Table of Content
- সম্পাদকের কলমে : শ্রীধর ব্যানার্জী
- স্মরণে সতপন্থ তাল : লোপামুদ্রা বর্মন
- ভুইন্দার খাল : তন্ময় পাল
- Rajasthan: A Historical and Cultural Heritage : Papu Dhibar
- মুক্তিনাথের টানে (পর্ব ১): মৌসুমী সেনগুপ্ত
- Bohemian Enough : Shaunak Chakraborty
সম্পাদকের কলমে
শ্রীধর ব্যানার্জী
প্রকাশিত হল বোহেমিয়ান ট্রাভেলগের ‘May – June 2022’ সংখ্যা। মে মাস পর্বতারোহণের মাস। বিশেষ করে হিমালয়ের সুউচ্চ শৃঙ্গগুলির প্রায় প্রতিটিই জয় করা হয়েছে এই মে মাসে৷
প্রায় সত্তর বছর আগে – ১৯৫৩ সালের ২৯-শে মে – তেনজিং নোরগে আর এডমন্ড হিলারি মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। দু’বছর পর – ২৫-শে মে ১৯৫৫ – কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখরে পৌঁছে যান জর্জ ব্যান্ড ও জো ব্রাউন। ওই একই বছরে ১৫-ই মে, ফ্রেঞ্চ অভিযাত্রী লিওনেল তারেবও জঁ কাউজি জয় করেছেন মাকালু। ১৯৫৬-র ১৮-ই মে সুইশ পর্বতারোহী আর্ন্ট রীস ও ফির্ৎজ লুসিঞ্জার জয় করেন পৃথিবীর চতুর্থ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ লোৎসে।
আর এবছর ২২-শে মে মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে আরোহণ করেছেন আমাদের ঘরের মেয়ে পিয়ালী বসাক। বোহেমিয়ান ট্রাভেলগে প্রকাশিত পিয়ালীদির পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারে বারবার উঠে এসেছিক তাঁর এভারেস্ট জয় করার স্বপ্নের কথা। তাঁর স্বপ্নপূরণে আমরাও আনন্দিত, গর্বিত।
এক বাঙালি পর্বতারোহীর সাফল্য উদযাপনের পাশাপাশি আমরা স্মরণ করছি আর এক সফল বাঙালি পর্বতারোহী দীপঙ্কর ঘোষকে। ২০১১ সালের ২১-শে মে প্রথম অসামরিক ভারতীয় বাঙালি হিসাবে তিনি মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে পৌঁছেছিলেন। ২০১২-য় জয় করেন লোৎসে, ২০১৪-য় কাঞ্চনজঙ্ঘা। ১৬-ই মে ২০১৯ তারিখে মাকালু শৃঙ্গ জয় করে নেমে আসার পথে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। বোহেমিয়ান ট্রাভেলগের বর্তমান সংখ্যাটি পর্বতারোহী দীপঙ্কর ঘোষের স্মৃতির উদ্দেশে নিবেদিত হল।
এই সংখ্যায় শুরু হচ্ছে দু’টি নতুন ধারাবাহিক। মৌসুমী সেনগুপ্তের কলমে ‘মুক্তিনাথের টানে’ ও শৌনক চক্রবর্তীর কলমে ‘Bohemian Enough’. লোপামুদ্রা বর্মণ লিখছেন শতপন্থ অভিযানের গল্প। থাকছে তন্ময় পালের তথ্যসমৃদ্ধ লেখা ‘ভুঁইন্দার খালঃ কিছু তথ্য, কিছু বিভ্রান্তি’। পাপু ধীবরের ধারাবাহিক ‘Rajasthan: A Historical and Cultural Heritage’ এর তৃতীয় পর্বে থাকছে উদয়পুর শহরের কথা।
**********************************
স্মরণে সতপন্থ তাল
লোপামুদ্রা বর্মন
Traveler, Writer, Photographer
হঠাৎ, কাছেই কোথাও বিস্ফোরণের আওয়াজ। চমকে উঠে বসি। হালকা তন্দ্রা এসেছিল যেন। সামনে তাকিয়ে চোখ স্থির। পার্বতী শৃঙ্গ থেকে টনটন বরফ নেমে আসছে avalanche । Avalanche নামছে। জীবনে প্রথম এই দৃশ্য দেখছি। স্বর্গীয়। শিগগির ক্যামেরাটা দাও। উত্তর এলো, ‘ ওটা জ্যাকেটের পকেটে আছে। এইমাত্র শুয়েছি। এখন আর উঠতে পারছি না। চোখ মেলে দেখো না। অতো ছবি তোলার কি আছে?’ কোনোমতে জ্যাকেটের পকেট হাতড়ে ছোট ক্যামেরাটার লেন্স চোখ রাখি। উফ, কি দেখছি! হুহু হাওয়ায় গুঁড়ো বরফের রাশি কুয়াশার ইন্দ্রজাল সৃষ্টি করেছে। ভয়াবহ সৌন্দর্য। সব মিলিয়ে সাত মিনিটের নাট্য। তারপর সব শান্ত।
