Table of Content
- সম্পাদকের কলমে : শ্রীধর ব্যানার্জী
- একান্ত আলাপচারিতায় পিয়ালী বসাক : সাক্ষাৎকার গ্রহণে: অভীক ঘোষ ও সৌরভ দত্ত এবং অনুলিখনে: অভীক ঘোষ
- Men from Mountain : Ashis Ghatak
- মেঘেরমাঝে, পাখিরদেশে : নন্দিতা ভট্টাচার্য
- A quest for spirituality in the Spiti valley : Deepshikha Ghosh
- বসুধারা তাল : লোপামুদ্রা বর্মন
- Field experience in the Sub Himalayas and Lesser Himalayas : Rumela Bhowmick
সম্পাদকের কলমে
শ্রীধর ব্যানার্জী
শুধু সারা বছর কেন, পাহাড়প্রেমীদের কাছে সারা জীবনটাই পাহাড়ের। তবুও, Bohemian Travelouge -এ ডিসেম্বর মাস মানে পাহাড়ের মাস। সেইমত পাহাড়ের রকমারী গল্পে সেজে উঠেছে এই মাসের ‘বিশেষ পাহাড় সংখ্যা’।
বোহেমিয়ান পরিবারের একান্ত আপন জন লোপামুদ্রা বর্মণ এবার শোনাবেন বসুধারা তাল অভিযানের গল্প। ধৌলীগঙ্গার উৎস এই বসুধারা তালের উপস্থিতি ভ্রমণ সাহিত্যে বিরল। সাবলীল ছন্দে লেখাটি সুধী পাঠকের ভালো লাগবে।
একজন ভূতত্ত্ববিদের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে হিমালয়ের খুঁটিনাটি চিনিয়ে দেবেন রুমেলা ভৌমিক। লেখায় ও ছবিতে হিমালয়ের পাখপাখালির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন নন্দিতা ভট্টাচার্য। দু’টি লেখাই বোহেমিয়ান ট্রাভেলগের এই বিশেষ পাহাড় সংখ্যাটিকে ঋদ্ধ করেছে।
সিকিম, গাড়োয়াল, হিমাচল ও কাশ্মীর হিমালয়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের জন্য গল্প কুড়িয়ে এনেছেন আশিস ঘটক। মানুষের গল্প। পাহাড়ের মানুষের ভিন্ন স্বাদের গল্প।
প্রকৃতি-ভূতত্ব-বন্যপ্রাণ-পাহাড়ের মানুষ; এই চারটি উপাচার ছাড়াও আর একটি উপাচার বাদ রেখে পাহাড়ের উদ্দেশে রচিত নৈবেদ্য পূর্ণ হয় না। সেই উপাচারটি হল হিমালয়ের নিবিড় আধ্যাত্মিকতা। দীপশিখা ঘোষ এই পঞ্চম উপাচারটির দায়িত্ব নিয়েছেন।
সবশেষে আসি ‘বিশেষ পাহাড় সংখ্যার’ সবচেয়ে বিশিষ্ট লেখাটির কথায়। অক্সিজেন সাপোর্ট ছাড়া প্রথম সিভিলিয়ান হিসাবে সম্প্রতি ধৌলাগিরি শৃঙ্গ জয় করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন এই বাংলারই এক সাহসিনী – পিয়ালী বসাক। শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি We the Bohemians টিমকে তাঁর একটি পূর্ণাঙ্গ ইন্টারভিউ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। Bohemian Travelouge-এ শেষ পাতে থাকছে সম্পূর্ণ ইন্টারভিউটির অনুলিখন।
আসুন, দেরি না করে আমরা ডুব দিই পাহাড়ের এই আশ্চর্য ভুবনে।
**********************************
একান্ত আলাপচারিতায় পিয়ালী বসাক
প্রশ্ন : পাহাড়ের প্রতি ভালোবাসা কবে থেকে জন্মালো? কবে থেকে শুরু করলেন পাহাড়ে যাওয়া?
পিয়ালী : আমার যখন পাঁচ বছর বয়স, তখন তেনজিং নোরগে শেরপা আর এডমন্ড হিলারির এভারেস্ট অভিযানের গল্প পড়েছিলাম কিশলয় বইয়ে। এই লেখাটিই মনের ভেতরে একটা গভীর দাগ কেটে দেয়। হয়ত তখনই আমি ডিসিশন নিয়ে ফেলি, এটাই আমার জীবন হবে! ধীরে ধীরে এতটাই ডিটারমাইন্ড হয়ে গিয়েছিলাম যে ঠিক করেছিলাম, কেউ যদি পাশে না দাঁড়ায় – এমনকী মা-বাবাও না, তবুও আমি এটাই করব। বাড়িতে জানাই মনের ইচ্ছের কথা। তেনজিং নোরগের সাথেই এভারেস্ট অভিযানে যাবো – মনে মনে এরকম ইচ্ছে প্রকাশও করে ফেলি। কিন্তু, আসলে তো আমার জন্মের আগেই তিনি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন – তখন সেসব কথা জানতাম না, বুঝতামও না।
আমি বাবা মায়ের সাথে সেই বছরই নেপালে যাই। কিন্তু, তাঁর (তেনজিং-এর) বাড়ি কিংবা পরিবারকে খুঁজে পাইনি। সেই বারই পোখরা যাই। সেখান থেকে জীবনে প্রথম ৮০০০ মিটারের শৃঙ্গ দেখি। তার ঠিক পরের বছর, অর্থাৎ যখন আমার বয়স ছয়, তখন থেকেই ট্রেকিংয়ে যাওয়া শুরু করলাম। হিমালয়ের কোলে বিভিন্ন তীর্থ ক্ষেত্রে, বা দুর্গম অঞ্চলগুলিতে – উত্তরাখণ্ডের কেদার, গঙ্গোত্রী, গোমুখ, কাশ্মীরে অমরনাথ, জম্মুতে বৈষ্ণদেবী, এসব অঞ্চলে।
রোটাং পাস যখন যাই, বরফ থাকার জন্য আমাদের গাড়ি অনেকটা আগেই আমাদের নামিয়ে দিয়েছিল। সেই প্রথম বরফে হাঁটা। একদম সাধারণ কেডস-সু পরেই গিয়েছিলাম। স্টেপ কেটে কেটে হাঁটছিলাম – তখন জানতাম না এগুলোকে মাউন্টেনিয়ারিংয়ের ভাষায় স্টেপ কাটিং বলে। বরফের ঢাল বেয়ে বেয়ে এভাবেই রোহটাং পাস পৌঁছেছিলাম। এছাড়া অন্যান্য ট্রেক গুলোতে যখন যেতাম, আমি বরাবরই একটু দৌড়ে দৌড়ে মনের আনন্দে একা একা এগিয়ে চলতাম। টেকনিকাল শব্দগুলো – যেমন স্কাই রানিং বা ট্রেইল রানিং – স্বাভাবিক ভাবেই তখন জানতাম না। রাস্তার ধারে খাড়াই দেওয়াল দেখলে সেগুলোতে একা একাই উঠে পড়তাম। পরে জেনেছি, একেই রক ক্লাইম্বিং বলে। আর একটা জিনিস বলবো – পাইন cone কুড়িয়ে বেড়াতে খুব ভালো বাসতাম।
প্রশ্ন : টেকনিকাল জায়গাগুলো কী ভাবে শেখা শুরু করলেন?
