Bohemian Travelogue Issue: March – April || 2022

Table of Content

সম্পাদকের কলমে

শ্রীধর ব্যানার্জী

প্রখর গ্রীষ্ম। নিদারুণ দাবদাহে দগ্ধ মাটি, তপ্ত বাতাস, রিক্ত জলাশয়। মানুষও বেশ কাহিল। তবে এতে নতুন কিছু নেই। গ্রীষ্মকালে এমনটাই দস্তুর। ধ্রুপদী সাহিত্যে তাই গ্রীষ্মকে বলা হয়েছে নিদাঘ – নিতান্ত দগ্ধ হয় যে সময়। যেটা স্বাভাবিক নয় সেটা হল বৃষ্টিশূন্য চৈত্র। কালবৈশাখী-বিহীন বৈশাখ। অস্বাভাবিক হল বছর-বছর, মাসে-মাসে ঘূর্ণিঝড়। আসলে স্কুলপাঠ্য ‘বিশ্বউষ্ণায়ন’ যে দেড়দশকের মধ্যেই বইয়ের পাতা থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবের দুনিয়ায় এসে এমন ভীষণ চোখ রাঙাবে তা আমরা আন্দাজ করিনি। সত্যি বলতে আন্দাজ করতে চাইনি। গ্লোবাল ওয়ার্মিং জনিত জলবায়ুর পরিবর্তন, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা আজ জ্বলন্ত সুর্যের মতই দৃশ্যমান। এই একটি ছাড়া যে ঘর নেই – এই সহজ সত্যিটা ৮০০ কোটি গ্রহবাসী আজ অবধি বুঝে উঠতে পারল না। আর এখানেই আমাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যারা পাহাড়-প্রকৃতি-জল-জঙ্গলকে ভালোবাসি, তার কি এই সংকটমোচনে কিছু করতে পারি না? তা সে যত তুচ্ছই হোক না কেন।

বোহেমিয়ান ট্রাভেলগের এই গ্রীষ্ম সংখ্যাতে আমরা স্মরণ করছি গ্রীক পর্বতারোহী অ্যান্টনিওস সাইকারিসকে। তিনি তাঁর ৫৯ বছরের জীবনে মাউন্ট এভারেস্ট সহ মোট পাঁচটি আট-হাজারি শৃঙ্গ জয় করেছিলেন। তারমধ্যে গত ১১-ই এপ্রিল জয় করেন পৃথিবীর সপ্তম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ধৌলাগিরি। তাঁর এই জয় তিনি উৎসর্গ করেন নাতনি আইরিশের উদ্দেশে। দুর্ভাগ্যক্রমে ধৌলাগিরি থেকে অবতরণের সময় গত ১২-এপ্রিল ৭৪০০ মিটার উচ্চতায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই প্রাণ হারান। তাঁর সৌন্দর্যপিপাসু হৃদয়টি হিমালয়ের বুকে চিরশান্তি লাভ করুক এই প্রার্থনা করি।

বোহেমিয়ান ট্রাভেলগের এই সংখ্যায় থাকছে চারটি লেখা। লোপামুদ্রা বর্মণ এবার শুনিয়েছেন কেদারক্ষেত্রে অবস্থিত চোরাবারি তালের গল্প। সুদূর জার্মানি থেকে অপূর্ব রায় লিখেছেন ছোট্ট গ্রাম স্মিটেনের কথা। গতসংখ্যায় শুরু হয়েছে পাপু ধীবরের কলমে নতুন ধারাবাহিক Rajasthan: A Historical and Cultural Heritage. তার দ্বিতীয় পর্বে থাকছে নীলচে শহর যোধপুরের কাহিনী। শেষপাতে থাকছে বোহেমিয়ান ট্রাভেলগের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সৌম্য চ্যাটার্জীর কলমে পাখিদের গল্প।

সকলে সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন, এই প্রার্থনা।

**********************************

পায়ে পায়ে চোরাবারির অঙ্গনে

লোপামুদ্রা বর্মন

Traveler, Writer, Photographer 

জীবনের মধ্যভাগে দায়ে দায়িত্বে, কর্তব্যের বাধ্যবাধকতায় মানুষ আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। সব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার অলীক এক স্বপ্ন থাকে। সব সম্পর্কগুলো নিজেদের হিসাব বুঝে নিতে চায়। এই-ই নাকি পৃথিবীর বিধান। এই নামানুষিক হাঁকাহাঁকি টানাটানির মাঝে এক বিমূর্ত টান অনুভব ছুঁয়ে যায়। সংসারের যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরের সেই টান অদৃশ্য কিন্তু অমোঘ। কেদারনাথ যাবো। কোথায় এই কেদারনাথ? নাকি উত্তরাঞ্চলে। সে কতদূর, কিভাবে যেতে হয়? খরচই বা কত? সব প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া গেলো। সাংসারিক বাঁধন কিভাবে যেন একটু ঢিলে করে, পুরো পরিবার একদিন দুর্গা দুর্গা বলে দুন এক্সপ্রেসে চড়ে বসলাম।

হরিদ্বার পৌঁছে বাকি ব্যবস্থা সম্পন্ন করে কেদারক্ষেত্র অভিমুখে যাত্রা করলাম। প্রায় সন্ধ্যাকাল শেষে, অন্ধকার মিশমিশে হয়েছে যখন, নামলাম গিয়ে গৌরিকুণ্ডে। স্বর্গের নদী মন্দাকিনীর গর্জনে কান পাতা দায়। ঘুমন্ত ঢুলন্ত দুই নাবালক, আর দুটো ঢাউস ব্যাগ নিয়ে আমরা দুই সাবালক প্রাণী, আলো-আঁধারী সরু গলিপথ পেরিয়ে ভারত সেবাশ্রমে পৌঁছলাম।

শেষ অক্টোবরের কেদারখণ্ডের ঠান্ডা যে হাড়ে ফুঁ দেয়, জানা ছিল না। ঘর পেলাম একটা। স্যাঁতস্যাঁতে নিচু ছাদের ঘর। বাথরুমে গরমজল ছিল কি ছিল না, আজ আর মনে পড়ে না, শুধু  সেই দানব ঠান্ডার কথা ভুলতে পারিনি আজও। ভোরে উঠে ঘোড়ার খোঁজে বেরোলাম। ভিজে ভিজে চড়াই পথ। প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে ঘোড়াদের পাড়ায়  পৌঁছলাম। একটা ঘোড়ায় আমি আর ছোট ছেলে। বড়ো ছেলে আর তার বাবা  হেঁটে আসবে।