সামনের কুঁচো বরফের কুয়াশার পর্দাটাও আর নেই। শুধু বরফ ঝরে গিয়ে পার্বতীগাত্রের আরো খানিকটা কালো পাথরের অংশ মুখ ব্যাদান করে আছে। সংগ্রাম চা করে এনেছে। আলু ভুজিয়া আর আরো কি কি যেন হাবিজাবি নিয়ে পার্বতী শৃঙ্গের দিকে তাকিয়ে বসে আছি। আচ্ছন্নতা কাটেনি এখনও। কি দেখলাম,আহা! চায়ে চুমুক দিচ্ছি। হঠাৎ মনে হলো যেন সাদা বরফের ওপর কালো দুটো বিন্দুর নড়াচড়া। আবার ক্যামেরা চোখে লাগাই। কালো বিন্দুদুটোকে যন্ত্রের কসরতে টেনে আনি চোখের সামনে। দুটো মানুষ, স্পষ্ট। অনেক দূরে। আবার উত্তেজনা। ওরা কারা? সময় আর কাটে না। এইসব সাতপাঁচের মধ্যে চা গেল ঠান্ডা হয়ে। আবার লেন্সে চোখ লাগাই। হ্যাঁ, দুজন মানুষ। নিচের দিকে নামছে। খুব তাড়াতাড়ি নামছে, পেশাদারী পদক্ষেপে। অনেকটাই কাছে চলে এসেছে। আরো প্রায় ঘন্টা খানেক অপেক্ষার পর ওরা এসে পৌঁছলো। ওমা, কি আশ্চর্য, এরা তো ভারতীয় নয়! মাথার চুল থেকে জুতোর ডগা পর্যন্ত ভিজে চুপচুপে। আগুন জ্বালানোই ছিল। তাতে আরো কতক কাঠ দেওয়া হলো। কি মিষ্টি, হাসি হাসি মুখ। ভিজে আর ঠান্ডায় চামড়ার সাদা রং ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে। কত কি জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করছে।
জানা গেল, ওরা নববিবাহিত। সুদূর পর্তুগাল থেকে এসেছে। কেন? শুনবেন? পার্বতী শৃঙ্গ আরোহন করে মধুচন্দ্রিমা উদযাপন করবে, এই মনের বাসনা। সাবালক শিশুসুলভ নির্মল বাসনা। কোনো দোষ নেই। আমার চোখ গোলগোল হলো। কারণ, এমন আশ্চর্য কথা পূর্বে কখনও শুনি নাই। ছেলেটির নাম Paolo Roxo, মেয়েটির নাম Daniela Taixeira। ওরা চল্লিশ দিন ধরে পার্বতী আরোহনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওদের সাথে IMF এর একজন Liaison Officer ও আছেন। আবহাওয়ার সমস্যার জন্য এখনও আরোহন সম্ভব হয় নি। আগের দিন ওরা summit এর উদ্দেশ্যে শৃঙ্গের নীচে পর্যন্ত পৌঁছে যায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাধ সাধে আবহাওয়া। আরোহন সম্ভব না হওয়ায় সকালের দিকে ওরা ঘুমিয়ে পড়েছিল। আমাদের যে হিমস্খলনটা দেখে স্বর্গীয় অনুভূতি হচ্ছিল, তার অনতিদূরেই ওরা ঘুমিয়ে ছিল। হিমবাহ স্খলনের ভীষণ শব্দে ঘুম ভাঙে। তারপর ধ্বংস লীলা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে নামতে শুরু করে। তারপর নাগাড়ে চলে এই বিকালবেলায় নীচে এসে পৌঁছেছে। জুতোমোজা গুলো আগুনের পাশে মেলে দিয়ে বসে পড়ে আগুন পোহাতে। চা, ম্যাগি, কেক নিয়ে আসে সংগ্রাম সিং। আগুনের তাপে শরীরের স্বাভাবিক রং ফিরে এসেছে। তাকিয়ে আছি ওদের মুখের দিকে। নিষ্পাপ সরলতায় ভরা। মন ভরে উঠছে স্নেহে, যেন আমার কত দিনের চেনা। এদিকে ওদের জামাকাপড় , জুতো মোজা সব শুকিয়ে এসেছে প্রায়। দিনের আলো থাকতে থাকতে চক্রতীর্থে নেমে যেতে হবে ওদের। তৈরি হয়ে নিচে নামতে শুরু করে । আমরা হাত নেড়ে বিদায় জানাই।রাতে খাওয়ার শেষে তাঁবুর বাইরে এসে বসি। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি। দুটো নিষ্পাপ মুখ। পার্বতীর পটভূমিকায় উজ্জ্বল। অসীম ধৈর্যের সাথে অপেক্ষা করছে দুর্ধর্ষ এক স্বপ্নকে বাস্তব রূপে দেখার জন্য। আমার ভারতীয় আধ্যাত্মিক মন এর মধ্যে উমামহেশ্বরের ইচ্ছার রূপ দেখতে পেল।
সকাল বেলায় ছবি তোলা যেন শেষই হয় না। রাজকীয় চৌখাম্বা ভোরের আলোয় আড়মোড়া ভাঙছে।