পিয়ালী : আমি তখন লাল বাগান বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ছি – ক্লাস সেভেনে। একদিন একটা রক ক্লাইম্বিং কোর্সের নোটিশ এলো। আমার তো শুনেই মনে হলো যেন আকাশের চাঁদ হাত পেয়ে গেছি! ছোটবেলা থেকেই যা স্বপ্ন ছিল, ঠিক সেরকম একটা জিনিসের সুযোগ এসে গেছে। সেই শুরু হলো। তারপর পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার পাহাড় গুলিতে ছোট ছোট টেকনিকাল জিনিস গুলো শিখতে যেতাম। এর পর, ২০০৮-এ Himalayan Mountaineering Institute (HMI)-তে বেসিক কোর্স করি। HMI-এর নিয়ম, A-গ্রেড পেলে, তবেই পরের লেভেলের কোর্স করা যায়। HMI থেকে বেসিক কোর্স শেষ করে আমি অ্যাডভান্স করি। এরপর, ২০১৫-এ ইন্ডিয়ার যে Apex Body সেখান থেকে থেকে Alpine leadership training program, অর্থাৎ, এক্সপেডিশনের লিডার হতে গেলে যে কোর্স করতে হয়, সেটা করি |
প্রশ্ন : এক্সপেডিশনে যাওয়ার আগে নিশ্চয়ই বড়ো ট্রেক দিয়ে শুরু করেছেন। এরকম কোনও ট্রেকিং এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে যদি বলেন।
পিয়ালী : না, ছোট বেলার যে ট্রেক গুলোর কথা উল্লেখ করলাম, তাঁর বাইরে খুব বেশি ট্রেক আমি করিনি। অন্যান্য স্পোর্টসের তুলনায় পর্বতারোহণ তো বেশ খরচ সাপেক্ষ। তাই আমার মাথায় সবার আগে সব সময় এভারেস্ট থেকেছে। আমি ট্রেনিংয়ের সময় তো অনেক মানুষের সাথে মেশার সুযোগ পেয়েছি – তখন দেখেছি দক্ষ পর্বতারোহী অনেকেই আছেন। অথচ আর্থিক প্রতিকূলতার জন্য তাঁরা স্বপ্ন পূরণ করতে পারছেন না। আমরা যে কোনও কিছুতেই পর্বত কিংবা শিখরের উপমা টানি – যেমন ‘পাহাড় সমান সমস্যা’, কিংবা ‘কোনও কিছুর শিখরে পৌঁছতে চাই’ ইত্যাদি। আমিও মনে করতাম যে আমি যেখানে পর্বতারোহী হতে চাইছি, সেখানে যদি আমি পর্বত সমান বাধাটা নাই পেরিয়ে যেতে পারি – সেই সাহসই যদি আমার না থাকে – তাহলে সত্যি করে পর্বতের শিখরে আমি কী করে পৌঁছবো? সেই জন্যই হয়তো ট্রেকিং আমার সেভাবে করা হয়নি, আমি HMI থেকে কোর্স গুলো শেষ করেই অভিযানের দিকেই এগিয়ে যাই।
তবে, চন্দননগরের একটি স্কুলের সঙ্গে, মানসিক সমস্যা আছে এমন কিছু মানুষদের নিয়ে পায়ে হেঁটে একবার সান্দাকফু যাই। তাঁরা সকলেই আমার থেকে বয়সে অনেক বড়। কিন্তু, মন এবং বুদ্ধির দিক থেকে তারা ২ বছর বয়সী শিশুর সমান। ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজা, জামা কাপড় পরা, তাদের সব কিছুরই দায়িত্ব আমাদের নিতে হত। সেখানে গাইড হিসাবে আমি আর আমার বোন গিয়েছিলাম।
আর একটা মজার ঘটনা বলি- ২০০৬ সালে আমি একা একা সান্দাকফু চলে গিয়েছিলাম। একদমই কাউকে না জানিয়ে। শুধু একটা চিঠি লিখে বন্ধুদের হাতে দিয়ে চলে গিয়েছি। সেবার সিঙ্গালিলা পেরিয়ে ওপাশে নেপালের ইলাম ডিস্ট্রিক্টে পৌঁছে গিয়েছিলাম। এদিকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছি – এই ভেবে বন্ধুরাও সেই চিঠি বাড়িতে দেয়নি। যদি ওদের নিয়ে কোনও রকম টানা টানি হয় – সেই ভয়ে। ফলে, বাড়িতে কোনও ভাবেই কেউ কিছু জানতে পারেননি। ঘটনাটি – পুলিশ, এমনকী সংবাদপত্র পর্যন্ত গড়ায়! আমি তখন এক আর্মি ক্যাম্পে। আর্মির লোকজন আমাকে বোঝালেন – এভাবে বাড়িতে না জানিয়ে একা একা বেরিয়ে পরা মোটেই ঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি! যদি বাড়িতে বন্ধুরা চিঠি পৌঁছে না দেয় – তাহলে? আর সত্যি সত্যিই সেটাই হয়েছিল। তারপর সেই আর্মি ক্যাম্প থেকেই বাড়িতে যোগাযোগ করে এবং সব টা জানায়।
তখন ডিসেম্বর মাস – কিন্তু আমি মাত্র একটা জামা নিয়েই চলে গিয়েছি। কোনও সোয়াটের বা শীতের বিশেষ জামা কাপড়ও নিয়ে যাইনি। তারপর বোন আর বাবা দার্জিলিং আসেন। আমাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসে।
প্রশ্ন : আপনি তেনজিং নোরগের কথা বার বার বলছেন। এছাড়া অন্য কোনও মানুষের কথা বলতে পারবেন, যাদের কাছ থেকে আপনি শিখেছেন কিংবা অনুপ্রেরণা পেয়েছেন?
পিয়ালী : প্রথমেই আমার সেই রক ক্লাইম্বিং কোর্সের স্যার-ম্যাডামদের কথা বলবো। তাছাড়া অবশ্যই অপূর্ব চক্রবর্তী স্যার – যিনি সব সময় আমার পাশে থেকেছেন। HMI-এর স্যার ম্যাডাম দের কথা অবশ্যই উল্লেখ করবো। তারপর বলবো অমূল্য সেন স্যারের কথা।
এছাড়া স্প্যানিশ ক্লাইম্বার সেরজি মিঙ্গটে স্যারের কথা বলবো – যিনি নিজেও অক্সিজেন ছাড়া ৮০০০ মিটারের পিক ক্লাইম্ব করেন। কোভিড না এলে হয়ত আমরা ‘অক্সিমিটার’ বা ‘অক্সিজেন স্যাচুরেশন’, এসব শব্দ গুলোর সঙ্গে হয়তো এতটা পরিচিত হতাম না। উনি কিন্তু এসবের অনেক আগেই, আমার অক্সিজেন স্যাচুরেশন, এবং আরও যাবতীয় খুঁটিনাটি লক্ষ্য করে আমাকে অভয় দিয়েছিলেন যে আমি অক্সিজেন ছাড়া ৮০০০ মিটারের শৃঙ্গ জয় করতে পারব। আর অবশ্যই শেরপারা তো সব সময় আমার অনুপ্রেরণা। নাম করলে অনেকের নাম করতে হবে – তাই আলাদা করে কারও নাম বলছি না। আমি সব সময় তাঁদের মতোই হতে চেয়েছি।
প্রশ্ন : পর্বতারোহণ নিয়ে কোনও বইয়ের কথা বলবেন যেটি বা যেগুলি আপনাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে?
পিয়ালী : তেনজিং নোরগে স্যারের জীবনী পড়েছিলাম। এরপর বাচেন্দ্রি পাল ম্যাডামের জীবনীও পড়ি। মরিস হেযোর্গের নেতৃত্বে প্রথমবার অন্নপূর্ণা-১ সামিটের রোমাঞ্চকর গল্পটা পড়ি ২০১৮-তে, মানাসলু করার পর। বইটি মরিস হের্যোগের নিজেরই লেখা।
প্রশ্ন : পাহাড়ে কাটানো আপনার সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত কোনটি?
পিয়ালী : হিমালয় মানে তো সব সময়ই আনন্দ | তাই, সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত বেছে নেওয়া টাফ ! সব থেকে কষ্টের মুহূর্ত গুলোই কিন্তু আমার কাছে সব চেয়ে আনন্দের হয়ে গেছে | ধৌলাগিরির শিখরে পৌঁছনোর মুহূর্তের কথা উল্লেখ করবো | এটা ৩-৪ মাসের প্র্যাক্টিসের ব্যাপার, এমন তো না ! সারা জীবনের লড়াইয়ের পর আমি পৌঁছতে পেরেছিলাম সেখানে | এছাড়া ভাগীরথী-২ এক্সপেডিশনের সময় ক্লাউড বার্স্টের মধ্যে পড়তে হয় | বেঁচে ফিরতে পারবো আমরা কেউই আশা করিনি | সেখান থেকে নেমে আসতে পেরেছিলাম সবাই সুস্থ ভাবে, সেটাও উল্লেখ করতে চাইবো |
প্রশ্ন : ২০১৯ সালে এভারেস্ট শিখরের একেবারে কাছাকাছি পৌঁছেও শিখরে চড়া হয়নি – ঠিক কী ঘটেছিল?