এটা সেই সময়ের কথা বলছি যখন কেদারনাথ পর্যটন কেন্দ্র হয়ে যায় নি। তীর্থ বলেই বিবেচিত ছিল। পদযাত্রায় কষ্টটুকু তীর্থদর্শনের অংশ ছিল। এবড়ো খেবড়ো পাথুরে পাহাড়ি পথ। মাঝে মাঝেই  ঝরনার জল অনেক উঁচু থেকে ঝরে পড়ছে। একদিকে পাহাড় খাড়াই আর একদিকে খাদ অতলান্ত। উঁকি দিতেও ভয় হয়। ঘোড়া শুদ্ধ মানুষের খাদে পড়ে যাওয়ার খবর মাঝে মাঝেই শুনতে পাওয়া যায়। পথ এতই সংকীর্ণ যে দূর থেকে ঘোড়া দেখতে পেলেই মানুষকে আগেভাগেই নিজের নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে হয়। ঘোড়ার দৌলতে রামওয়াড়া পৌঁছে গেছি। একটা ছোট ঝুপড়ি মতো ছিল। চা পাওয়া যেত। আর আলুর পরোটা। আর হ্যাঁ, সভ্যতাও গুটিগুটি পায়ে পাহাড় চড়ছে। বোতলবন্দী ঠান্ডা পানীয়রা পিপাসার্ত মানুষজনের অপেক্ষা করছে হাসিমুখে। পথের রঙিন পাথর কুড়িয়ে পকেট ভারী করে বাবার সাথে বড়ছেলেও এসে পৌঁছলো, একটু দেরি করে। একমুখ হাসি নিয়ে পকেট থেকে পাথরগুলো আমার সামনে মেলে ধরে। ওর হাত থেকে পাথর গুলো নিয়ে নিজের কাছে রাখি। বাকি পথের পাথর কুড়োতে যাতে অসুবিধা না হয়। আলু পরটা আচার দিয়ে খেয়ে আবার পথে নামি। এই রামওয়াড়া চটি থেকে দেবদেখনী পর্যন্ত দমফাটা চড়াই। নিচের  থেকে এঁকে বেঁকে আকাশ পানে উঠে যাওয়া পথটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। দুচারজন অবাঙালী তীর্থযাত্রী নেমে চলেছেন নিচের দিকে। জয় কেদার ধ্বনিতে ভরে গেল চারপাশ। পাকদন্ডী পথ ঘুরে যেতেই আবার সব চুপচাপ। ঘোড়া চড়াই ভাঙছে। চারপাশটা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। একদম অপরিচিত এক পৃথিবী যেন। চারদিকের উঁচু উঁচু পাহাড়েরা জঙ্গলকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে, অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে। সলজ্জ গোপনীয়তা। মনের ভিতর কি যেন এক ভাবনা এলো, বোধহয় একটু অন্যমনস্ক হয়েছিলাম। হঠাৎ একটা অদ্ভুত শব্দ হলো আর ঘোড়াটা একটা ছোট লাফ দিয়ে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। তাকিয়ে দেখি, ঘোড়াওয়ালা ঘোড়ার পায়ের কাছে মাটির দিকে কি যেন একটা দেখছে। ‘বিলকুল নেহি হিলনা দিদি, খতরনাক ‘। জিজ্ঞাসা করি, কি হয়েছে। ‘নাগ হ্যায় ঘোড়ে কে নিচে।’ তিনচার মিনিট পর সাপটা ফনা তুলেই ধীরে ধীরে নেমে গেল ডানদিকের খাদের জঙ্গলে।

ঘোড়াওয়ালা বলে, ‘আজিব বাত,  এয়সা কভি নেহি দেখা, ইস ঘাটি মে।’ ঘোড়া আবার চলতে শুরু করে। অচেনা সৌন্দর্য মনকে বেশ হালকা করে দিয়েছে। সামনের দিকে কেদারনাথ শৃঙ্গটি বেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দেবদেখনী পৌঁছে গেছি। আর বেশি পথ বাকি নেই। প্রায় সমান সমান পথ। ঘোড়াটা গতি বাড়িয়েছে। ও বুঝতে পেরেছে ওরও কাজ শেষ হয়ে এসেছে। আর একটু পরেই ওর অবসর মিলবে। এইসব ভাবাভাবির মধ্যেই পৌঁছলাম। ঘোড়ার থেকে নেমে পায়ে পায়ে মন্দাকিনী নদীর সাঁকো। মন বলছে স্বর্গে এসেছি। ঠিকই তো, মন্দাকিনী তো স্বর্গেরই নদী। এই সাঁকো পেরিয়ে সিঁড়িপথ মন্দিরে যাওয়ার জন্য। পা বাড়িয়েছি, ব্যাগের ভিতর কে যেন কাঁদে, খুলে দেখি ক্যামেরাটা! বলে আমিও দেখবো, কি আর করা, অগত্যা। ছবি তুললাম, রীলে ছত্রিশটার কথা মাথায় রেখে। জীবনে প্রথমবার স্বর্গের ছবি তুললাম। একটু পরই বাবা, ছেলে চলে এলো। একসাথে আমরা উঠে এলাম মন্দিরের সামনে। আর কটা সিঁড়ি উঠলেই মন্দির। সেদিকে না গিয়ে আমরা বাঁ দিকের রাস্তা ধরে চলে এলাম ভারত সেবাশ্রমে। রাস্তা থেকে সিঁড়ি নিচের দিকে নেমে গেছে। সামনের উঠোনে বসে আছেন এক সৌম্যদর্শন সন্ন্যাসী। প্রণাম করি। রাত্রিযাপনের অনুমতিপত্র সঙ্গেই ছিল। কাউকে ডাকলেন। আমাদের ইশারায় তার সাথে যেতে বললেন। ঘরে গিয়ে তৈরি হয়ে নিয়ে বেরোলাম। মন্দির চত্বরে উঠে এলাম। চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। ছবিও তুলেছিলাম। পিছন দিকটায় গিয়ে দাঁড়াতেই একটা পর্দা উঠে গেল যেন। মন্দিরের নিচে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছতোয়া সরস্বতী গঙ্গা। আর ওপারেই মোরেন অঞ্চল ওপরের দিকে উঠে গিয়ে মিলিয়ে গেছে  হিমাঙ্গনের কোলে। ধ্যান গম্ভীর কেদারনাথ শৃঙ্গ সপারিষদ দাঁড়িয়ে আছেন। বিকেলের সূর্যের আলো তাঁদের  ঝলমলে উজ্জ্বল রাজবেশ বদলিয়ে সন্ন্যাসীর গেরুয়া উত্তরীয়  জড়িয়ে দিচ্ছেন গায়ে। বাঁদিকে মোরেন অঞ্চলটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে বেশ। ওই মোরেন অঞ্চলের পিছনেই চোরাবারি তাল, চোরাবারি হিমবাহের হ্রদ। সেই মোরেনের নিচে দিয়েই অন্তসলিলা মন্দাকিনী নেমে আসছেন কেদারক্ষেত্রে। আবার ডান দিকে তাকিয়ে দেখি আলো আরো কমে এসেছে। কিছু হালকা সাদা মেঘ শৃঙ্গরাজির মুখে গলায় জড়িয়ে আছে। মুখ যেন পাকা শশ্রু গুম্ফে ঢাকা, এতে করে হিমালয়ের ঋষিরূপটি বেশ পরিষ্কার ফুটে উঠেছে।