স্থির সতপন্থের জলে পার্বতী, কুবের, চৌখাম্বাদের প্রতিফলন।আর বালাকুনের কথা কি আর বলবো। শৃঙ্গটির আকৃতি মুকুটের মতো, অবিকল। সদ্য ঘুমভাঙ্গা সূর্যের আলো পড়ে ঝলমল করে উঠলো।
পাশেই একটা বিরাট হিমবাহের ঝুলন্ত শরীর।আর কোনোদিন আসা হবে না, জানি। পাততাড়ি গোটানো প্রায় শেষ। স্বর্গে অবস্থানের সময় শেষ হয়ে আসছে।মনটা ভারী হয়ে উঠেছে।ভীষণ অস্থির লাগছে। ফিরতে হবে তবু। উঠে এলাম রিজটার মাথায়। রিজের পিছনে তিনকোনা সতপন্থ তাল , পার্বতী, বালাকুন, চৌখাম্বা,কুবের শৃঙ্গদের প্রতিচ্ছবি কোলে স্তব্ধ বসে আছে।
সামনে অলকানন্দার হিমবাহ শরীর। ফুটিফাটা। কথিত আছে, হিন্দু ধর্মের তিন আদি দেবতা, ব্রহ্মবিষ্ণুমহেশ্বর, প্রত্যেক একাদশী তিথিতে তালের তিন কোণে বসে তপস্যা করেন। শেষবারের মতো চারপাশে তাকাই। মাথার ওপর ছাদ উজ্জ্বল নীল। একদন্ত শৃঙ্গটি একদম পার্বতীর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ মনে পড়ে, এই পথ পৌরাণিক। মহাপ্রস্থানের পথ। মুক্তির পথও বটে। আদি কবি ব্যাসও এই পথের কথা জানতেন। নাহলে তাঁর নাতি নাতবৌদের এই পথের হদিস দিলো কে? স্বর্গের সিঁড়ির কথা ছোটবেলায় শুনেছি। সেই সিঁড়িটি রাখা রয়েছে চৌখাম্বার পায়ের ঠিক নীচটিতে। সোনার সিঁড়ি।
অকুতোভয় নির্ভীক পুরুষ যুধিষ্ঠির,এই সত্যের পথে সহোদর, অর্ধাঙ্গিনী সকলকে হারিয়েছিলেন। তারপর একা চলে গিয়েছিলেন সেই সিঁড়িপথ ধরে। জীবনের ওপারে। কিম আশ্চর্যম, পিতামহ ব্যাস এটাও জানতেন যে, সিঁড়ির উপরিভাগটি অর্থাৎ মাথাটি,এক বিস্তৃত প্রান্তরে গিয়ে মিলে গেছে। সুধীজন, মহাভারতকার স্পষ্ট লিখে গেছেন একথা। একেবারেই সমতল অঞ্চল। সেখানেই স্বর্গের রথটি এসে দাঁড়িয়েছিল। যুধিষ্ঠিরকে নিয়ে যাবে বলে। ঠিক যেন এরোপ্লেন ওড়ার মতো ব্যবস্থা। উড়ন্ত স্বর্গীয় যানটি নামার সময় এবং ওড়ার সময় এই সমতলক্ষেত্রটিকে রানওয়ের মতো ব্যবহার করেছে। মাত্র কয়েক বছর আগে এই সমতল বরফক্ষেত্রটি মানুষের গোচরে এসেছে। এই অঞ্চলটি বর্তমানে পানপাতিয়া আইসফিল্ড নামে সবার কাছে পরিচিত। সিঁড়িটির দিকে তাকিয়ে বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠলো। সত্যিই তো আজকের দিনেও আধুনিকতম সরঞ্জামে সজ্জিত হয়েও এই সিঁড়িপথ অতিক্রম করার কথা অতি বড়ো পর্বতারোহীরাও মাথার মধ্যে প্রশ্রয় দেয় না, সেখানে অশীতিপর,একা এক বৃদ্ধ এইপথ পার করেছিলেন অবলীলায়। কি ছিল তাঁর পাথেয়, যা তাঁকে ওই দুর্গমতম পথ পেরিয়ে যেতে সাহস জুগিয়েছিল?
এই দেখ, একি বিপদ, সবাই নীচে নেমে গেছে আর আমি এখানে একা দাঁড়িয়ে মহাভারত গাইছি! আহাম্মক আর কাকে বলে। ওরে থাম, থাম। বলে তড়বড় করে নামতে থাকি। আবার সেই একঘেয়ে পথ চলা। সাবধানে হিমবাহ পেরিয়ে। হিমবাহ গলে গিয়ে ছোট ছোট জলাশয় সৃষ্টি হয়েছে।কোনটা নীল, কোনটা সবুজ।কোনটা আবার নিতান্তই ঘোলারঙের।
ভালোই লাগছে। মাঝে মাঝে লোপাকে বলছি, সাবধানে চলো। ক্রিভাসে যদি পড়েছ তো কোনো রথ কিন্তু নিতে আসবে না। স্বর্গের এই পাথুরে পথটুকু পেরিয়ে এসেছি প্রায়। ঐতো সামনে রিজের খাড়া পাথরের দেয়ালটা দেখা যাচ্ছে। ওটাই স্বর্গ আর মর্ত্যের মাঝের দেওয়াল। ওপারেই তো মর্ত্যলোকের সবুজ ঘাসে ঢাকা পথ। উঠে এসেছি রিজটার মাথায়। নেমে যাব মখমল সবুজ ঢাল বেয়ে ওপারে। ডানদিকে তাকাই, নাক-বরাবর রিজটা শেষ হয়েছে। আর তার পরেই, আহা!