পিয়ালী : ২০১৯-এ এভারেস্ট অভিযানে ৪০০ মিটার দূর থেকে আমাকে ফিরে আসতে হয়েছিল।| ঠিকমত পেমেন্ট করলেও এজেন্সীর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য পাইনি। কোনও অজ্ঞাত কারণে আমাকে বাধা দেওয়া হয়, আগে-পরে অনেক মিথ্যে কথাও বলা হয়। যদিও এটা ‘অফিসিয়ালি’ অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া অভিযান ছিল না। কিন্তু, ৮৪০০ মিটার পর্যন্ত আমি সিলিন্ডার ছাড়াই উঠি। শিখর হয়ত আমি ছুঁতে পারিনি -কিন্তু যে স্ট্যামিনা আমি দেখাতে পেরেছি সেটা শিখর ছুঁয়ে আসার থেকে কম কিছু না। এভারেস্টের সামিট ক্যাম্প, অর্থাৎ সাউথ কলে আমি সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ছাড়াই রাত কাটাই। ৮০০০ মিটারের উপরে – ডেথ জোনে – আমাকে খাবার ছাড়া, জল ছাড়া, অক্সিজেন ছাড়া সারা রাত কাটাতে হয়৷ তারপর নেমে আসতে হয়। তবুও কিন্তু আমি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলাম।
প্রশ্ন : এবার একটা টেকনিকাল প্রশ্ন করি | কীভাবে মাউন্টেন সিকনেসের মোকাবিলা করা যেতে পারে?
পিয়ালী : হাই অল্টিটুডে সিকনেস আসতেই পারে যে কোনও সময় | প্রপারলি acclimatized হয়ে, ধীরে ধীরে উপরে উঠতে হবে | প্রথম যে সিম্পটম গুলো দেখা দেয়, অর্থাৎ বমি বমি ভাব, খাওয়ার ইচ্ছে চলে যাওয়া, মাথা ধরে যাওয়া, এগুলো লক্ষ্য করলেই কিন্তু সংযত হয়ে যেতে হবে | এর কিন্তু কোনও ওষুধ নেই | একমাত্র ওষুধ নিচে নেমে আসা | কিন্তু সেটা না মেনে জোর করে যদি কেউ উপরে উঠতে চায়, তাহলে কিন্তু মৃত্যু অবধারিত | এছাড়া, প্রচুর পরিমানে জল খেয়ে যেতে হবে | একটু বিশ্রাম নিতে নিতে উঠতে হবে | বিশ্রাম নেওয়া মানে কিন্তু তাঁবুর ভেতরে বসে থাকা না | একটু হাঁটাহাটি করা | আর আমি বলবো, অক্সিমিটার সব সময় সাথে রাখতে |
প্রশ্ন : এই মুহূর্তে পৃথিবীর বড় সমস্যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং। তার প্রভাব কি হিমালয়ের হাই অল্টিটুডে প্রত্যক্ষভাবে দেখতে পাচ্ছেন?
পিয়ালী : হ্যাঁ | প্রভাব তো অবশ্যই পড়েছে | HMI-তে ২০১০-এ যখন ট্রেনিং করতে গেছিলাম, তখন রাথং গ্লেসিয়ার যেখানে ছিল, এখন সেখান থেকে অনেকটাই পিছিয়ে গেছে | একই জিনিস ঘটেছে গঙ্গোত্রী গ্লেসিয়ারের ক্ষেত্রেও, গোমুখও অনেকটাই পিছিয়ে গেছে | কাজেই গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাব যে অনেকটাই পড়ছে সেটা বলাই বাহুল্য | এছাড়া আরও একটা জিনিস বলবো | আমি এক্সপেডিশনের সময় এমন মানুষকেও দেখেছি যে পাথরের ফাঁকে প্লাষ্টিক কিংবা লজেন্সের কাগজ গুঁজে দিচ্ছে, জলের বোতল ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে | এগুলোতে আমাদের অনেক বেশি সচেতন হতে হবে|
প্রশ্ন : সম্প্রতি আপনি ধৌলাগিরির শিখর ছুঁয়ে এসেছেন। আপনিই প্রথম সিভিলিয়ান যিনি সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ছাড়া এই অসাধ্য সাধন করেছেন। আপনার এই অভিযানের কিছু গল্প জানতে চাইব।
পিয়ালী : কলকাতা থেকে ৩ তারিখ শুরু করে, আমরা ৫-ই সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডু পৌঁছাই। কিন্তু, ৭ তারিখ রাত থেকেই আমি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ি। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছিলাম না। সঙ্গে প্রচন্ড জ্বর। পরদিন দেখি খেতেও পারছি না ঠিক করে। মাথা ঘুরছে। সবমিলিয়ে এক সাংঘাতিক কান্ড! তার ওপরে আমি আবার ধৌলাগিরি এক্সপিডিশনের টিম-লিডার ছিলাম। তাই সমস্ত অফিসিয়াল কাজও আমাকেই সামলাতে হচ্ছিল।
যাইহোক, ১৩ তারিখ আমরা মারফা থেকে ধৌলাগিরি বেস ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলাম। সেদিন আমরা পৌঁছলাম ইয়াক খাড়কা। ওখানে আরও একদিন আমরা থাকি। পরের দিন আমরা যাই হিডেন ভ্যালি। এই হিডেন ভ্যালি পৌঁছনোর দিন পর্যন্ত কিন্তু আমি অসুস্থ। প্রায় কিছু না খেয়ে ট্রেক করছি। সেখান থেকে তাঁর পরের দিন আমরা পৌঁছাই বেস ক্যাম্পে। বেসক্যাম্পে পৌঁছনোর পর আমি সুস্থ হই। আমার এটাই হয় – আমি নিচে অসুস্থ থাকি, কিন্তু যে মুহূর্তে আমি বেশি উচ্চতায় পৌঁছাই, আমার আর কোনওরকম অসুস্থতা থাকে না। দিব্বি সুস্থ হয়ে যাই!
এর পর ধীরে ধীরে লোড ফেরি, রুট ওপেনিং – এইসব পর্ব শুরু করলাম। তারপর আরও একটু বিশ্রাম নিয়ে, শক্তি সঞ্চয় করে – ২১ তারিখ আমরা বেসক্যাম্প থেকে রওনা দিই। ধৌলাগিরির আর এক নাম ‘মাউন্টেন অফ স্টর্ম’। এখানে প্রায় সারাক্ষণ তুষার ঝড় চলতেই থাকে। যে কারণে শেষ তিনবছর এখানে একাধিক অভিযান হলেও – সফল হয়নি। আমরাও মাত্র ২-৩ দিনই হয়ত ভালো ওয়েদার পেয়েছি।
সামিট পুশের জন্য এখানে সাধারণত, তিনটি ক্যাম্প করতে হয়। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার জন্য আমাদের মাঝে আরও একটা এক্সট্রা ক্যাম্প করতে হিয়েছিল। ক্যাম্প-২ তে আমি দু’রাত-তিনদিন একদম একা ছিলাম। নিজে বরফ গলিয়ে জল তৈরী করে খেয়েছি।
খারাপ ওয়েদার থাকায় শেরপা স্যার এই সময় উপরে আসতে পারেননি। তারপর, সমস্ত ক্লাইম্বাররা চলে এলে আমরা ক্যাম্প-৩-এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পরদিন আবার তুষার ঝড়। কোমর সমান, বুক সমান – বরফ। সেদিন আর ক্যাম্প ৩-এ পৌঁছনো সম্ভব হলো না৷ তাই ২৮ তারিখ মাঝে একটা ইন্টারমিডিয়েট ক্যাম্প করে রাত কাটাতে হল। উচ্চতা ৭০০০ মিটারের কাছাকাছি। তারপর ২৯ তারিখ আমরা ক্যাম্প ৩-তে পৌঁছলাম, ৭২০০ মিটারে। রাত ৯-টায় আমরা সামিট পুশ শুরু করলাম। কিন্তু, আবার সেই তুষার ঝড়।
আমি যখন জানাই যে অক্সিজেন ছাড়াই আমি সামিট পুশ করব – তখন শেরপারা রাজি হলেন না। বহু কষ্টে তাঁরা রাজি হলেন এই শর্তে – যে এক মুহূর্তের জন্যও যদি আমার স্পিড বাকিদের থেকে কমে যায়, তখনই আমাকে অক্সিজেন লাগিয়ে দেওয়া হবে। সেদিনও ৭৫০০ মিটারের বেশি আর এগোনো সম্ভব হলো না। এতটাই তুষার ঝড়। রাত ১ টা নাগাদ আবার সামিট ক্যাম্পে ফেরত এলাম। পরদিন, অর্থাৎ ৩০ তারিখ আবার দ্বিতীয় attempt নিলাম, এবার একটু আগে – সন্ধ্যে ৬টায়। এবার আমরা সফল হলাম। ১-লা অক্টোবর আমরা পৌঁছে গেলাম ধৌলাগিরির শিখরে।
শেষ প্রশ্ন : আপনার নেক্সট প্ল্যান কী?