ঘন্টা বাজছে মন্দিরে। গিয়ে দেখি মন্দিরের দেবতা রাজবেশ ধারণ করেছেন। মাথায় রৌপ্যছত্র, সারা শরীরে আরও কত কি আভরণ। আরতি শুরু হলো। গুরুগম্ভীর মন্ত্র আর ঘণ্টাধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠলো পরিমণ্ডল। সেই সময়ে আমার মনের অন্তরতম দুয়ারটা খুলে কে যেন চৌকাঠটা পেরিয়ে বাইরে এসেছিলেন আর ক্ষনিকের জন্য আমি তাঁর দর্শন পেয়েছিলাম। আরতির শেষে গর্ভগৃহ থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছিলাম। পিছনে বিরাট দরজাটা বন্ধ হয়ে গিয়ে ছিল। উপত্যকার সব শব্দরা ঘুমিয়ে পড়েছিল। শুধু অন্ধকার আকাশ থেকে কালপুরুষের কুকুরটা একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।

আশ্রমে ফিরে দেখি, দরজায় হাসিমুখে মহারাজ। দিব্যপুরুষ, তপস্যার উজ্জ্বলচিহ্ন সারা অবয়বে। কথা বলেন ভাববাচ্যে। ‘কাল তাহলে ফিরে যাওয়া হবে?’ ‘না মহারাজ,’ আমি বলি, ‘কাল একটু চোরাবারি তাল যাবো’। ‘এটা আবার কোথা থেকে শিখে আসা হলো শুনি, পথ ভালো নয়। ওই পথে না যাওয়াই ভালো ছোট ছেলেপুলে নিয়ে।’ কাকুতি মিনতি করলাম। তিনি দুদিকে মাথা নেড়ে ঘরে চলে গেলেন। রাতে ঘরে তিনটে গরম জলের ব্যাগ এসে পৌঁছলো। শুনলাম মহারাজ পাঠিয়েছেন। ঠান্ডায় দুই ছেলেই কাবু হয়ে পড়েছিল। সর্বত্যাগী মহারাজের দূরদর্শিতা দেখে শ্রদ্ধায় মাথা নুইয়ে এলো। গরমের আরামে আমরা সেদিন শান্তিতে ঘুমিয়েছিলাম।

দরজায় ঠক ঠক। ঘড়িতে ছটা বাজে। দরজা খুলি। ‘ম্যাডামজি নমস্তে, ম্যায় নেগী হুঁ। মহারাজ্ জি নে এত্তেলা ভেজা। আপ লোগ তৈয়ার হো যাইয়ে। চোরাবারি তাল চলতে হ্যায়।’ তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিলাম। দরজায় আবার ঠকঠক। এক আশ্রম বাসী। মহারাজ বাচ্ছাদের দেখতে চেয়েছেন। বাচ্ছাদের মহারাজের কাছে পাঠিয়ে আমরাও মহারাজের কাছে গেলাম। আমাদের যেন চিনতেই পারলেন না। নেগীর দিকে  তাকিয়ে বললেন, ‘ছেলেদের আমার কাছ থেকে নিয়ে যাচ্ছ, আমার হাতে ফেরত দেবে।’ মহারাজকে প্রণাম করে বেরিয়ে পড়লাম। সামনে নেগী চলেছে ছোট ছেলেকে কোলে নিয়ে, বড়োর হাত ধরে বাবা আর একদম শেষে আমি। সেতু পেরিয়ে নদীর বাঁদিকে চলে এসে চড়াই পথ ধরলাম। মাটির পায়ে চলা পাকদন্ডী পথ। তিনচার পাকেই অনেকটা উঠে এসেছি। অনেক নীচে দেখা যাচ্ছে কেদারক্ষেত্রের ঘর বাড়ি খেলনার মতো।

একটা মোরেন অঞ্চলের ওপর দিয়ে চলেছি। পথের চড়াই কমে এসেছে। প্রায় সমান সমান। অনেকটা বেশ কষ্টকর পথে হেঁটে চোরাবারি তালের মুখোমুখি। পিছনেই ভ্রাতৃকুণ্ঠা শৃঙ্গ। তালের স্থির জলে তার প্রতিবিম্ব।

চারপাশ নিঃঝুম, নিস্তব্ধ। ক্যামেরায় গুনেগুনে দশটা ছবি তুললাম। হ্যাঁ, ঠিক এইভাবেই হিসেব করে ছবি তুলতাম তখন। আর এইটুকু করতে করতেই সময়ের মেয়াদ ফুরিয়ে এসে ছিল। বেলা প্রায় তিনটে। বাজে। ফিরতে হবে। কানের পাশে ফিস ফিস, আবার এস। না তাকে দেখতে পাইনি। শুধু তালের জলে কাঁপন জেগেছিল আর ভ্রাতৃকুণ্ঠা শিখরের ছবিটা হেসে গলে গিয়েছিল।

একই পথে ফিরে চলা। দুটো বড় ঝর্ণা পেরিয়েছিলাম। দুধগঙ্গা আর মধুগঙ্গা। জল পড়ে পড়ে ঝর্ণাগুলোর বয়ে যাওয়ার পথের পাথর নুড়িগুলো পিছল হয়ে আছে সাংঘাতিক। ডান দিকে খাদ অতল। বিন্দুমাত্র অসাবধানতা বড়ো বিপদ ডেকে নিয়ে আসতে পারে।

নেগী, ছেলেদের তো বটেই আমাদেরও প্রায় পিঠে করে পার করে ছিলো সেই বিপদজনক রাস্তাটুকু। পাহাড়ের ঢাল জুড়ে ভৃঙ্গরাজ ফুল ফুটে আছে। মাঝে মাঝে পথ এতই সরু যে একটা পা রাখতেও অসুবিধা হচ্ছে। নেমে চলেছি। দূর থেকে কেদারনাথ মন্দিরের চূড়া দেখা যাচ্ছে। অবশেষে বিকেল পাঁচটার সময় ভারত সেবাশ্রমের দরজায় পৌঁছলাম।

সিঁড়ির ওপরেই বসে পড়েছিলাম। জিনিসপত্রের জাল থেকে মুক্ত করে দেখি মহারাজ নেগীর কোল থেকে ছোট ছেলেকে নিজের কোলে নিয়ে বড় ছেলের হাত ধরে গতকালের সেই নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে বসলেন। দুই শিশুর সাথে মহারাজও যেন আরেক শিশু। এমন আনন্দ দৃশ্য সেদিন দেখেছিলাম। লিখতে বসে আমার স্মৃতিকে আজও পুলকিত করে তুলল। আমাদের দুপুরের খাবার রাখা ছিল। খেয়ে এসে দেখি তিন শিশু মিলে তাদের ফলাহার সম্পন্ন করেছে। আমাদের দেখে মহারাজ কেমন গম্ভীর হয়ে উঠলেন। ছোটকে কোলে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তারপর দাদু, তুমি ওপরে গিয়ে কি দেখলে?’ কানে ভেসে এলো কলকল উত্তর ‘কিছু না দাদু, কিছু নেই ওপরে, একটা পুকুর আছে আর অনেকটা ঘোড়ার হাগু’। মহারাজ যেন বেশ আনন্দ পেলেন মনে হলো। গম্ভীরমুখে বললেন, ‘তাও কি তোমার মা আমার কথা শুনলো’! আমি সত্যিই লজ্জা পেলাম।