খাড়াই ঢালটা বেয়ে সাবধানে নেমে আসি। অনেক দূর থেকে সেই বিদেশিদের তাঁবু দুটি দেখা যাচ্ছে। আমরাও আজ এখানে থাকবো। ওরা আমাদের দেখে এগিয়ে এলো। আজ ওদের অতিথি আমরা। কফি, কেক দিয়ে আমাদের আপ্যায়ন করলো। ওদের হাসিমুখ দুটো দেখে স্বর্গের সুখ ভুলে গেলাম।
আমাদের যাত্রা শেষ হয়ে এলো। ওদের এখনো কত দিন থাকতে হবে কে জানে। জানা গেল ওরাও নীচে নেমে যাবে। কারণ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আবহাওয়া শোধরানোর কোনো পূর্বাভাস নেই। তাই এবারের মতো অভিযানের ইতি টানতে হবে। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তাহলে মধুচন্দ্রিমার কি হবে ?’ সম্মিলিত হো হো হাসিতে সারা চক্রতীর্থ জেগে উঠেছিলো যেন। ভাব-গম্ভীর হিমালয়ও সেদিন এই কৌতুকআবহের সাক্ষী হয়ে মুচকি হেসে ছিলেন। আর এক নববধূর গালের রং আরও একটু লাল হয়ে উঠেছিল।
**********************************
ভুইন্দার খাল ;
কিছু তথ্য, কিছু বিপত্তি
তন্ময় পাল
Traveler, Writer, Photographer
সময়টা ১৯৩১,কামেটের(৭৭৫৬ মি) শিখর স্পর্শ করলেন বিখ্যাত ব্রিটিশ অভিযাত্রী ফ্রাঙ্ক স্মাইথ ও হোল্ডস্ওয়ার্থ। এটাই ছিল তখনও অবধি পৃথিবীর সর্বোচ্চ আরোহীত শৃঙ্গ। গামশালী দিয়ে ফেরার পথে প্রচন্ড তুষার ঝড়ে পথ হারালেন এই দুই সাহেব। ঝড় থামতে চোখের সামনে যে দিগন্ত বিস্তৃত ফুলের উপত্যকা দেখলেন তাই আজকের ভুইন্দার উপত্যকার ‘ভ্যালি অফ্ ফ্লাওয়ারস’।
এই উপত্যকা কে ফ্রাঙ্ক স্মাইথ’ই প্রথম জনসমক্ষে নিয়ে আসেন তার ‘ভ্যালি অফ্ ফ্লাওয়ারস’ বইতে। যদিও টি.জি.লংস্টাফের মতে ১৮৪৮ সাল নাগাদ রিচার্ড স্ট্রাচী এই উপত্যকা অতিক্রম করেছিলেন। ১৮৬২ সালের অক্টোবর মাসে এডমন্ড স্মাইথ ও ১৯০৭ সালের জুলাইতে ডাক্টার লংস্টাফ নিজেও এসেছিলেন এই উপত্যকায়। কিন্তু এরা কেউই জনমানসে এ বিষয়ে বিশেষ কিছু প্রচার করেননি। তাই ফ্রাঙ্ক স্মাইথ ও হোল্ডস্ওয়ার্থকেই ভুইন্দার উপত্যকা তথা ‘ভ্যালি অফ্ ফ্লাওয়ারস’ এর আবিষ্কারক ধরা হয়।
এই উপত্যকায় হিমাদ্রি শৃঙ্গমালায় যে পাসটি অলোকানন্দা উপত্যকা কে ধৌলী গঙ্গা উপত্যকার সাথে যুক্ত করে সেটা ভুইন্দার খাল বা পাস (৫০৯০ মি)। এই পাসের উদ্দেশ্যেই আমরা ২০১৭-এর অক্টোবর মাসে রওনা হয়েছিলাম তিন জন। শুভাশিস ব্যানার্জি, শোভন ধাড়া আর আমি। শুভাশিস দা এইচ এম আই – এর এডভান্স ট্রেনিং প্রাপ্ত এবং বেশ কিছু পর্বতাভিযানের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। সুতরাং সেই লিডার। আমাদের তিন জনের দলের জন্য ছিল গাইড সঞ্জু আর তিন জন পোর্টার। এই পদযাত্রা মোটের উপর আট দিনের এবং হাতে একদিন অতিরিক্ত রাখলে মোট ন’দিন। প্রথম দিন ঘাংরিয়া, তারপর টিপরা খরক, পরের দিন রাজ খরক, ভুইন্দার খাল বেস, তার পরের দিন পাস অতিক্রম করে রতবণ হিমবাহের শিবির এবং তারপর ইরি উদিয়ার ও অবশেষে হাঁটা শেষ গামশালীতে। অন্তর্জালে শিবির গুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য থাকায় সেগুলো দিয়ে লেখা অকারণ দীর্ঘায়িত করছিনা। এখানে গাইড সঞ্জু আর নিজেদের অনভিজ্ঞতার জন্য বেশ মাসুল গুনতে হয়েছিল। সেটাই বলার চেষ্টা করছি।
দ্বিতীয় দিনের হাঁটা পথে দুপুরের একটু আগে আমরা ভ্যালি অফ্ ফ্লাওয়ারস পৌঁছাই। সামান্য খাবার খেয়ে আবার হাঁটা শুরু করেছি আধা ঘন্টা হয়েছে। সঞ্জুর হঠাৎ খেয়াল পরলো, সে তার রোদ চশমাটা ফেলে এসেছে ভ্যালি অফ্ ফ্লাওয়ারসের যেখানে আমরা বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, সেখানে একটা পাথরের উপর। তাকে সেটা নিয়ে আসতে বলা হল। সে বলল, ‘ও ঠিক আছে! দরকার লাগবে না!’