পিয়ালী : আমার যে বিশেষ ক্ষমতাটা রয়েছে – সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ছাড়া ৮০০০ মিটারে সারভাইভ করার – সেটাকে ব্যবহার করে দেশের নাম, ও রাজ্যের নাম আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যেতে চাই। আমি চাইব কিন্তু দেশের সরকার, রাজ্যের সরকার যেন এই লক্ষ্য পূরণের পথে আমার পাশে দাঁড়ান।
সাক্ষাৎকার গ্রহণে: অভীক ঘোষ ও সৌরভ দত্ত।
অনুলিখনে: অভীক ঘোষ
**********************************
Men from Mountains
Ashis Ghatak
Traveler, Kolkata
For city dwellers like me an escape to mountain is not just to stay in pristine nature, but also those mountain folks who make our visit worthwhile. Meeting these people is as beautiful as the nature itself because these people actually carry in their hearts the spirit of mountains. In my several visits in the mountains, I was lucky to have come across some people who stayed with me for some hours in my life but left an impression which the people with whom I rub shoulders with in my everyday life, cannot do.
While on a trek in Sikkim we met a man in charge of yaks. He was putting on a long leather hat and gumboot. His mongoloid features, strong and stout structure and an unwavering silence in him reminded me of that Red Indian soldier in Five Men Army. On the very first day of trek, one of his trusted yaks suddenly lost its cool and hit his thigh with a tremendous butt of its head. The horns of that animal went straight inside his thigh making a deep hole where from blood was coming out profusely. We were shit scared to say the least. One of us tried to put some bandage around. The person didn’t cringe in pain but just put some soil and herbs in the wound and took a painkiller from us. The next morning, when we were thinking how to move without him, he was the first one to get ready with an absolutely dead pan face, as if nothing had happened. For the rest of the trip, I kept looking at him not daring to speak because the resilience was beyond my cognition. The inert, chilled out attitude of the man who only smoked bidis and mumbled with his yaks intrigued me. From that day he was known as the Mountain Monk to us.
The next person I remember is Bilal bhai, an auto rickshaw driver whom I met at the boulevard of Dal Lake. He was one of those countless drivers whom we almost instinctively shoo away the moment they approach. But this man was different because he treated me with an affection of an elder brother. He resented my travel plans of taking flights instead of the cheaper options, made it a point of taking me to his choicest tourist spots, took me to pray inside a mosque, convinced me to take a cheaper accommodation to save money and offered to pay the bill each time I stopped him beside wayside stalls. I was to go for a trek from Srinagar and Bilal bhai gave me some sweets with his earnest good wish. He was perhaps the most worrying person during my trek as coming down from the mountains, I found him waiting for me to carry me back to the hotel. On the last day of my visit, he took me to a nearby saloon because, like my father, he objected to my beard and overgrown hair. He took it to his heart when I wanted to pay the barber. Coming back to my city, when I changed my phone, I lost his number. I felt the pangs of separation from one of the closest relatives of my life.
I remember two days that I passed with Mouni Baba in the high mountains of Tapovan in Gangotri National Park. For every traveller in that region, Mouni baba is a familiar man. After a pretty tiring day of trek, as I reached the ashram, he greeted me with a broad grin and a cup of warm tea. I found so many trekkers camping outside but they would come to his ashrama for a dinner which Mouni baba would cook with his own hands. In that altitude where one can see the soil of the earth may be for 4 to 5 months only, I could never imagine that a simple vegetable curry or khichdi or even a bowl of kheer could be so tasty. On the valley where the majestic Mount Tapovan and Bhagirathi sisters are bound to overwhelm you with nature’s awe-inspiring seclusion, the stone walled hut of Mouni Baba was the only refuge. The next day when I was coming back, he never wanted any money from me. After passing such a contented stay in that deserted mountain I couldn’t help feeling low to equate the magnanimity of the man with any paltry amount I could offer.
In Himachal Pradesh I met a Gujjar family who owned a good number of sheep. There on the upper reaches of the mountains, the grass is tastier and more nutritious for sheep than those of the lower hills. We had a hard day’s trek and finding a solitary hut, we felt curious to steal inside. There was a lady and her daughter. They were overjoyed to find uninvited guests and immediately prepared for us cups of herbal tea. We could stay for an hour or so only and when we were coming out of their hut, we found the eyes of the lady turning limpid. I wonder after how many days they have been waiting for anyone else to come inside their doorstep, staying in this god-forsaken land for months.
I always feel that had I not been to mountains, not only the blessings of nature, I could have missed moments with such humble people who made us feel the true essence of humanity.
**********************************
মেঘের মাঝে, পাখির দেশে
নন্দিতা ভট্টাচার্য
Traveler, Kolkata
এবছর অক্টোবরের যে সময়টায় উত্তরাখণ্ডের চারধাম যাত্রা সরকারী ভাবে বন্ধ করা হয়েছিল, ঠিক সেই সময়েই আমি ওখানে ছিলাম। আমিও ওই যাত্রায় সামিল হবো বলে পাড়ি দিয়েছিলাম গাড়োয়ালে। না, আমি কোনো তীর্থযাত্রী নই… আমার কোনো পুণ্য অর্জন করার বাসনা নেই। পাহাড়ের মাথায় প্রথম সূর্যের আলো পড়া, দুই পর্বতের মাঝখানে সরু ফিতের মত নীল রঙের খরস্রোতা নদীর বয়ে চলা, অথবা কখনো সারাদিন ঘোরার শেষবেলায় যখন সামনের গাছটায় হঠাৎ উড়ে এসে বসে একটা হুইস্কার্ড ইউহিনা…. ওই আমার ঈশ্বর দর্শন, আমার পুণ্যার্জন। চাতকের মত তৃষ্ণা নিয়ে তাই বারবার ছুটে যাওয়া পাহাড়ের কাছে।
লাগাতার অবিশ্রান্ত বৃষ্টির জন্য আমরা মুক্কুমঠ নামে একটা জায়গায় প্রায় তিনদিন আটকে পড়েছিলাম। তবে তা খানিকটা স্বেচ্ছায়, কারণ এই অতিমারীর কালে আমরা কেউই অযথা কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনি। অগত্যা বেড়াতে গিয়ে ঘরবন্দী!