ভৈরব শিলাদর্শন করলাম। মন্দিরের ডানদিক দিয়ে পথ। বেশি নয় পাঁচশো মিটার মতো। একটা পাথরের চাতাল। তার ওপরে পরপর বড় বড় চোখ, গোঁফ আঁকা পাথরে খোদাই মূর্তি। সিন্দুরমাখা। ভৈরব মানে ক্ষেত্রপাল। কেদার উপত্যকার রক্ষক। সন্ধ্যা নামার মুখে নেমে এলাম। আজ দেখলাম ভারত সেবাশ্রমের আরতি। এই কথাটা না বললে এই লেখা অসম্পূর্ণ। মন্দির মধ্যে বিরাট পুরুষ শ্রীপ্রনবানন্দ মহারাজের বিরাট ছবি। মাথার ওপর চাঁদোয়া। সামনে পুষ্প, অর্ঘ্য রাখা। আর একজোড়া কাঠের পাদুকা। পাদ্য অর্ঘ্য এই পাদুকাতেই সমর্পন করা হয়। ধুপ দীপ জ্বালানো হলো। খেয়াল করলাম ছবিতে ব্রহ্মকমলের মালা। পুস্পপত্র, শঙ্খ, চামর প্রভৃতি দিয়ে আরতি শুরু হলো। ঢাক কাঁসর ধ্বনি সহযোগে। আরতির ঢাকের আওয়াজ ধীরে ধীরে  কেমন যেন যুদ্ধের বাজনায় পরিণত হলো। শব্দটা গিয়ে মনের সিংহদরজায় আছড়ে পড়লো। আর ঠিক সেই সময় মহারাজের হাতের আরতিরত ধাতব অস্ত্রের ফলাটা প্রদীপের আলোয় ঝিলিক দিয়ে উঠলো। মনে হচ্ছে সেই অস্ত্রের আঘাতে শরীর থেকে মন, মন থেকে প্রাণ আলাদা হয়ে যাচ্ছে। ষড়রিপু টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। এক সৎ চিৎ আনন্দ অনুভূতি গ্রাস করে ফেলছে চেতনাকে। কে আমি, কোথা থেকে এসেছি, কেন এসেছি এই পৃথিবীতে, এই প্রশ্নগুলো স্পষ্ট ফুটে উঠছে মনের দেওয়ালে। কেদারেশ্বর মন্দিরে মন পুলকিত হয়ে উঠেছিল। আজ আলোকিত হয়ে উঠেছে আমার সমগ্র স্বত্ত্বা। ঢাকের শব্দ আবার আরতির বোলে ফিরে এলো। বীররসের আরতির মধ্যে দিয়ে সেই বিরাট পুরুষের শয়ন দিলেন মহারাজ। হাতে দিলেন আশীর্বাদী ফুল। আমার স্বত্ত্বার পরিবর্তন হচ্ছে। যে আমি এসেছিলাম আর আজকের আমি এক নই তা স্পষ্ট বুঝতে পারছি।

কেদারনাথ দর্শন হয়েছে। আজ নেমে যাবো গৌরিকুণ্ডে। মহারাজের আশীর্বাদ নিলাম। সারা শরীরে সাধনার উজ্জ্বলতা। চোখের দিকে তাকানো যায় না, এমনই উজ্জ্বল। ‘আমার জন্য কি চাওয়া হলো শুনি মন্দিরে?’ অপ্রস্তুত হলাম আবার। মাথা নীচু করে বললাম, মহারাজ…’জানি আমার কথা তো মনেই ছিল না। আমার যেন কেদারক্ষেত্রেই শরীর ত্যাগ হয়, এই প্রার্থনাটুকু করে গেলে ভালো হয়।’ আমার চোখের জল আর বাধা মানলো না। অশীতিপর এই মানুষটি, আমার মতো এক সাধারণ মানুষকে অহৈতুকি কৃপা করে এই তীর্থে আসা সার্থক করে দিলেন আর এ কি বলছেন! না না, এ আমি কিছুতেই চাইতে পারবো না। তিনি মৃদু হাসলেন। আশীর্বাদ করেন। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, ‘আপনি এখানেই থাকবেন। আমি আবার আসবো। শুধু চোখ দিয়ে যে আশীর্বাদ করা যায় তা আমি জীবনে প্রথমবার অনুভব করলাম। আজও তা ঘিরে আছে আমায় বিভূতির মতো।

**********************************

স্মিটেন আড্ডা

অপূর্ব রায়

গবেষক, জার্মান এরোস্পেস সেন্টার (DLR), জার্মানি

বাড়ির ভিতরে বসে দেখা দৃশ্য

সকালের ঘুম ভাঙতেই প্রতিদিনের মতোই বালিশের পাশে রাখা মোবাইলটা হাতে তুলে নিয়ে ফেসবুকটা অন করলাম। একটাই খবর শুধু এখন ফেসবুকে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। কিছুক্ষন ফেসবুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে মনে পড়ল – আরে! আজ তো শুক্রবার, ২৫ শে ফেব্রুয়ারী, আজই আমাদের পূর্ব পরিকল্পিত বেড়াতে যাওয়ার দিন। ইতিমধ্যেই জার্মানির বিভিন্ন শহরে কার্নিভাল সপ্তাহ শুরু হয়ে গিয়েছে। রঙিন পোশাক, রকমারি খাবার, আর কার্নিভালের আনন্দে জার্মানির মানুষ মেতে উঠেছেন। আমরা এখানে বিদেশী, তবুও  যে কোনো উৎসবে মেতে উঠতে আমাদের কোনো সময় লাগে না। বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি কিনা। সত্যি বলতে আমি কিন্তু তখন এটুকুও জানতাম না যে আমরা যাচ্ছি কোথায়! অর্পণদা শুধু বলেছিল যে এই সপ্তাহ শেষে ঘুরতে যাচ্ছি। আমি কোথায় যাচ্ছি তার সম্পূর্ণ তথ্য জানার প্রয়োজনও মনে করিনি। ঘুরতে যাচ্ছি এটাই বড় কথা। অর্পণদা ও তার পরিবার কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন ধরে এই কোলন ( Köln/ Cologne) শহরের বাসিন্দা, এবং সৌভাগ্যবশত আমার প্রতিবেশী। মানে এককথায় পাড়ার লোক। এক শুভাকাঙ্খীর দৌলতে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে অর্পণদার সাথে আগে যোগাযোগ ঘটলেও, জার্মানি আসার পরই আমাদের ঠিকঠিক পরিচয়। প্রথম দিন থেকেই অর্পণদা ও তার পরিবারের স্নেহ-ভালোবাসার দৌলতে আমার বিদেশের মাটিতে শিকড় জমাতে কোনো অসুবিধা হয় নি। এখানে অনেকেই মজার ছলে আমাকে অর্পণদা ও বৌদির বড় ছেলে বলে উল্লেখ করে।