ভাল কথা! আমরা টিপরা খরক পৌঁছলাম। হাতে হাতে টেন্ট লাগানো হল। গুছিয়ে নিয়ে জুতো খুলতে গিয়ে দেখি সোল খুলে বেরিয়ে আসছে। শোভনেরও একই অবস্থা। ২০১৫ – এর অক্টোবরে কেনা জুতো। শুধু এক মান্দানী ভ্যালি ট্রেক করেছি জুতোটা পরে। ২০১৬ তে কোথাও বেরনো হয়নি এবং জুতো জোড়া একবারও সমতলে পায়ে গলানো হয়নি। ব্যাস তাতেই এই বিপত্তি! সঞ্জুকে পরিস্থিতির কথা জানাতে সে বলল, আগামী কাল দুজন পোর্টার আমাদের দুজনের জুতো ঘাংড়িয়া থেকে সেলাই করে নিয়ে আসবে। আমরা এখানে বিশ্রাম করব।
আমাদের হাতে মাত্র একটাই অতিরিক্ত দিন। সেটা এই উচ্চতায় বিশ্রাম করে কাটানোয় আমার সম্মতি ছিল না। অনেক ভেবে ঠিক হল শুভাশিস দার কাছে এরেলডাইট আছে, তা দিয়ে সোল জোড়া হবে। তাছাড়া শুভাশিস দার কাছে একটা স্পেয়ার জুতো আছে। বেশি কিছু হলে ওটা শোভন পড়বে আর আমি সঞ্জুর জুতোটা ব্যবহার করবো। অন্যদিকে, সঞ্জু কিটো পরে হাঁটবে। খানিক ঢোক গিলে রাজি হলাম।
পরদিন এরেলডাইট লাগানো সোলের উপর দরি দিয়ে বেঁধে হাঁটতে শুরু করলাম আমি আর শোভন। কিছুক্ষন পর সঞ্জু আমাদের কারোর কাছে অতিরিক্ত সানগ্লাস আছে কিনা জানতে চাইলো। দেখলাম ওর চোখের তলা বেশ ফুলেছে, আর। তাতে চোখ দু’টো ফুলে ছোট্ট হয়ে গেছে। অভিব্যক্তিতে বোঝা যাচ্ছে কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু মুখে কিছু বলছে না; পাছে নিজের অবোধ ওস্তাদির জন্য কথা শুনতে হয়! আমি নিজে খুব একটা রোদ চশমা পরতে পছন্দ না করলেও পাহাড়ে ব্যবহার করি। সঞ্জু যেমনই হোক, সে-ই আমাদের পথ প্রদর্শক। এখন ও যদি মাঝপথে কানা হয় তো আর রক্ষে থাকবে না! পদযাত্রা পন্ড হবেই।
দলের বাকি দুজন পাওয়ার গগ্ওলস পরে, তাই আমার রোদ চশমাটাই দিলাম ওকে। সেদিন রাজ খরক পৌঁছে শুভাশিষ দা সব ছেড়ে আবার এরেলডাইট সহযোগে জুতোর শুশ্রূষা করতে লাগলো এবং জানালো অবস্থা ভালো নয়। যাই হোক, সন্ধ্যার ঠিক আগে আমি আর শোভন দু’কদম চড়াই ভেঙে একটা রিজের উপরে এলাম। যে রাস্তা দিয়ে আমরা উঠে এসেছি সেই লালচে ধূসর মোরেন জোনের ডান দিকে নীলকন্ঠ, বাঁদিকে ঋষি পর্বত আর পিছনে ভুইন্দার আইস ফল। মোটের উপর স্বর্গীয় চালচিত্রে ভুলে গেলাম জুতো নিয়ে উৎকন্ঠা।
পরদিন হাঁটার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শুরু হল বরফ। ভুইন্দার বেস ক্যাম্প সাইট পুরোটা বেশ কয়েক ফুট বরফে ঢাকা। তার উপরেই আমাদের টেণ্ট। একটা টেন্টে রান্না হচ্ছে, আরেক টেন্টে জুতোর সেবা। প্রযত্নে, শুভাশিষ দা। ঠিক হল, কাল পাস ক্রস করার পর আমি সঞ্জুর জুতো পরবো আর শোভন শুভাশিষ দা’র স্পেয়ার জুতো পরবে।
ভুইন্দার অঞ্চল মূলত আবহাওয়ার জন্য কুখ্যাত। সঞ্জু কুড়ি দিন আগেই উত্তরপাড়ার একটা দল নিয়ে এসেছিলো। তখন এখানে এত বরফ ছিলো না। মাঝের এক সপ্তাহের নিম্নচাপে এত বরফ জমে গেছে। পাশে ওঠার ঠিক আগেই একটা লেক পুরো জমে গেছে। যাই হোক, জুতোয় জোড়াতালি দিয়ে আমরা পাসে উঠে এসেছি। যেদিক দিয়ে নামবো, সেদিকে মুখ করে দাঁড়ালে ডান দিকে রতবন শৃঙ্গ। সামনে রতবন হিমবাহ।
পোর্টারদের মধ্যে একটি কম বয়সি ছেলে ছিল। সে বেশ মজা পেয়েছে। পাসের মাথায় সে বেশ কয়েকবার সামার সওল্ট দিল। আকাশ ঝকঝক করছে। আকাশের এত গাঢ় নীল আর বরফের এত ঔজ্জ্বল্য খুব একটা প্রত্যক্ষ করি নি এর আগে। এবার নামবো। বরফের কারনে রাস্তা নির্বাচনে বেগ পেতে হচ্ছে সঞ্জুকে। ও বেশ উদ্বিগ্ন; কথা কম বলছে। এই অবস্থায় আমার জুতোর সাথে সোলের সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ ঘটেছে। দুপায়ে চেটোর সাথে দড়ি দিয়ে সোল জোড়া কোনরকমে বাঁধা। এত বরফে এই জুতো নিয়ে চলতে যে কি ভয়ঙ্কর অসুবিধা হচ্ছিল সে আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
এরপর হঠাৎ এমন একটা জায়গা এলো যেখানে প্রায় ৮০-৮৫ ডিগ্রি ঢাল। নামতে হবে। সামনে সঞ্জু তারপর শোভন, আমি ও শেষে লিডার শুভাশিষ ব্যানার্জি। সঞ্জু দাঁড়িয়ে পরে নামার রাস্তা খুঁজছে। আমরাও দাঁড়িয়ে গেছি পিছনে। জায়গাটা যথেষ্ট বিপজ্জনক এবং ক্যামেরা বন্দী করার জন্য খুবই লোভনীয়। আমি মোবাইলে ছবি তুলছিলাম বলে শুভাশিষ দা আমায় ছবি নিতে বললো। আমি মোবাইলটা কোমরের পাউচ থেকে বার করেছি, ঠিক তখনই সঞ্জু ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকিয়েছে। আমি ছবি তুলতে উদ্দত হয়েছি দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল, সাথে তীব্র মুখ ঝামটা দিল। আমি ঘাবড়ে টাবড়ে গিয়ে কী বিশাল একটা অন্যায় করে ফেলেছি ভেবে, ছবি না তুলেই তাড়াতাড়ি মোবাইলটা ব্যাগে পুরে ফেললাম।
একটু ধাতস্ত হব কী, তখনই ডান পাটা গেল হড়কে। ওই বরফের ঢালে আমি চার হাতপায়ে কোনরকমে ঝুলে আছি জুতো থেকে সোল খুলে যাওয়ার বদান্যতায়। এই অবস্থায় সঞ্জু শোভনকে টোপকে আমায় সাহায্য করতে আসতে পারছে না। আমি নড়াচড়া করলে আমার জুতোর যা অবস্থা তাতে নিচে গড়িয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। আমি তাই নিথর। শেষে একজন পোর্টার পিছন দিক দিয়ে আমার রুকস্যকের মাথাটা ধরে টানতে, আমি সে যাত্রায় রক্ষা পেলাম। বিশেষ চোট না লাগলেও, আত্মবিশ্বাসে বেশ চোট লাগলো। মনে মনে নিজেকে বেশ বকাঝকা করলাম কান্ডজ্ঞান হীনতার জন্য।
যাই হোক, রতবন হিমবাহের শিবিরে পৌঁছে গেছি। সঞ্জু চিন্তা মুক্ত। বেশ হাঁকডাক করছে। কিন্তু বিপত্তি তখনও কাটেনি। সেদিন মাঝরাতে হটাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেল চোখের যন্ত্রনায়। চোখ খুললে বুঝলাম প্রায় কিচ্ছুই দেখতে পাচ্ছি না। টর্চ জ্বাললাম। শুধু একটা আভা। বুঝলাম স্নো ব্লাইন্ডনেস। সকালে রোদ চশমা ছাড়া প্রায় পাঁচ- ছ ঘন্টা বরফের ওপর কাটানোর ফল। সঞ্জুর বাপ বাপান্ত করলাম।