মুক্কুমঠ জায়গাটা সম্বন্ধে একটু বলে রাখা ভালো। উত্তরাখণ্ডের পঞ্চকেদার বিখ্যাত গন্তব্য স্থানের অন্যতম। এই পঞ্চকেদারের তৃতীয় কেদার তুঙ্গনাথ এবং ভারতের উচ্চতম শিব মন্দির এখানে অবস্থিত। রুদ্রপ্রয়াগ জেলার চোপতা থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার চড়াই ভেঙে পৌঁছে যাওয়া যায় তুঙ্গনাথজীর মন্দিরে। কেদারনাথ, কেদার ডোম, চৌখাম্বা এবং আরো অনেক তুষারাবৃত হিমালয়ের শৃঙ্গ এখান থেকে দৃশ্যমান। চলার পথে সবুজ গালিচা আর দূরে বরফাবৃত শৃঙ্গ শরীরে মনে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর অনুভূতি সৃষ্টি করে। নভেম্বর মাসের শেষ থেকে এখানে প্রবল তুষারপাত হয়। এই সময় মন্দিরের বিগ্রহ তুঙ্গনাথজী নেমে আসেন চোপতা থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরের ছোট্ট গ্রাম মুক্কুমঠে। এখানে উনি থাকেন প্রায় ছ’মাস। শীতের শেষে আবার যখন বরফ গলে গিয়ে চলার পথ পরিষ্কার হয়, বাংলা ক্যালেন্ডারের অক্ষয় তৃতীয়ার দিন আবার তুঙ্গনাথজীর ডোলি যাত্রা হয়। আবার তিনি তাঁর উচ্চতম আসনে বিরাজমান হন।
দলে মেঘ… শুধু মেঘ। পাহাড়ের মাথা থেকে নেমেই আসছে অক্লান্ত। যখনই মেঘ নামছে অমনি শ’য়ে শ’ য়ে বার্ন সোয়ালো উড়তে আরম্ভ করছে আরে চিকচিক ডাকে চারিপাশ ভরিয়ে দিচ্ছে। এত চঞ্চল যে হাজার চেষ্টা করেও একটাও ছবি তুলতে পারিনি। মেঘ খানিক হাল্কা হতেই দেখি সামনের একটা মড়া গাছের ডালে এসে বসলো এক হিমালয়ান উডপেকার। বোঝো কাণ্ড! এ তো ষোলো আনার ওপর আঠেরো আনা। অসাধারণ রঙের ছটায় আর তার ভাব ভঙ্গিতে মেতে গেলাম। প্রচুর পোজ দিয়ে ছবি তুলিয়ে যেমন এসেছিল.. তেমনি হঠাত পালালো। পড়ন্ত দুপুরে বৃষ্টির তোড় খানিক কমতেই একদল স্লেটি হেডেড প্যারাকিট কোথা থেকে এসে দূরের একটা গাছে বসল। ম্যাড়ম্যাড়ে আকাশের বুকে ওদের হলদে ল্যাজের ঝাপটায় এক নিমেষে দিলখুশ! গাছের মাথায় দল বেঁধে ডাকাডাকি আর ওড়াউড়ি করে অনেকক্ষণ চলল ওদের সভা। মুক্কুমঠে প্রচুর স্ট্রীক্ট লাফিং থ্রাসের দেখা মেলে। এত সুন্দর সুরেলা ডাক খুব কম পাখির শোনা যায়। বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে মেখে সেও কিছু কম আনন্দ দেয়নি। এ ছাড়া গ্রে ট্রিপাই, মাউন্টেন বুলবুল, আর কিছু ওয়ার্বলার… এদের যেমন কাজও নেই তেমনি অবসর ও নেই। সারাদিন বৃষ্টিভিজে এগাছ ওগাছ করে উড়েই চলেছে, ডেকেই চলেছে।
প্রায় দিন তিনেক পর বিকেলের দিকে আকাশের ঘন কালো মেঘ খানিক হাল্কা হতে শুরু করল। পরের দিনটা যদি রোদ্দুর হয় তাহলে বন্দী দশা থেকে মুক্তি পাবো ভেবে বেশ চনমনে লাগছিল। সন্ধেবেলা ঘরে বসে সবাই গল্প করছিলাম। বন্ধুর ডাকে বারান্দায় এসে দেখি ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের সাথে চাঁদের তখন মান অভিমানের লুকোচুরি খেলা চলছে। ক্যামেরাটা নিয়ে এলাম ঘর থেকে। যদি চেষ্টা চরিত্তির করে একখানা ছবি তোলা যায়। আগের দিনই পূর্ণিমা গেছে। অতএব চাঁদ বেশ উজ্জ্বল। চারদিকে উঁচু কালো কালো পাহাড় আর মাথার ওপর চাঁদের আলো আঁধারি… এমন মোহময় দৃশ্য দেখে কেউ কি আর নিজের মধ্যে থাকতে পারে? আমিও পারিনি। সত্যিই সেদিন চন্দ্রাহতের মত কতক্ষণ যে আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে ছিলাম মনে নেই। মেঘগুলো ভেসে ভেসে চাঁদ ছুঁয়ে ছুঁয়ে কোথায় যে যাচ্ছে কে জানে! আর চাঁদটা কিছুতেই যেন মেঘগুলোকে বশ মানাতে পারছে না। ধরতে গেলেই ওরা ফাঁকি দিয়ে পালাচ্ছে। দূরের পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট বিন্দুর মত আলোগুলো একটা একটা করে কমে আসছে। ঘন জমাট আঁধার নামছে পাহাড়ের বুকে। সারাদিনের কাজ শেষে এবার যে ঘর গেরস্থালির বিশ্রামের সময়।
ম্যাডামজি…. অব তো খা লিজিয়ে। বহত রাত হো চুকি। হোমস্টের মহীন্দ্রার কথায় সম্বিত ফিরল। সত্যিই তো ওরা আমাকে খাইয়ে, নিজেরা খেয়ে তবে শুতে যাবে । পরের দিন আবার ভোর পাঁচটায় উঠবে। নিত্যদিনের জীবনে সামিল হবে। ওদের সাথে আমিও তাই পা মেলালাম। পরের দিন আমারও যে শহরে ফেরার ট্রেন ধরতে হবে। কেজো জীবনে ফিরতে হবে। তবে মন প্রাণ কিন্তু ওখানেই রেখে এসেছি… আবার যাবো মুক্কুমঠ। আবারো ওই বিশাল এ্যাম্ফিথিয়েটারে বসে গাড়োয়ালের বিশালত্বে হারিয়ে ফেলব নিজেকে। বারবার উপলব্ধি করবো…
যেখানেই থাকো
এ পথে আসতেই হবে
ছাড়ান নেই
সম্বল বলতে সেই
দিন কয়েকের গল্প
-কবি: শক্তি চট্টোপাধ্যায়
**********************************
A quest for spirituality in the Spiti valley
Deepshikha Ghosh
Traveler, Researcher, Kolkata
Just a couple of months ahead of my immensely awaited visit to the Spiti valley, I remember coming across a story. It was by ChheringNorbu, belongingto the family of Amchis (traditional medicinal practitioners) and infact, happening to be one of the last few people to have kept the practice of Amchis alive in Spiti. In his narration he talks about a fairly unheard point in the valley where they would often go looking for medicinal plants, called the Balangri top, located close to the Demul village in the Spiti valley. He says that this is the only place in the region from where all the 21 villages spread out across the valley can be seen. He further adds that it is on this particular mountain that lies a divine place ‘Bi Yul’, implying ‘invisible paradise’ in the Spitian language. Just the way that it is with folklores, Norbu inherited a number of stories from his grandfather, only to be added to his own personal experiences at the Balangri top in the subsequent years. A lot of these experiences are beyond comprehension and interpretation of the naïve human mind. He talks about how the energies of the five gompas of Spiti are believed to reside in the surrounding mountains and how the goddess, EviDansi-the protector of Balangri also dwells somewhere in these mountains. Spirituality had always been an intriguing and rather indecipherable subject for my understanding. Having read and re-read Norbu’s accounts of the mystic folklores surrounding the valley, I could sense a bout of curiosity taking me over. I already knew my visit to the valley now had a whole new purpose.
On the very first morning at the valley, as I stood awestruck witnessing one of the most magnificent sunrises of my lifetime, I had also begun finding a lot of my answers already. I vividly remember how the entire village of Kibber came to life as the sun took the reins of the now bright Spitian skies, seeming as if the vastness of the valley had just been bestowed upon by blessings of some divine powers. Every inch of my being came to realise how the essence of spirituality in this strange land is clearly not confined to the Gompas and Stupas alone, but runs through every bit of the valley.
Having merely recovered from the overwhelming morning musings at Kibber, I was swept by a gush of unfathomable tranquility at the very first sight of the Key monastery. The architectural masterpiece that it is renowned for being, I remember stepping down to capture the beauty of the monastery from afar and eventually finding myself at a loss of words. I could not possibly remember another instance wherein something so breathtakingly beautiful was also equally calming and soothing to the senses. It was perhaps at this particular point that I stood listening to my inner voice the loudest and the clearest of all. I failed to gauge if there can be anything more spiritual than what I had just felt.
The philosophical essence of spirituality is what has always intrigued me. While exploring the Dhankar monastery the next day, a particular moment left me pondering for quite some time. A short flight of stairs brought me to the insides of the Gompa. As I looked around, I chanced upon a quaint and primeval looking window. I stood across the window and what met my eyes was the view of the new Dhankar Gompa in hues of yellow ochre, shining bright across the Dhankar village. The timeless saying of ‘the old must make way for the new’ found an exemplary embodiment in this very moment. I could categorically recall standing right here and attempting to contemplate a lot of things that I began to feel all at once, in a very short span of time. I felt as if I wore my soul bare at that instance, yearning to look beyond the darkness within, into the enormity of the world…of all the light that exists beyond our persistent oblivion. And I was left amazed at the ways of the valley, the subtlety with which it preached the virtues of life and how.