যাইহোক, ঘড়ির কাঁটা তার আপন মনে এগিয়ে চলেছে। তাড়াহুড়ো করে, বিছানা ছেড়ে সকালের নিত্যকর্ম সেরে গরম কফি আর বিস্কুট নিয়ে কম্পিউটারের সামনে। সকাল ৯টায় অফিস মিটিং। আজ সারাদিন অনেকগুলো মিটিং। মিটিং চলার সঙ্গে সঙ্গেই হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট চলতে থাকে। প্ল্যান হয় অর্পণদার বাড়িতে মিলিত হয়ে সবাই একসাথে বেরোব। আমার একটা মিটিং শেষ হতেই আধ ঘন্টার মধ্যে স্নান করে, খাবার খেয়ে, জামা কাপড় পরে পুরোপুরি রেডি হয়েই পরের মিটিং-এ যোগ দিই।  এরমধ্যেই জানতে পারি অর্কদা ও পায়েলদি

চোখের সামনে গ্রাম স্মিটেন (Schmitten)

 সুদূর মুনচেন  (München) থেকে গাড়ি চালিয়ে এখানে পৌঁছে গিয়েছে। শুনেছিলাম  কোনো এক কাজে তাদের বাড়ি ডুসেলডর্ফ (Düsseldorf) থেকে ওখানে যেতে হয়েছিলো । দুপুর ২ টো নাগাদ আমাদের সবার বেরিয়ে পরার কথা। আমার অফিস থাকার জন্য, তাৎক্ষণিক প্ল্যান পরিবর্তন করে, সায়ন্তন ও অনন্যা (স্বামী – স্ত্রী) আমাকে তাদের ভ্রমণসঙ্গী করে নিতে আমার বাড়ির সামনে যথা সময়ে তাদের গাড়ি নিয়ে হাজির হয়ে যায়। আমি ও কয়েক মিনিটের বিরতি রেখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সায়ন্তনদের সঙ্গী হয়ে যাত্রা শুরু করি। নিতান্ত বাধ্য হয়ে চলন্ত গাড়িতেও মোবাইলের মাধ্যমে আমাকে মিটিং চালিয়ে যেতে হয় কিছুক্ষণ। মিটিং মিটতে পুরোদস্তুর মন ঢেলে দিলাম ভ্রমণে। সায়ন্তন ও অনন্যা আমার প্রায় সমবয়সী। সায়ন্তন আমার মতই গবেষক। কাজেই আমাদের মধ্যে কোথাও যেন সুরটা মিলেই যায়। সায়ন্তন-অনন্যা আখেনের (Aachen) বাসিন্দা । নানারকম গল্প, গাড়ির মধ্যে চলতে থাকা গান, রাস্তার দুধারে বিপরীতমুখী ছুটে চলা কমবেশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবকিছু মিলেমিশে আমরা এগিয়ে চলি আমাদের গন্তব্যের দিকে। মাঝে মাঝে শুধু গাড়িতে থাকা আধুনিক প্রযুক্তির নেভিগেটর এর দিকে তাকিয়ে দূরত্ব আর সময় কমাতে থাকি। প্রায় আড়াই – তিন ঘন্টার পথ পেরিয়ে আমরা পৌঁছে যাই আমাদের গন্তব্যে। কোলন থেকে প্রায় ১৪৪ কিমি আর ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দর থেকে মাত্র ৪৫ কিমি দূরে অবস্থিত ছোট্ট একটা গ্রাম স্মিটেন (Schmitten)। পাহাড়ের উপরে চারিদিক পাহাড়ে ঘেরা অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ গ্রাম। গ্রামে প্রবেশের আগেই রাস্তার ধারে দুপাশে পড়ে থাকা বরফের স্তুপ দেখেই কিছু একটা পাওয়ার আশায় মন নেচে ওঠে। মাথার উপর একটু একটু করে ঘনীভূত হতে থাকা সন্ধ্যার অন্ধকারের সঙ্গে কালো মেঘ যেন রহস্যময়তায় আচ্ছন্ন করব। গ্রামকে পিছনে ফেলে, বেশ দক্ষতার সাথে সায়ন্তন নিজের গাড়িকে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে তুলতে থাকে।  পাহাড়ের ওপর এক বাড়ির সামনে এসে আমাদের যাত্রা শেষ। এই বাড়িই আমাদের আজকের আশ্রয়। গাড়ি থেকে নামতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক স্বপ্নের দেশ। এ যেন, না  চাইতেই অনেককিছু পাওয়ার আনন্দ। পুরো গ্রাম যেন আমার চোখের সামনে, প্রতিটা বাড়ি, প্রতিটা বাড়ির মানুষ যেন চোখের সামনে দাঁড়িয়ে। এই বাড়িটাই যেন এই গ্রামের সবচেয়ে উপরে রয়েছে আর এটাকেই গ্রামের শেষ বাড়িও বলা যেতে পারে। বাড়ির সামনে নিকট দূরত্বে  পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে আছে দ্বাদশ শতাব্দীর ঐতিহাসিক মধ্যযুগীয় রেইফেনবার্গ দুর্গের ( Burg Reifenberg) ধ্বংসাবশেষ।  পড়াশোনা করে দেখেছি, দ্বাদশ শতাব্দী থেকে এই দুর্গটি ছিল লর্ডস অফ রেইফেনবার্গ – এর পৈতৃক সদর দপ্তর। সতেরোর শতকে তাদের পতনের পর ১৬৮৯ সালে দুর্গটি ধ্বংস হয়ে যায়।  পরে ভেঙেও ফেলা হয়। কিন্তু ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত এটি একটি ” কঠিন পর্বত বাড়ি” হিসাবে পরিচিত ছিল। শুধুমাত্র অন্যান্য দুর্গের ছোট অবশেষ, যেমন গোলাকার টাওয়ার বা তথাকথিত পাউডার চেম্বার, সংরক্ষিত করা হয়েছে। এই ধ্বংস হয়ে যাওয়া দুর্গ আজও একটি অনন্য ইতিহাসের দৃশ্য উপস্থাপন করে। এই ছোট্ট গ্রামের ও এই বাড়ির ডানদিক, বামদিকে রয়েছে ঘন জঙ্গলে ঢাকা উঁচু পাহাড় ও তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা শত বছরের ইতিহাস।  বাড়ির মেন দরজা খুলে অনেক অনেক খুশি আর আনন্দ নিয়ে বেরিয়ে আসেন বাড়ির কর্তা, আমাদের সকলের প্রিয় মানুষ বিজয়দা, সঙ্গে অর্পণদা। অন্য রাস্তা দিয়ে আসার জন্য অর্পণদা আগেই পৌঁছে যায় সেখানে। সকলে আমরা বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করি। কিন্তু মন যেন বাড়ির বাইরে দাড়িয়েই কনকনে শীতের মধ্যে এই অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চায়। কথায় বলে মানুষ তো প্রকৃতিরই অঙ্গ। মানুষের ইচ্ছে পূরণে প্রকৃতি সদা প্রাণবন্ত। স্মিটেনের পরিবেশ ও আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে তাদের দুহাত বাড়িয়েই উপস্থিত। পুষ্পবৃষ্টির মত তুষারপাত দিয়ে আমাদের সাদর আমন্ত্রণ জানতে থাকে। কিছক্ষনের মধ্যেই আমাদের আর এক সঙ্গী কিংশুকদা সপরিবারে পৌঁছে যায়। শুরু হয়ে যায় আমাদের আড্ডা ও কার্নিভালের উৎযাপন। বিজয়দা ও ওনার স্ত্রী কেয়াদি যেন পুরো বাড়ি সাজিয়ে আমাদের জন্যই অপেক্ষায় সময় গুনছিলেন। বিজয়দা ও কেয়াদিই ছিল আমাদের প্রকৃত গন্তব্য। এই বাঙালি পরিবার কর্মসূত্রেই জার্মানবাসী। দুজনেরই সরলতা, উদার মন, সদা হাসিমুখ ও সকলকে আপন করে নেওয়া ব্যবহারই যেন সকলকে জয় করে নেয়। হাসি ঠাট্টা, গল্প গান সব মিলিয়ে আড্ডা চলতে থাকে আর সঙ্গে চলে কাঁচের জানলা দরজা দিয়ে বাইরের পরিবেশকে উপভোগ করা। পরিবেশও যেন নতুন ভিন্নভাষী ছোট বড় মানুষদের পেয়ে ভীষণ খুশি, তুষারপাতের বেগ বাড়িয়ে আমাদের নাচ দেখাতে থাকে। সন্ধ্যে নামার সাথে সাথেই পুরো গ্রাম যেন বরফের সাদা চাদরে ঢাকা পড়ে নৈশভোজের আয়োজন করতে শুরু করে। নানা কথার মাঝে জানতে পারি এই গ্রামের বাসিন্দা প্রায় ১২০০ থেকে ১৩০০ জন মাত্র।