পরদিন সকাল বেলা একজন পোর্টার বেড টি-র বদলে সঞ্জুর কাছ থেকে আমার সানগ্লাসটা ফেরত দিয়ে গেল। তারও আমার মত অবস্থা। যন্ত্রনা কমার ওষুধ চাইলো। তাকে দিলাম, নিজেও খেলাম এবং সেই আধ কানা অবস্থায় সঞ্জুর জুতো পরে আরও দুদিন হেঁটে গামশালী পৌঁছালাম।
**********************************
Rajasthan: A Historical and Cultural Heritage
Part 3
Udaipur :The White City
Papu Dhibar
Research Scholar, Jadavpur University
In this article we will revisit the city of Udaipur. We left Abu Road early for Udaipur in the morning at around 8 am by bus and reached there by 11 am while the sun was beating down. Udaipur has an intriguing story related to its history. The then king of Mewar kingdom, Maharana Udai Singh II ruled over Chittorgarh in Rajasthan in 1553. As per legend, while out for hunting in the wilds he met a hermit meditating over a hilltop above picturesque Lake Pichola. The saint, Goswami Premgiriji, blessed the king with a protection blessing, in which he said that if the king built a palace over that exact spot, it would be protected for eternity. The Maharana took the saint’s words and made the wonderful valley as the new capital of his dynasty. Thus Udaipur was found.
The location was indeed protected from all sides by Aravalli range, forests and lakes. As we have seen with Rajasthan, one of its most prominent essences is the colours of the cities. We have already seen two different colours in the Golden City of Jaisalmer and the Blue City of Jodhpur, and here again we were greeted with the colour white in Udaipur which is entitled as the White City of India. The name, White City, has been given due to the fact that the early rulers of the city made beautiful palaces and castles with white marble and also the houses are white. The colour white have different meaning as well, it symbolizes peace, purity and unity.
The highlights of Udaipur are not only the palaces and castles but it also has a lot of different artificial lakes. Amidst the harsh and scorched desert region in the far west of Rajasthan state, Udaipur is like an oasis having seven sapphire-shaded lakes and towering hills. It is also why it’s called the City of Lakes. But due to confinement of time we could only visit to the City Palace, Lake Pichola and the Fateh Sagar Lake.
After reaching there, we went to the City Palace, a gigantic architecture, which consisted of a series of palaces. It is the second largest palace in India, only next to Mysore Palace. The building of the palace was started by Maharana Udai Singh II and it took a very long time, nearly 400 years and several kings contributing to the completion of the complex construction. The structure contains 11 separate palaces and exhibit different wall-paintings, coloured glass-windows, silver work, mirror work, carvings and idols. The palaces within the complex are connected by narrow, mazy and zigzag corridors to protect from surprise attack from enemies. All these palaces have different names and show different murals, paintings, idols etc. From the upper terraces you will that the white Udaipur city comes into view.
After exploring the palace we went to Lake Pichola, which is an artificial fresh water lake, surrounds the City Palace. The lake was built in 1362 and got its name from the village ‘Picholi’. It is said that it was created by Pichhu Banjara (gypsy) under the reign of Maharana Laksha. The lake’s surroundings were developed over the centuries. Three of the largest lakes found in Udaipur, Pichola Lake, Swaroop Sagar Lake and Fateh Sagar Lake, are connected by arched bridges built by Maharana Swaroop Singh. After spending some time in the vicinity of the lake we headed for another massive lake nearby.
Fateh Sagar Lake is also an artificial lake named after Maharana Fateh Singh of Mewar dynasty. The lake was originally built by Maharana Jai Singh in 1687 but two centuries later it was washed away in a flood and then Maharana Fateh Singh rebuilt the lake and also constructed a dam which enlarged the lake size, thereafter the lake was name Fateh Sagar Lake. Within the confinements of the lake there were small parks and we went on to visit one of them. With Aravalli hill range in the backdrop the sunset here was incredibly picturesque. Boating in the lake could be a very eye-catching activity in this particular lake. After the beautiful sunset we went to the hotel to get ready for our next destination the following morning.