On our last day at Spiti, right ahead of biding our final adieu to the valley that had taught us the philosophy of spirituality like none other, we stopped by at our last destination, Nako village. The setting sun adorning the Spitian skies in golden hues, the snow-capped mountains and the humbling demeanor of the Nako monastery, together advocated how trivial our worldly worries stood in front of the enormity of life.
The quest for spirituality perhaps is way too far-fetched for in fact a lifetime, but the preaching of the land of lamas, the soothing sound of the fluttering prayer flags, the ancient inscriptions on the Gompa walls, and beyond, are bound to stay etched for an entire lifetime for anyone who has ever been to this mystic land.
**********************************
বসুধারা তাল
লোপামুদ্রা বর্মন
Traveler, Writer, Photographer
তখনও প্রেমে পড়িনি, হিমালয়ের, ভালো লাগে ব্যস। সংসার বৃত্তে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। সাধারণ আটপৌরে জীবনে হিমালয় বলতে নৈনিতাল, দার্জিলিং। এরমধ্যেই একবার পৌঁছেছিলাম কেদারনাথের হিমসান্নিধ্যে। হিমালয়কে আরেকটু কাছ থেকে দেখেছিলাম। আমি সেই সব দিনের কথা বলছি যখন কথায় কথায় হিমালয়ের গহীনে যাওয়ার একরকম সুলভ ব্যবস্থা ছিল না। পুণ্যলোভী তীর্থযাত্রী আর কিছু দুঃসাহসী মানুষ ছাড়া এই সব দুর্গম পথে বিশেষ জনসমাগম হতো না। কেদার নাথ থেকে ফিরে নিজেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মানুষ বলে মনে হতে লাগলো। সাধারণ বেড়ানোর কথা ফিকে লাগতে লাগলো। হিমালয়ের অন্দরের পায়ে হাঁটা পথ, বিস্তৃত চারনভূমির স্বপ্ন দেখতে লাগলাম। বিভিন্ন বেড়ানোর পত্রিকায় এইসব গোগ্রাসে পড়তে লাগলাম আর যা অবধারিত ফল হবার তাই হলো, আমি সজ্ঞানে হিমালয়ের একতরফা প্রেমে পড়লাম।
দিন খুঁটে খাওয়া কোনো মহিলার রাজপুত্রের প্রেমে পড়ার গল্প। রাজপুত্রেরও কৌতূহল জেগেছিল, বুঝি। কিছুটা কৌতুকের বশে আশ্চর্য এক জায়গায় নাম মনের মধ্যে লিখে পাঠিয়েছিল আর বলেছিল, “বসুধারা তালের তীরে তোমার অপেক্ষায় থাকবো” এ আর এমন কি, ঠিক পৌঁছে যাব। খোঁজ শুরু করলাম। পরিচিত মানুষদের কাছে জানতে চাইলাম সেই স্বর্গীয় তালের কথা। অবাক হলাম জেনে যে এই তালটির কথা জানা নেই কারও। শোনেইনি কেউ তার নাম। ভাবলাম, উত্তরাখণ্ডের মানুষদের জিজ্ঞাসা করি। মহাবীর
রানা, যোশীমঠের, হিমালয়ের পর্বতারোহী, পদযাত্রী মহলের অত্যন্ত পরিচিত নাম। তাকে ফোন করলাম। সে কেদারতাল, সতোপন্থতাল প্রভৃতিকঠিন সব পথের বর্ণনা দিতে লাগলো। খুব স্পষ্ট করে তার কাছে বসুধারা বা বসুন্ধরা তালের কথা জানতে চাইলাম। কোনোমতেই এড়িয়ে যেতে না পেরে অবশেষে জানালো আছে সেই তাল। কিন্তু যাওয়া যাবে না। যাক, তালটাকে তো পাওয়া গেলো। ভাবলাম, তাল যদি আছে তো যাওয়া যাবে না কেন? খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারলাম সত্যিই সমস্যা। মহাবীর জানালো পথের দিশা। কিন্তু যাওয়া যাবে না কিছুতেই। এ পথে যাবার অনুমতি পাওয়া যায় না। আবার মহাবীরকে ধরে পড়লাম। মহাবীর সোজা না বলে দিলো। ফোন রেখে দিলাম তখনকার মতো। এরপরের ঘটনা ভাবলে হাসি পায় এখন। টিকিট কেটে ফেললাম হরিদ্বারের। কেমন একটা ধারণা হয়ে গিয়েছিল যে আমরা যাবোই। নির্বোধের মতো। পরিচিত সবাইকে যেচে যেচে বলে বেড়ালাম বসুধারা তাল যাচ্ছি। কেউ কেউ শুধরে দিলো ভুলটা। বললো, বসুধারা তাল নয়, বসুধারা ফলস ওটা। মহাবীরকে ফোন করে বললাম, আমাদের টিকিট কাটা হয়ে গেছে। মহাবীর আমায় সমস্যার কথা বোঝাতে শুরু করলো। আমি সত্যিই তখনও বুঝতে পারিনি সমস্যার গভীরতা। পর্যায়ক্রমে যোশীমঠগামী ফোনের সংখ্যা বাড়তে লাগলো। এরমধ্যে আগস্ট মাসের শেষের দিকে মহাবীরের
ফোন পেলাম। বিদেশি পর্বতারোহীদের একটা দল কামেট শৃঙ্গ আরোহনের জন্য আবেদন জানিয়েছে ভারত সরকারের কাছে। ওরা যদি অনুমতি পায় তাহলে সেই অনুমতি সাপেক্ষে ভারতীয় সেনাবাহিনী সেবুক নালার ওপর অস্থায়ী সেতুর বন্দোবস্ত করবে। ট্রেকিং এর বাকি অনুমতির ব্যবস্থা যদি করা যায় তাহলেই যাওয়া যাবে। মন আনন্দে নেচে উঠলো। আর কোনো চিন্তা নেই।
পুজোর ছুটির নির্ধারিত দিনে সপরিবারে হরিদ্বার হয়ে জোশিমঠ পৌঁছে গেলাম। পরেরদিন সকালের কমলা রোদে পিঠ দিয়ে মহাবীরকে ফোন করতে বসলাম। রাঁশী থেকে এসে গিয়েছিল আমার দীর্ঘদিনের পাহাড়ি সাথী, উমেদ সিং। ওরা গেলো বাজারে ছদিনের ট্রেকিং এর উপযুক্ত রসদ কিনতে। ফোন বাজছে মহাবীরের। ল্যান্ড ফোন। কেউ তুলছে না। ফোনের পর ফোন করে চলেছি। মনটা যেন কু-ডাকতে চাইছে। মনের মুখটা হাত চাপা দিয়ে চেপে ধরে মহাবীরের অফিসের দিকে পা বাড়ালাম। তালা বন্ধ অফিস। পাশের প্রতিবেশী জানালো প্রায় এক সপ্তাহ হলো একটা বিদেশি দলের সাথে ও ট্রেকিংয়ে গেছে। আমি যোশীমঠের দিগন্ত বিস্তৃত ঢেউখেলানো পাহাড়সারির দিকে তাকিয়ে রইলাম বোবা হয়ে। শূন্য মস্তিস্কে ফিরে এলাম। এদিকে সব কেনা কাটা সারা। সারাঘর আনন্দগন্ধে ম ম করছে। সব বললাম। ঠান্ডা মাথায় ভাবতে বসলাম। এসডিএম অফিস থেকে অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হবে নিজেদেরই। গেলাম। সব শুনে এসডিএম বললেন, প্রথমে স্থানীয় থানার থেকে অনুমতিপত্র নিতে হবে। তারপর সেই চিঠি দেখিয়ে ক্রীড়াদপ্তর থেকে আমাদের যাত্রাপথের জন্য অনুমতি নিয়ে আসতে হবে।তা রপর সেই অনুমতিপত্র দেখিয়ে বনদপ্তরে গিয়ে টাকা জমা দিয়ে পরচা কাটতে হবে। এরপর এইসব কাগজ নিয়ে এসডিও অফিসে যেতে হবে। সব কাগজ সেখানে জমা দিতে হবে। সব কাগজ সন্তোষজনক হলে এসডিও, বিশেষ অনুমতির জন্য চামলির পুলিসসুপারকে চিঠি দেবেন। তাঁর অফিস গোপেশ্বরে। এসডিওর সেই চিঠি নিয়ে তাঁর সাথে দেখা করে তাঁর স্বস্বাক্ষরিত বিশেষ অনুজ্ঞাপত্র জোগাড় করে সেটি আবার এসডিএমের কাছে জমা দিতে হবে। তারপর এসডিএম চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। আর ভাবতে পারছি না কিছু।