মুখরোচক খাবার ছাড়া তো ভোজনরসিক বাঙালির আড্ডা ভাবাই যায়না। এখানে সবাই কমবেশি জার্মানবাসী হলেও ভারতীয় খাবার কিন্তু সবার প্রথম পছন্দ। বাইরের প্রবল বেগে আছড়ে পড়া তুষারপাত, মাইনাস তাপমাত্রা, কনকনে শীতের হাওয়া ও বাড়ির ভিতরে গরম গরম ঘুগনি, বরাপাও, তেলেভাজা, চা কফিতে জমে ওঠে সন্ধ্যে বেলার আড্ডা। রাত্রির অন্ধকার ইতিমধ্যেই নেমে এসেছে গ্রামের মধ্যে। এরমধ্যে মৃত্যুন্জিত দা সপরিবারে ডুসেলডর্ফ (Düsseldorf) থেকে গাড়ি নিয়ে এসে আমাদের বড়দের বৃত্তটাকেই শুধু সম্পূর্ণ করেনি, তিন্নি, বিনি, তাতান, তিথিদের মত ছোটদের খুশির বৃত্তটাকেও সম্পূর্ণ করে ফেলে। সাদা বরফের চাদরে ঢাকা পরা গ্রাম, রাত্রের কালো অন্ধকার, রাস্তা ও বাড়িতে জ্বলে থাকা তারাদের মত হলুদ আলো মিলিয়ে দিয়েছে রাতের আকাশ আর মাটির মাঝের বিভাজনের সীমানা। মাঝে মাঝে আমি, অর্কদা, সায়ন্তন বাইরে বেরিয়ে রাত্রের এই সৌন্দর্য উপভোগ করার চেষ্টা করলেও এই কনকনে ঠাণ্ডায় ১০ মিনিটের বেশি বাইরে থাকা সম্ভব হয়নি। বাড়ির ভিতরে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা চিমনির ভিতর কাঠের আগুন, গরম গরম খাবার, বাংলা হিন্দি লোকসঙ্গীত বাউল সবরকম গান, নানারকম গল্প আর চারিদিক ঘেরা মোটা কাঁচের দরজা জানলা শুধু আলাদা করে রেখেছে আমাদের বাইরের ঠাণ্ডা থেকে। আড্ডা যেন সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত, রাত পেরিয়ে মধ্য রাত পর্যন্ত চলতে থাকে। সেদিন রাত্রে কে যে কখন ঘুমোতে গিয়েছে, সত্যি বলতে আমি আজও জানি না।