**********************************
মুক্তিনাথের টানে (পর্ব ১)
মৌসুমী সেনগুপ্ত
Traveler, Writer, Photographer
বছর সাড়ে তিন আগের কথা। একঘেয়ে দিনযাপনে হাঁপিয়ে ওঠা হৃদয়ের ক্যানভাসে তখন শুধু ধূসর রঙের আঁকিবুঁকি। মনের মধ্যে সারাক্ষণ কোথাও যেন একটা বিষাদ বুজকুড়ি কেটে চলেছে। এমন একটা সময়ে হঠাৎ একদিন ঝলমলে মুখ নিয়ে হাজির হোলো এক বান্ধবী। সদ্য সে ফিরেছে মুক্তিনাথ থেকে গল্প ও ছবির ঝুড়ি নিয়ে। বহুদিনের সুপ্ত ইচ্ছের আবার ঘুম ভেঙে উঠে বায়না করা শুরু।শয়নে স্বপনে একটা কথাই বেজে চলতে লাগলো সারাক্ষণ , যেতে হবে সেখানে, যেতেই হবে! অগত্যা শুরু হোলো মুক্তিনাথের সুলুক সন্ধান।
এটুকু আগেই জানতাম, এই মন্দিরটির অবস্থান নেপালের উত্তর অংশের অতি অপরূপ পাহাড়ী সৌন্দর্য মন্ডিত আপার মুস্তাং জেলায়। আগে জমসম থেকে অনেকটা দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে হেঁটে আসতে হোতো। বর্তমানে একটি পিচের রাস্তা হয়েছে পাহাড় নদীর বুক চিরে। সেটিও বেশ রোমাঞ্চকর।
সুযোগ এলো ২০১৮ সালের অক্টোবর এর শেষ সপ্তাহে।যেহেতু আমরা দুজন মহিলা যাচ্ছি, তাই শরণাপন্ন হওয়া গেলো একটি নামী পত্রিকার বিজ্ঞাপনে পাওয়া ট্র্যাভেলিং এর সাথে যুক্ত এক ভদ্রলোকের (?)।ঈশ্বর অলক্ষ্যে মুচকি হাসলেন। যাওয়ার আগের দিন থেকে বুঝতে শুরু করলাম তার ব্যবসার দুটি মূলমন্ত্র মিথ্যাচার ও লোক ঠকানো।
যথেষ্ট আগে টাকা দিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও তিনি রক্সৌল যাওয়ার সবচেয়ে ভালো ট্রেন মিথিলা এক্সপ্রেস এর টিকিট না কেটে আমাদের নিয়ে তুললেন পাটনাগামী (নাম মনে নেই) এক ট্রেনে। শালিমার স্টেশনে পৌঁছে দেখি তার মুক্তিনাথ টিম… আমরা দুজন আর এক বৃদ্ধ দম্পতি। বাকী দশজন (যা এতোদিন শুনে এসেছি) তার কল্পনায়। যাই হোক নানা ভালো ভালো লজিকে নিজেই নিজের মনকে শান্ত করলাম। কারণ চলেছি স্বপ্নপূরণের পথে।
সকাল ৭ টায় পাটনায় নেমে একটি সুমোতে উঠে রওনা হওয়া গেলো রক্সৌলের উদ্দেশ্যে।ততক্ষণে মনোবল আবার ফিরেছে অনেকটাই। পথে ব্রেকফাস্ট এর জন্য নামা এক ঝুপড়ি প্রায় ধাবায়। নামতেই চমক। কারণ লেখা আছে “ইঁহা আই-ফাই হ্যায়”। তারপর টয়লেট থেকে ফ্রেশ হয়ে আসতে গিয়ে দ্বিতীয় চমক… কোনো টয়লেটেই ছিটকিনি নেই। Incredible India!!
নানা বাধাবিপত্তি সামলে রক্সৌল থেকে পোখরার দিকে রওনা হতে প্রায় বিকেল সাড়ে পাঁচটা। মন বেশ ফুরফুরে। হঠাৎ পেছনে বসা ‘দায়িত্বশীল ‘ব্যক্তির ফোনালাপ শুনে বিরাট এক ঝাঁকুনি। তিনি নাকি কোনো হোটেলেই টাকা পাঠাননি, তাই কোথাও আমাদের ঘর বুকিং নেই। বিস্ময়ে আমাদের চোখ কপালে। টাকা নিয়ে তবে কি করেছেন ? তখন রাত প্রায় ৮ টা এবং আমরা ভাবছি ফেওয়া লেকের পাড়ে থাকাটা কি নিরাপদ?