এইবার শুরু হলো বকা খাওয়া। কি বললেন, কে বকলো? না, না সেসব আমি বলতে পারবো না। মাথার অকর্মণ্যতাকে একপাশে সরিয়ে রেখে আমার অর্ধাঙ্গের (পুংলিঙ্গে) বিরক্তিতে কোঁচকানো ভুরু সোজা করিয়ে উত্তরাখণ্ডের সরকারী অফিসগুলো খুঁজতে বেরোলাম। হাতে সাকুল্যে নয়দিন সময়। তারমধ্যে ছয়দিন ট্রেকিংয়ের জন্য রাখা। এসপি মেমসাহেবের অনুজ্ঞা পত্র হাতে পেতে কেটে গেল আস্ত দুটোদিন। সেই কাগজ এসডিএম অফিসে জমা দেওয়া হলো। মনে আশা, এবার নিশ্চয়ই চূড়ান্ত অনুমতি পত্র পাওয়া যাবে। হাতে সাত দিন। সকালে গেলাম এসডিএম অফিস। এসডিএম সাহেব নেই, কখন ফিরবেন কেউ জানে না। ফিরে এলাম হোটেলে। পথেই পড়ে মহাবীরের অফিস। দরজাটা খোলা। মহাবীর নেই কিন্তু তার এক সাহায্যকারী রয়েছে। জানতে পারলাম, কোনো অনুমতিপত্র ওরা জোগাড় করতে পারেনি। এই কদিনে যত বকা খেয়েছিলাম তারসাথে অল্প একটু সুদ মিশিয়ে ওকে দিযে হালকা হলাম। তারপর শুরু হলো এসডিএম অফিসে সকাল বিকেল যাওয়া আসা। দেখা পাওয়া যাচ্ছে না এসডিএম সাহেবের। এই করে কেটে গেল আর দুটোদিন। এখনো আশা ছাড়ি নি। ধীরে হতাশাও গ্রাস করছে যেন। কিছুই ভালো লাগছে না। হঠাৎ ঢং ঢং ঢং ঢং। বদরিনাথজির শীতকালীন আবাস নরসিংহ মন্দিরে আরতির সময় হয়েছে। আমার সব রাগ গিয়ে পড়লো ওই ভদ্রলোকের ওপর। প্রতিজ্ঞা করলাম চিৎকার করে। আর কোনোদিন ওনার মন্দিরে যাবো না। দেবতা তিনি, সব জানতেন। তাও কোনো ব্যবস্থা করেন নি। আজ থেকে ওনার সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ।
সাড়ে সাতটায় খেতে নামলাম। রুটি লাউয়ের তরকারি। একটা ফোন এলো। আমি এস ডি এম যোশীমঠ বলছি, “খুব দুঃখিত, আমাদের অপেক্ষা করানোর জন্য, স্যার”, কথা হলো, তিনি অনুমতি পত্রে সই করে রেখেছেন। পেট তখন এত ভর্তি হয়ে গেছে যে আর কিছু খেতে পারলাম না। প্রথমে হাসলাম খানিক, বোকার মতো। তারপর কাঁদলাম, কেন জানি না। তারপর দেখা করে ধন্যবাদ জানাতে গেলাম মন্দিরের দেবতাকে। গিয়ে দেখি লেপ চাপা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন!
পরদিন ঠিক নটার সময় সব কিছু নিয়ে এসডিএম অফিসে পৌঁছলাম। চায়ের ফাঁকে কাগজটা হাতে পেলাম। গামশালী থেকে যাত্রা শুরু করে আবার গামশালী ফেরা পর্যন্ত চারদিনের অনুমতি পাওয়া গিয়েছিল।
গাড়ি ছুটে চলেছে। তপোবন, মালারি, আরো কিছু ছোট ছোট গ্রাম পেরিয়ে গামশালী। এখানেই সেনা ছাউনিতে অনুমতিপত্র পরীক্ষা হবে। ছাড়পত্র পেলে তারপর আবার এগিয়ে যেতে পারবো। পেলাম। আবার যাত্রা শুরু। গন্তব্য এপথের শেষ গ্রাম নিতি। আবার একপ্রস্থ কাগজ পত্র পরীক্ষা হলো।ভ্রু কুঁচকে সেনা অফিসার তাকিয়ে আছেন। কি উদ্দেশ্যে এসেছি বোঝার চেষ্টা করছেন। এই পথ পযাত্রীদের জন্য কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এতটুকু সন্দেহ হলেই এত পরিশ্রম বৃথা হয়ে যাবে। এখন থেকেই ফিরে যেতে হবে। অবশেষে স্নায়ুযুদ্ধের শেষ হলো। পাশ করে গেছি। হাসলেন অফিসার। এইপ্রথম কোনো পদযাত্রীকে কামেট শৃঙ্গের বেস ক্যাম্প পর্য্যন্ত যাবার অনুমতি দেওয়া হলো। আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছে।
দুটো শর্ত, এক, চারদিনের মধ্যে ফিরে আসতে হবে, দুই, ছবি তোলা চলবে না, সব জায়গায়। সেই শর্ত সাপেক্ষেই অনুমতি পাওয়া গেলো। কুলির বদলে দুটো ঘোড়ার পিঠে মালপত্র চাপিয়ে আর সময় নষ্ট না করে হাঁটা শুরু করলাম। কেউ কোথাও নেই। এপথ শুধুই সেনা বাহিনীর। পাহাড়ের মাঝে মাঝে আছে গোপন বাঙ্কার। এর মধ্যেই ছবি তুলতে হবে। হাত বার বার ক্যামেরাকে ছুঁতে চাইছে। ছবি তোলা শুরু করলাম।
প্রথম থেকেই উর্দ্ধগামী রাস্তা। দমফাটা চড়াই। রাস্তা সরু। বাঁ দিকে বিখ্যাত নিতি গর্জ, তার গভীরতা মনে সমীহ জাগায়। গর্জের নিচে দিয়ে বয়ে চলেছে ধৌলিগঙ্গা। নিচের দিকে তাকালে পাতাল সম্বন্ধে মোটামুটিভাবে ধারণা পাওয়া যায়। ডানদিকে উঠে গেছে খাড়া পাহাড়। উঠে চলেছি। দাঁড়াচ্ছি, জল খাচ্ছি, আবার চড়াইভাঙছি। আজকের যাত্রা বিরতি সেপুক খড়কে। প্রায় এগারো কিলোমিটার রাস্তা। সাত কিলোমিটার পুরো চড়াই। যেখানে চড়াই শেষ হচ্ছে সেই জায়গার নাম গোটিং। একটা ছোট্ট মন্দির আছে, বজরংবলীর। সেখান থেকে কিছুটা নেমে এসে পথ সমান সমান। চার কিলোমিটার হেঁটে এসে পৌঁছলাম আজকের ক্যাম্পসাইটে। সেনা অফিসার চোখ থেকে দূরবীন নামিয়ে রাখলেন। সন্দেহ মেশানো দৃষ্টিতে প্রশ্ন করলেন। আবার কাগজপত্র পরীক্ষা। বিশ্বাসই করতে পারছেন না। দিল্লির কাগজ নেই, আইএমএফের অনুমতি পত্র নেই। তাঁবু লাগানোর অনুমতি দিলেন। মাল পত্র নামিয়ে ঘোড়াগুলোকে ছেড়ে দেওয়া গেল। ক্যাম্পসাইটের বাঁ দিকে ধৌলিগঙ্গার অবয়ব বেশ স্পষ্ট। ডানদিক থেকে সগর্জনে নেমে আসছে সেপুক নালা। শব্দে তার কানে তালা ধরে যাচ্ছে। উদ্দাম সেই নালা পার করে কাল আমরা বেসক্যাম্পের দিকে চলে যাবো। নালার ওপর সেনাবাহিনীর লাগানো লোহার অস্থায়ী সেতু, বেশ শক্তপোক্ত। দিল্লির বিশেষ অনুমতিতে লাগানো হয়েছে, বিদেশি পর্বতারোহীদের জন্য। আমরা ভাগ্যবান। এখন থেকে তিব্বতের সীমানা ঢিলছোঁড়া দূরত্বে। বাঁ দিকে, অনেকটা দূরে সেনাবাহিনীর বিশাল ছাউনি। ঘোড়ার বিরাট আস্তাবল। এখানে পাহাড়ে বাঙ্কার গুলো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। দূরবীন দিয়ে দিনে রাতে নজরদারি চলে। আইটিবিপির সৌজন্যে নৈশ আহার সম্পন্ন হলো। সকালেই বিপত্তি। ঘোড়াদুটোকে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক খুঁজে সেনাবাহিনীর ঘোড়া পাড়া থেকে তাদের ধরে আনা হলো। যাত্ৰা শুরু করলাম। প্রথমেই পেরিয়ে গেলাম সেপুক নালা। তারপরের রাস্তা বলে কিছু নেই। চড়াইটুকু সম্বল করে এগিয়ে চলা। বছরের পর বছর কেউ হাঁটে না এই পথে। পথরেখা বলে কিছু নেই।
অনেকটা এগিয়ে এসে আরও একটা নালা। নাম রাইকানা নালা। এখানেও সেই একই ব্যবস্থা।বিশেষ অনুমতির কারণে অস্থায়ী সেতু লাগিয়েছে সেনাবাহিনী। না হলে দড়িতে ঝুলে ওই যদি পার করতে হতো। আমার আর যাওয়া হতো না। পেরিয়ে গেলাম। সামনে বোল্ডার আকীর্ণ চড়াই। দূরত্বটা বাড়িয়ে নিলাম। বাঁদিকে কত যে নাম না জানা বরফাবৃত শিখর। ডানদিকের পাহাড়ের রঙিন মোরেন। ঘোড়া দুটোর পিছনে চুপচাপ হেঁটে চলেছি। ঘোড়াওয়ালা ছেলেটি বলে এই জায়গাটির নাম নন্দাখড়ক। কতকগুলো পাথর সাজানো আছে। মা নন্দার মন্দির।চড়াই কমে আসছে ক্রমশঃ। বড় বোল্ডারের রাজত্ব। সামনে কামেটশৃঙ্গ দেখা যাচ্ছে। সব ভয় এক ঝটকায় ঝেড়ে ফেলে ক্যামেরা বের করেই ফেললাম। ছবি তুলতে লাগলাম প্রান ভরে। বোল্ডারের মাঝে মাঝে পান্নারঙা হিমবাহ হ্রদ দেখা যাচ্ছে। না, এখনও বসুধারাতালের দেখা পাই নি। আবার সামনে এগিয়ে চলি। ঘোড়া পালক ছেলেটি সামনে ইশারা করে। আরে, ওই তো, ওই তো সামনে বসুধারা তাল দেখা যাচ্ছে। আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছে। বদরিনাথজির দয়ায় অবশেষে। ভাগ্যিস অভিমান করেছিলাম। এগিয়ে চলেছি আরও। প্রায় কুড়ি মিনিট হেঁটে একটা রিজের মাথায় এসে দাঁড়ালাম। ডানদিকে, ধৌলি গঙ্গার আঁতুরঘর। সদ্যজাত শিশুনদীর জন্ম হচ্ছে। নাড়ি কাটছেন স্বয়ং মহাকাল। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি সব। কথা রেখেছেন তিনি।