পরেরদিন সকালে চোখ খুলতেই দেখি, সকালের ঝলমলে রোদ কাচের দরজা জানলা পেরিয়ে আমাদের ঘুম ভাঙাতে ব্যস্ত। আমার বিছানার পাশে থাকা জ্যাকেট টা পড়ে আস্তে আস্তে দরজার দিকে এগিয়ে আলতো করে একটা দরজা খুলে বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করি। সকালের দৃশ্য যেন এক অন্যরকম। আমার চোখের সামনের প্রকৃতি যেন অন্য সাজে সেজে উঠেছে। চারিদিক বরফে ঢাকা গ্রাম, গাছপালা, ঝলমলে সোনালী সূর্যের আলো, শান্ত পরিবেশ। আমরা কয়েকজন বাড়ির ভিতরে একপাশে থাকা টেবিলে সকালের গরম চা নিয়ে বসে জানলা দিয়ে সকালের দৃশ্য উপভোগ করতে থাকি। সময় বাড়ার সাথে সাথে একে একে সকলে ঘুম থেকে উঠে সকালের রকমারি দেশি বিদেশি খাবার খেয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে থাকে। আমি অর্পণদাকে আমরা কোথায় যাচ্ছি জানতে চাইলে , অর্পণদা সঙ্গেসঙ্গে বাড়ির দক্ষিণ পূর্ব দিকে হাত বাড়িয়ে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমাকে যে আমরা সামনে থাকা ওই উঁচু পাহাড়ের উপরে, জঙ্গল, বরফে ঢাকা  জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছি। একটা বাড়িতে বসে শুধুমাত্র হাত দিয়ে কোনো এক জায়গাকে সঠিক ভাবে নির্দেশ করার ব্যাপারটা উপলব্ধি করা বা লিখে প্রকাশ করা আমার সাধ্যের বাইরে। যাইহোক, সকলে তৈরি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরি নতুন দৃশ্য দেখার উদেশ্যে। মোটামুটি ১৫-২০ মিনিটের পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠতে থাকে আমাদের গাড়ি, কিংশুকদার মজার কথা উপভোগ করতে করতে আমরা পৌঁছে যাই সেখানে। এই সুযোগে আমিও রাস্তার দুধারে দাঁড়িয়ে থাকা বরফে ঢাকা বড় বড় পাইন গাছ, গাছ থেকে রোদে ঝড়ে পড়া বরফ ও অপরূপ সৌন্দর্য মোবাইল ফোনে বন্দী করতে থাকি। একটা নির্দিষ্ট জায়গায় সবার গাড়ি দাঁড় করিয়ে,  শুরু করি পায়ে হেঁটে উপরে দিকে আমাদের গন্তব্যে ওঠার পদযাত্রা। ঝলমলে রোদ, ঠাণ্ডা হাওয়া, নীল আকাশের মাঝে প্রখর ভাবে জ্বলতে থাকা সূর্য, নীল আকাশের বুকে টুকরো টুকরো সাদা মেঘের আনাগোনা, সারি সারি বিভিন্ন ধরনের পাহাড়ি গাছ, চারিদিক বরফে ঢাকা এলাকা যেন এই স্বর্গ রাজ্য তৈরি করেছে। পরিবেশ এতটাই শান্ত যে তুলোর মত জমে থাকা বরফের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া পায়ের শব্দ, গাছ থেকে ঝিরঝির করে ঝড়ে পড়া বরফের শব্দ, কিচির মিচির ছোট বড় নাম না জানা, অজানা, অদেখা, অদৃশ্য পাখির ডাক, ফিসফিস করে নানা ভাষী মানুষের   কথাও যেন স্পষ্ট শোনা যায়। ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের গাছের ডালপালা, পাতা, ফুলের গায়ে এমনভাবে বরফ জমে রয়েছে যেন মনে হচ্ছে কোনো চিত্রকার তার তুলির টানে আপন স্বপ্নের পরিবেশ এঁকে ফেলেছেন। একটু একটু করে আমরা প্রায় পৌঁছে যায় ৮৮১ মি উঁচু পাহাড়ে একটি ঐতিহাসিক ট্রান্সমিশন টাওয়ার (Großer Feldberg) এর কাছে। যেখানে জার্মান ভাষায় লেখা ‘Höchster Punkt der Gemeinde Schmitten- Niederreifenberg’, যার আক্ষরিক অর্থ স্মিটেন – নিয়েদেরেইফেনবার্গ পৌরসভার সর্বোচ্চ পয়েন্ট। প্রতীক হিসাবে দাড়িয়ে রয়েছে যিশু খ্রিস্টের ক্রশের মত ফেল্ডবার্গ ক্রিউজ ( Feldberg Kreuz) বা Feldberg Cross,  দেখার প্ল্যাটফর্ম, বাইক পার্ক এবং খেলার মাঠ ও রয়েছে সেখানে। এই জায়গা থেকে চারিদিকের সৌন্দর্য উপভোগ করার উপলব্ধি ভাষায় প্রকাশ করা হয়তো সত্যিই শক্ত। ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে এই সর্বোচ্চ পয়েন্ট আশা করি ভ্রমণ করা খুব কঠিন কাজ। তখন হয়তো এই স্থান মোটা বরফের লেপের তলায় শীতঘুমে মত্ত থাকে। আমরা হয়তো কিছুটা হলেও সৌভাগ্যবান ছিলাম যে পরিবেশ ও আমাদের ভ্রমণের সঙ্গী হয়েছিল। গতকালের তীব্র তুষারপাতের পর আজকের এই রোদ ঝলমলে সারাদিন আমাদের কাছে সত্যি অকল্পনীয়। এ যেন আমাদের উপহার দেওয়ার জন্যই পরিবেশ নিজেই নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছে। একটু একটু করে আবার আমরা বরফ কাটিয়ে নিচে নামতে থাকি এবং একরাশ খুশির ক্লান্তি নিয়ে ক্ষুধার্থ মনে বাড়ি ফিরি। মাছ মাংস মিষ্টির মত লোভনীয় বাঙালিয়ানার নানা খাবারে দুপুরের খাবার

Großer Feldberg- এর পাদদেশ (৮৮১ মি উঁচু) থেকে দেখা স্মিটেন (Schmitten)

উপভোগ করে শুরু হয়ে যায় আবার আমাদের আড্ডা। সন্ধ্যে নামে, ঠাণ্ডা হাওয়া ও অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যায় পুরো গ্রাম। প্রকৃতি ও যেন আমাদের সাথে ঘুরে ঘুরে  আজ ক্লান্ত, তাই আজ আর নাচ দেখাতে ইচ্ছে হয় নি। হয়তো ভুলে গিয়েছে, হয়তো বা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে সবার আগেই।

ঐতিহাসিক ট্রান্সমিশন টাওয়ার (Großer Feldberg) যাওয়ার পথে
ফেল্ডবার্গ ক্রিউজ ( Feldberg Kreuz)

পরের দিন রবিবারের সকাল যেন এক অন্য মন খারাপের মুখে। এখন আমাদের সবার নিজের বাড়ি ফেরার পালা। দুপুরের খাবার খেয়ে, একরাশ খুশি, স্মৃতি আর স্বপ্ন নিয়ে আমাদের গাড়ি স্মিটেনের সোনা রোদ, শান্ত গ্রাম, চারিদিকে গুড বাই বলতে থাকা পাহাড়, গাছপালা, ফেল্ডবার্গ টাওয়ার, বুর্গরুইনে ওবেররেইফেনবার্গ (Burgruine oberreifenberg) দুর্গ, গ্রামের উঁচু নিচু রাস্তাকে পিছনে ফেলে সন্ধ্যে নামার সাথে পাখির মতো উড়ে চলে নিজের বাসার সন্ধানে। স্মিটেন হয়তো আবার সেজে উঠবে নতুন সাজে নতুনের ঝড়ো হাওয়ায়, খুঁজে পাবে আবার তার নতুন নতুন বন্ধুদের, আমরাও হয়তো হারিয়ে যাবো এই ব্যস্ত পৃথিবীতে, কিন্তু স্মিটেনের গ্রাম, ওই পাহাড়, ওই দুর্গ, ওই ফেল্ডবার্গ ক্রিউজ আমাদের স্মৃতি বহন করে দাঁড়িয়ে থাকবে হাসিমুখে শত শত বছর ধরে নতুন ভালোবাসার অপেক্ষায়।

Großer Feldberg থেকে দেখা চারিদিকের সৌন্দর্য

**********************************

Rajasthan: A Historical and Cultural Heritage

Part 2

Jodhpur : The Blue City

Papu Dhibar

Research Scholar, Jadavpur University

Jodhpur : The Blue City

In the previous episode we explored the very essence of Rajasthan in the golden city, Jaisalmer. We left Jaisalmer at night via train and we reached Jodhpur early in the morning. Jodhpur is the second largest city in Rajasthan. The city was founded by Rao Jodha in 1459. After breakfast we headed for the main attraction of the city, the Mehrangarh Fort. This old city is built up surrounding this fort. As the time went by the temperature was soaring as high as summer day and we reached the fort by noon.

The Mehrangarh Fort

The fort was also established by Rao Jodha in and around the same time. It covers an area of almost 1200 acres and is located in a hilltop above the plain. It is built using red sandstone and has huge and thick walls. These walls have intricate shaping and excellent embellishment. Inside this gigantic complex assembly there are broad courtyards and it now serves as a museum which exhibits various priceless and captivating relics and artefacts of great historical significance. The marks of the impacts from cannonballs fired by attacking armies can still be seen. After entering the fort we explored the palaces and maze-like works on the walls inside.

