ইন্টারনেটে অনেক কুপন পাওয়া যায়, তাতে অনেক ডিসকাউন্টও মেলে। দেরি না করে ফ্লাইট বুক করে ফেললাম।

এই ঝর্ণা থেকেই জল খাওয়া যায়

এবার আসি প্ল্যানিং-এ। আমাদের ফ্লাইট ছিল ২৬ জুলাই ৯:৫০ -এ। গুয়াহাটি পৌঁছালাম ১১ টা নাগাদ।এ কটা গাড়ি বুক করেছিলাম, যে গোটা ট্রিপ আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী আমাদের ঘোরাবে।

মলিনং গ্রামের আস্তানা

আমরা প্রথম দিন, শিলং হয়ে মলিংনং (১৮৮ কিমি) গেলাম। যেটা কিনা এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার গ্রামের তকমা পেয়েছে। সত্যি অত্যন্ত পরিষ্কার একটি গ্রাম। সেখানে আমাদের হোমস্টেতে এক রাত কাটিয়ে পরদিন পায়ে হেঁটে গ্রামটা ঘুরে দেখলাম। ছবির মত সুন্দর গ্রাম। লোকজন কম। প্রায় ২ কিমি দূরে একটা সিঙ্গেল রুট ব্রিজ রয়েছে, হেঁটে বা গাড়িতে করে যাওয়া যায়। আর সেখান আছে বাম্বু ভিউ পয়েন্ট। ভিউ পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশ, আর সঙ্গে কয়েকটা সুন্দর ঝর্ণা দেখা যায়।

রেনবো ওয়াটার ফলস

এরপর ব্রেকফাস্ট পর্ব মিটিয়ে আমরা চলে গেলাম ডাউকি নদীর (৩৪ কিমি) উদ্দেশ্যে। তবে বর্ষাকাল হওয়ার জন্য, একদম স্বচ্ছ জল আমরা দেখতে পাইনি। ওখান থেকে ১০০০-১২০০ টাকায় নৌকা পাওয়া যায়, সেটি একটি আইল্যান্ড অবধি যায়। আইল্যান্ডে নামলে নদীতে স্নানও করা যায়। সে এক সুন্দর অভিজ্ঞতা। কাছেই বাংলাদেশ বর্ডার। বর্ডার দেখে বেরিয়ে পড়লাম চেরাপুঞ্জির জন্য।

যেতে যেতে সুন্দর রাস্তা, পাহাড়, ঝর্ণা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। চেরাপুঞ্জি ঢোকার রাস্তাটা পুরোটাই মেঘের মধ্যে দিয়ে। রাতটা একটা গেস্ট হাউসে কাটিয়ে পরের দিন একটু চেরাপুঞ্জি শহরটা ঘুরে দেখলাম।

রেনবো ওয়াটার ফলস যাওয়ার রাস্তা

তারপর বেরোলাম ডবল ডেকার রুট ব্রিজ দেখতে। সকাল ৯ টায় রওনা দিলাম, সঙ্গে নিলাম একজন গাইড। প্রায় সাড়ে তিন হাজার সিঁড়ি ভেঙে ডবল ডেকার ব্রিজে পৌঁছাতে বেজে গেল ১১:৩০।

পৌঁছে ঝর্ণায় স্নান করতেই শরীর-মন দুটোই চাঙ্গা। গাইড বলল আরও তিন কিলোমিটার দূরের রেইনবো ফলসের কথা। অনেক কষ্টের করে, অনেক ঝুলন্ত ব্রিজ, জঙ্গল, ঝর্ণা পার হয়ে দেখতে পেলাম অপূর্ব এক দৃশ্য।  রেইনবো ফলস সত্যিই অপরূপ। গাইড বললো দুপুর ৩-৫ টার মধ্যে সেখানে রামধনু দেখা যায়। আমাদের হাতে সময় কম থাকায় সেটা আর দেখা হল না।

মলিনং গ্রামের সকাল

ফিরে আসতে প্রায় সন্ধে ৬ টা বেজে গেল। একদিনে প্রায় ১১ কিমি খাড়া পথে ট্রেক, আর প্রায় ৭০০০ সিঁড়ি ভাঙার পর, আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। সময়ের অভাবে সেভেন সিস্টার ফলসও দেখা হল না।

ড্রাইভার আমাদের রাত্রি ১০ টায় শিলং পৌঁছে দিল। সেখানে একটা হোটেলে রাত কাটিয়ে পরদিন বেরিয়ে গেলাম এয়ারপোর্টের জন্য। ফেরার পথে সময় পেলে আপনারা বড়াপানি বা উমিয়াম লেক দেখে নিতে পারেন।

ডবল ডেকার রুট ব্রিজ

কয়েকটি প্রয়োজনীয় তথ্যঃ

1) মেঘালয়ে খাবারের দাম খুবই বেশি। কিছু শুকনো খাবার নিয়ে গেলে ভাল।


2) ডবল ডেকার রুট ব্রিজ ও রেইনবো ফলস খুবই কঠিন ট্রেক। একদিনে করতে গেলে শরীরের উপর চাপ হতে পারে। এই ট্রেকে গেলে হাতে সময় থাকলে ডবল ডেকার ব্রিজের কাছে হোমস্টে তে থেকে পরের দিন রেইনবো ফলস করতে পারেন। তাতে সুবিধা।

3) মলিংনং এর হোমস্টের নাম
Nangkiew Khasi House(Vaibhav)- 8779196819/9969679498 (whatsapp)
Airbnb দিয়ে বুক করা যায়। 800-900 প্রতিদিন।

খাবার পাওয়া যায় না, খেতে হলে অনেক রেস্টুরেন্ট আছে। রাত্রি ৯ টা অবধি খাবার পাওয়া যায়।

4) চেরাপুঞ্জির গেস্ট হাউস
D-Cloud Guest House(Yai) – 0764283434
800-900 প্রতিদিন

5)ড্রাইভার – 9678075751 (Jeetu)


6)ডবল ডেকার ব্রিজের হোমস্টে
Arnes Wooden hut-+918014780255

**********************************