বসুধারা তালের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। উত্তরাখণ্ডের সবচেয়ে বড় তাল। সিমেন্ট গোলা রং। তালটাকে বেড় দিয়ে একটা পথরেখা চলে গেছে ডানদিকে, হিমালয়ের গহনে। হিমালয়ের হৃদপিন্ড ছোঁয়া কামেট, মন্দির, আবি গামিন প্রভৃতি শৃঙ্গগুলো সব ওখানেই। তালের কাছাকাছি যাওয়া যায় না। ফুটিফাটা মোরেন অঞ্চল। অনর্গল হিমবাহ ভাঙছে। মাটির নিচে থেকে শব্দ উঠছে গুমগুম গুমগুম। পাহাড়ে তার প্রতিধ্বনি হচ্ছে।
এ যেন প্রকৃতিদেবী নিষেধ করছেন, সাবধান করছেন বারবার। ঠিকই তো, ডেকে এনেছেন তিনি, রক্ষা করবার দায়িত্বও যে তাঁর। কেটে গেছে দুটো দিন। আরও দুদিন হাতে আছে। ফিরতে হবে। সকালে উঠে প্রানপনে ছবি তুলে চলেছি। 256 mb memory card, ঠান্ডায় কাবু ব্যাটারি। হয় না আবার কি, সব হয়। কবি ঠাকুর সঠিক বলেছেন, অভয় মনে পথে নামা টুকুই আমার দায়। বাকিটা যে আমাকে চায়, তার। বড় সত্য কথা, প্রমাণিত সত্য, এ জীবনের।
**********************************
Field experience in the Sub Himalayas and Lesser Himalayas
Rumela Bhowmick
Traveler, Kolkata
The Himalaya resulted from collision of the Indian plate with Asia and are well known as the highest, youngest and of the best studied continental collision orogenic belts. They are frequently used as the type example of a continental collisional orogenic belt in studies of older Phanerozoic orogenic belts. Though they look simple, they are quite complex structurally. The major divisions – The Indus-YarlungTsangpo Suture zone (ITSZ), the Tethyan sedimentary units, The Greater Himalayan Sequence(GHS) metamorphic rocks, The Lesser Himalayan Fold and Thrust belt and Sub-HimalyanShiwalik molasse basin are present along 2000km length.
Journey To Sub Himalayan Ghaggar River section
My lab mate and I left for Chandigarh from Howrah Station on 27th Dec 2020. Our professor and driver joined us after a week. We reached early to do Reconnaissance survey of the entire stretch of the Ghaggar river, in Panchkula Haryana, which falls in the Foreland belt area of the Himalayas. This part essentially is called Sub Himalayas and Main frontal thrust cuts across this area, represents a transition from Lower to Upper Shiwaliks. We crossed the river many times since the rocks were on Western and Eastern bank of the river. In geology, our main tool are hammers, chisels, shovels, compass etc. We use them to collect sediments or rocks as per our requirement. The rocks were mostly finer sedimentary like mudstones and sandstones in the lower sections and coarser sandstones and conglomerates in the upper sections. We mapped the whole river section and collected samples for our lab analysis with major focus on a particular ash layer.
The local people sometimes used to help us finding ways which climbing down from the terraces. Food was essentially packed dry food. Our work used to finish by sun set.
Journey to Lesser Himalayan Kullu valley
Then we moved towards the topographically higher Himalayas. We took the Chandigarh highway, via Bilaspur- Mandi towardsKullu valley. It was a two-days road journey along the river Satluj in the lower parts and Beas in the upper parts from Mandi to Kullu, which is part of our study. The various different kinds of rocks encountered were limestone, schists, gneiss with intrusions of granite at some places. Kullu, essentially is a tectonic window in Geological terms, which is a geologic structure formed by erosion along a fault, makes a hole and the underlying rocks are exposed.Kullu valley is hence a part of Lesser Himalayas, different structural terraces are exposed along the Beas River. We did Optical Luminescence Dating or OSL dating to find out the age of the sediments. These terraces are where the Beas River once flowed, but at present time, it flows at a stratigraphically lower level. The sediments were collected along terrace surfaces and from a deeper layer to avoid any weathering effects.Precautions were taken that the samples were not exposed to light.
The terraces were climbed without any gears and I had to carry my DSLR along the cliff bare hands. The cliffs were mostly loose pebbles and gravels as you can see in the picture. There was always a chance of debris falling from a higher level, however it did not. The height of the terraces was in between 30-60ft.
The collision of Indian with Eurasian plates resulted in the mighty Himalayas. The climatic factors vs tectonic settings and how these two interplays have a profound influence on the monsoon and the rain pattern as well. Millions of Indians are affected by the monsoon which is the main source of agriculture. Lots of studies related to Himalayan geology- biotic and abiotic as well are undergoing. The mighty range is still an enigma and a lot of scientific questions are still to be unraveled. They have attracted many international organizations and institutes to invest in the ongoing projects. The fact that the subduction of the Indian plate towards the North Eastern direction is also responsible for many seismic activities is of important concern.
**********************************