Intricate works on the walls of the fort

After only entering the fort on the hilltop we saw the magnificent blue colour of the city around the fort. Maximum of the building in the city has distinctively blue coloured paints of the buildings that signify the Brahmins, who used to paint their houses blue to deter insects and keep their dwellings cool during the summer. Due to this easily distinguishable colour, it is also known as “The Blue City” in Rajasthan and all over India.

Inside the Mehrangarh fort

Another fact is that because of its attractive location, historical significance and beautiful landscape it is a go-to place for Bollywood and even Hollywood film industries for shooting. Parts of the famous movie ‘The Dark Knight Rises” by Christopher Nolan were shot here. As for the Bollywood industry, very recent and popular musical-drama web series “Bandish Bandits” was based on this city only due to the city’s cultural heritage of complex rhythms and Indian classical music. So as a traveler and learner this particular fort is must visit.

Serving cold water in the scorching heat

After leaving the beautiful and intimidating fort the next major attraction of Jodhpur we saw was Umaid Bhawan Palace. It is one of the most prominent and exquisite structure of Jodhpur. The history behind the establishment of the lavish and one of the largest private residences in the world is rather interesting and humanitarian. In the 1920s Jodhpur faced a severe drought for three years and the most suffered people were the farmers in the area. So those farmers requested for help to the then king, Maharaja Umaid Singh, who was the 37th ruler of the Rathore dynasty. The farmers asked the king for some employment so they can survive the unforgivable circumstances due to the famine. The king in order to help them had decided to build a lavish palace. The initial building phase of the palace was done slowly because the focal reason was to provide employment to the farmers. Although there were criticism of building such an expensive palace but it served its purpose to the full as it gave almost 2000-3000 people with works in the time of necessity. The completion of the palace occurred in 1943. The palace provides exotic view of the “Blue City”, vast sand dune and overawed view of the Mehrangarh Fort. The palace has a museum inside which lets one see the beauty of the royal items. Each gallery in the museum displays the variety of a commodity. Like, you can see various classic and vintage cars only in one of the galleries or royal clocks only in another. The 5-star hotel wing of the palace is maintained and run by Taj Hotel group.

Mesmerizing Umaid Bhawan Palace in the Dusk

By the time we were done visiting the palace it was already evening. So we went for our dinner in a local hotel and then we arranged a bus for our next destination, Mt. Abu, a different taste of mountains in amongst the sand desert, forts and palaces. We were excited for our next adventure, and Adventure it was going to be.

**********************************

Tales from Wild: Birds on the Phoktey Dara Trail (Part-III)

Soumyo Chatterjee

Senior Research Scientist, Opteev Technologies, Inc., Kolkata.

Grey Wagtail

After having a small break at the Barsey campsite and refueling ourselves with some snacks, we took the trail to Jorbutey, our campsite for the night. The path to Jorbutey is a less walked trail that passes through a dense forest of tall rhododendrons trees and offers trekkers the true beauty of this scenic trek route. An hour of downward trek following this pristine path led us to the first of the two major meadows of the Phoktey Dara trek, Deolinga Dhap. Covered almost fully with reeds and some local vines, this partial marsh land is generally an ideal location for a quick break but often used for camping for the night when you start late from Barsey. But in the eyes of a birdwatcher such marshy grounds are always a good place to “shoot” some birds with the camera. So, as I started scanning the area, a pair of Grey Wagtails caught my attention. Most of the birds in the Wagtail family
(Khanjan or Khanjana in bengali) are typical residents of marsh lands and open freshwater wetlands and they got the name from their habit of wagging the tails frequently, especially during forage. Apart from such marshes, the grey wagtails  are also commonly found near mountain streams with exposed rocks and are way more colorful than their name suggests. The bird got its name from the characteristic slate-grey upper parts, while the under part has a very distinctive lemon yellow throat and vent, along with a contrasting shade of white. They have long tails, that they wag up and down while they walk. The sexes looks similar but the males, during breeding season can be easily identified with a distinctive black throat. Grey wagtails mostly take insects, flies and beetles which they tend to fish out of rivers or running streams. However they do consume various different creatures and have been seen feeding on snails and tadpoles as well.

Stripe – Throated Yuhina

After this brief break and birding session, we continue our trek to Jorbutey following another uphill trail through a dense rhododendron forest often crisscrossed with small streams. A couple of hours of trekking took us to the beautiful Jorbutey campsite but as the spot was overcrowded, we headed towards Achalley which was another hour of trekking following the same route. Achalley top is small opening amidst the forest and offers a great view of the mountain ranges that includes the mighty Kanchenjunga along with some other famous peaks of the eastern Himalayas. Besides, the place is extremely rich in avifauna which you can feel in the morning when the chirps of Laughingthrushes, Yuhinas, Doves and many other resident birds truly turns the environment a heavenly one. These birds, although wild, are habituated to humans and hence provided me a good opportunity to get closed and study their behavior. To be specific, I was very much amazed by the behavior of a Stripe-Throated Yuhina. This large member of the yuhina family can be readily identified with tall, upswept crest along with black-and-orange wing panels on a brown body. They also have a characteristic streaked throat but it is difficult to spot until the bird provides sufficient time to observe. They generally inhabits mixed rhododendron and coniferous forest in hilly and montane areas and often heard to give loud and nasal notes while moving.

Blue-fronted Redstart

On the penultimate day of our adventure to Phoktey dara top, we set out for the Kalijhar campsite from the Achalley top just after the breakfast. The trail starts with a easy downward forest-walk of about two hours to Thulo dhap, the second meadow in this trail and significantly larger in size than Deolinga dhap. Beyond this point the path is quite steep and takes around four hours to rich the campsite at Kalijhar. As we moved along the path I spotted many of the birds that we have already encountered in the last couple of days but just after reaching the campsite a new bird joined my list. It was a Blue-fronted Redstart, a bird in the genre of flycatchers, and known for their unmistakable plumage color. The males of this bird family have an orange breast, belly, and tail along with ultramarine-blue head and back. The female, like many other bird species, are relatively dull in appearance with a brown plumage with an orange tail and lower belly. The species typically breeds in brushy open mountain areas and like many other redstarts, often perches visibly, bobbing tail up and down. They are also good singers and often heard to give a series of pleasant warbles and bubbly buzzing. Their calls include a distinctive ticking sound which is often preceded by a quiet whistled note.

So, whenever you walk through this pristine trail of evergreen forests, not only focus on the panoramic beauty of the Himalayan peaks, moreover, try to relish the scenic encounters with lush meadows, sleek streams, and a vibrant collection of bird species all along the trail. Happy Birding…

Resources:

1. Collins Field Guide, “Birds of India, Pakistan, Nepal, Bhutan, Bangladesh and Sri Lanka” (2015).

2.Salim Ali, “Birds of Sikkim” (1896).

3. Pranabesh Sanyal & Biswajit Roychowdhury, “PaschimbanglarPakhi” (1994).     

4. Salim Ali and Ripley Dillon, “Handbook of the Birds of India and Pakistan: Vol 4” (1987).

Photo Courtesy:

Soumyo Chatterjee (Author)

**********************************