অতঃপর গাড়ি চালকের মঞ্চে প্রবেশ ও প্রভূত ‘হুনছ, ছই না, রুম ভয়ো? ‘…ইত্যাদির পর রাত ১১ টায় একটি হোটেলে একটি ঘর পাওয়া গেলো।নিঝুম পোখরায় ঢুকলাম রাত১টায়। বৃদ্ধ মানুষ দুজনকে ঘরে থাকতে বলে আমরা দুই বোনে কিচেন লাগোয়া ড্রাইভার এর ঘরে থাকতে গেলাম। ‘দায়িত্বশীল’ নির্বিকার পর্যবেক্ষক এর ভুমিকা নিলেন ।
পরদিন পাহাড় -ডাকা ভোরে উঠেই ছুট হোটেলের টঙের ছাদে। মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো রূপ নিয়ে মচ্ছপুছারেতে ভোর হচ্ছে। ওই টঙে বসে মচ্ছপুছারে কে সঙ্গে নিয়েই চা খেতে খেতে শুরু করলাম এক নতুন দিন। এরপর পোখরা দর্শন পর্ব।পয়েণ্ট দেখার চাপ নেওয়া আমার ধাতে নেই। বাকীরাও সহমত। দুটি স্থান যাবো ঠিক হোলো, বৌদ্ধ শান্তি স্তুপ আর ফেওয়া লেক।প্রথমটিতে অনেক সিঁড়ি ভেঙ্গে, হাঁটুর সাথে ঝগড়া করে উঠে মন খুশিতে উজ্জ্বল । উপর থেকে দেখা পোখরা শহর, ফেওয়া লেক কিছুতেই মিস করা উচিত হোতো না।দুপুরের অলস মেঘের আবরণে মচ্ছপুছারের সে আবার অন্য রূপ তখন। বেশ কিছুটা সময় ওখানে কাটিয়ে নীচে নেমে এবার চলা পোখরার মূল আকর্ষণ ফেওয়া লেকে সূর্যাস্ত দেখার জন্য।
লেকের পারে পৌঁছে যেখানে নেপালী সেনারা ব্যারিকেড করে রেখেছে, ছবি তোলার জন্য সেই জায়গাটি বড়ই পছন্দ হোলো। তাদের হাতে লম্বা লম্বা রাইফেল বা বন্দুক দেখেও ওই জায়গার টান রোখা সম্ভব নয়। তারা ব্যক্তিত্ব মাখিয়ে না করাতে আমি “কেয়া করে বাবু গরীব আদমী “টাইপের মুখ করে যেভাবে ট্রেনে চারজনের সিটের ফোর্থ প্যাসেঞ্জার বাকিদের একটু ঠেলে সেঁধিয়ে যায়, সেভাবে প্রথমে একপা, তারপর মাথা, তারপর কেল্লা ফতে ।
তখন মচ্ছপুছারে আর অন্নপূর্ণা পৃথিবীর সেরা রঙে রঙিন। এক পাগলপারা রূপের সামনে নির্বাক আমরা।
ঘনিয়ে এলো সন্ধ্যে।ফেওয়া লেক এক অজানা রহস্যময়ী সুন্দরী তখন।আগামীকাল যাত্রা স্বপ্নঊড়ানে করে জমসম। মন উতলা তার জন্য।
**********************************
Bohemian Enough
Shaunak Chakraborty
Traveler, Writer, Photographer
159 progressively irate reminders and two missed deadlines later, my editor threatened to eat me alive if I failed to cobble something together by the end of the month. As interesting as it might sound, ending up inside a vegetarian is not how aspire to depart this world and therefore, I set to casting about for something that would be ‘Bohemian’ enough for this magazine. Deciding the degree to which I have succeeded, dear reader, I leave up to you.
I read in a delightful book a few days ago how particles of inspiration continually zip through the universe- and how, by quirks of statistics, they make contact with susceptible minds. The results? Revelations through the fog of half-sleep about the benzene ring being a carbonaceous hexagon, the X-ray plate revealing the truth about a double helix, or the realization that there must exist an all-pervading force of attraction between any two objects possessing mass (the legend goes that this particular particle was rather red, and quite tangible). Most are never hit, the book says, while a blessed few are hit only once or twice in their entire lifetimes‒ and they go on to change the world. What it does not say, is that there also a third category‒ comprising those weird particle magnets who, by some mystifying statistical bias, seem to get them all. The results are invariably spectacular and often achieved by the most unconventional means. If I asked a regular person- with no particulate baggage- to copy this picture of a Welsh dragon, they would probably do a Ctrl+C and Ctrl+V.
The more old-fashioned would perhaps take a stab at it with pencil and paper. But those who are reeling from the effects of about 50 reckless particles splashing about in their brains? Stationery is too mainstream for them‒ so they plot a 45 km route on the map in the shape of a dragon, and go for a run.
How does one draw something by running, you ask? The answer is Strava. Coined from the Swedish for ‘Strive’, it is social network for the athletically inclined. It can use data from your devices‒ be it a GPS-enabled smartphone or a state-of-the-art sports watch‒ to enable on-point analyses of your physical activities and provides an excellent platform for showing off your personal records (PRs) to fellow athletes. And the best part is, it charts out on the map what route you took on your run or ride by using GPS data from your device. I guess it was only a matter of time before people with particle infestations had the bright idea of turning their rides and runs into GPS art. Here are a few of my personal favorites:
Hard to believe it, but these were created by three different people, doing what they love best- riding their bicycles. That’s some serious particle bombardment right there.
I myself have been guilty of trying my hand (or should I say legs?) at Strava art a couple of times. My results were not nearly as spectacular, but I did ride a route resembling the Sphinx and another resembling a lobster’s claw a few times.
As for my next attempt, I want to ride a route- in a couple of weeks- that looks a bit like the head of a dog. Wish me luck!
159 progressively irate reminders and two missed deadlines later, my editor threatened to eat me alive if I failed to cobble something together by the end of the month. As interesting as it might sound, ending up inside a vegetarian is not how aspire to depart this world and therefore, I set to casting about for something that would be ‘Bohemian’ enough for this magazine. Deciding the degree to which I have succeeded, dear reader, I leave up to you.
I read in a delightful book a few days ago how particles of inspiration continually zip through the universe- and how, by quirks of statistics, they make contact with susceptible minds. The results? Revelations through the fog of half-sleep about the benzene ring being a carbonaceous hexagon, the X-ray plate revealing the truth about a double helix, or the realization that there must exist an all-pervading force of attraction between any two objects possessing mass (the legend goes that this particular particle was rather red, and quite tangible). Most are never hit, the book says, while a blessed few are hit only once or twice in their entire lifetimes‒ and they go on to change the world. What it does not say, is that there also a third category‒ comprising those weird particle magnets who, by some mystifying statistical bias, seem to get them all. The results are invariably spectacular and often achieved by the most unconventional means. If I asked a regular person- with no particulate baggage- to copy this picture of a Welsh dragon, they would probably do a Ctrl+C and Ctrl+V.
**********************************