Bohemian Travelogue Issue: January – February || 2022

Table of Content

সম্পাদকের কলমে

শ্রীধর ব্যানার্জী

চারণিকের মন্ত্র ‘চরৈবেতি’৷ চর-এব-ইতি। চলো, অবিরাম চলো। দৃঢ় ও সুস্পষ্ট এই শব্দবন্ধের গভীরে বৃহত্তর একটি ভাব অব্যক্ত থেকে যায়। তা হল – পথ যেমনই হোক, পরিস্থিতি যাই হোক, থেমো না। ব্যাধি-দুর্যোগ-লোকক্ষয়ের এই সংকটকালে ওই চলার মন্ত্রই আমাদের পথ দেখিয়েছে। আজ যখন বিশ্বের একটা বড় অংশ যুদ্ধের আঁচে ঝলসানোর আশঙ্কায় প্রহর গুনছে, তখনও আমাদের লক্ষ্য হোক ‘চরৈবেতি’।

ভিন্নধারার পাঁচটি পথচলার গল্প দিয়ে সেজে উঠেছে বোহেমিয়ান ট্রাভেলগের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সংখ্যা। লোপামুদ্রা বর্মণের কলমে উঠে এসেছে কাশ্মীর সীমান্তের গুরেজ উপত্যকার কথা – যেখানে অশান্তির কালো ছায়া ছাপিয়ে ফুটে ওঠে হেমন্তের রঙ। অভিজিৎ মণ্ডল লিখেছেন ‘মনসুন ট্রেকে’ হরিশ্চন্দ্রগড় অভিযানের কাহিনী। ভরা বর্ষায় পশ্চিমঘাট পর্বতের সবুজ রূপটির ছবি ধরা পড়েছে তাতে।

নিয়মিত বিভাগে সৌম্য চ্যাটার্জীর কলমে থাকছে Tales from the Wild. ফোকতেদারা ট্রেকে যে সমস্ত পাখিদের দেখা মেলে বিগত পর্বে তাদের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন সৌম্য। এই পর্বে থাকছে তার দ্বিতীয় ভাগ।

অন্যস্বাদের লেখা লিখেছেন আয়ুশি চ্যাটার্জী। দিন-প্রতিদিনের ভিড়ভাট্টায় সাদা-কালো শিয়ালদহ থেকে টুকরো টুকরো গল্প খুঁজে এনেছেন তিনি।

শেষপাতে রাজস্থান। পাপু ধীবরের কলমে শুরু হচ্ছে নতুন ধারাবাহিক ‘Rajasthan: A Historical and Cultural Heritage’. প্রথম পর্বে থাকছে সোনার কেল্লার শহর জয়সলমীর।

বোহেমিয়ান ট্রাভেলগের বর্তমান সংখ্যাটিতে আমরা স্মরণ করছি ব্রিটিশ অভিযাত্রী বিল টিলম্যানকে। তাঁর পর্বতারোহন শুরু আফ্রিকায়। মাউন্ট কেনিয়া ও মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো দিয়ে। ১৯৩০-এর দশকে তিনি দু-দু’টি এভারেস্ট অভিযানে অংশ নেন। এভারেস্ট জয় অধরা থাকলেও তাঁর নেতৃত্বে অভিযাত্রী অক্সিজেন সাপোর্ট ছাড়াই ২৭২০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত উঠতে সক্ষম হয়।

এভারেস্ট ছাড়াও বিল টিলম্যান কুমায়ুনে নন্দাদেবী, আসাম হিমালয়ে গোরি চেন্, কারাকোরামে রাকাপোশি সহ বিভিন্ন শৃঙ্গে অভিযান চালিয়েছিলেন।

সমুদ্রে জেগে থাকা অজ্ঞাত গিরিশিখরের সন্ধানে একটা সময়ে তিনি উত্তর ও দক্ষিণ মহাসাগরে নিয়মিত পাড়ি জমাতেন। তাঁর শেষ অভিযান ১৯৭৭-এ। তখন তাঁর বয়স ঠিক আশি। রওনা দিলেন দক্ষিণ আটলান্টিকে স্মিথ দ্বীপের উদ্দেশে। ব্রাজিলের রিও-দে-জেনেরিও থেকে রওনা দেওয়ার পর আটলান্টিকের বুকে নিখোঁজ হয় তাঁদের জাহাজ। অনেক চেষ্টাতেও তাঁদের সন্ধান মেলেনি। আশ্চর্য সেই চারণিক চলতে চলতেই হারিয়ে গিয়েছেন। হয়ত থামতে চাননি বলেই।

**********************************

তাহার নামটি গুরেজ

লোপামুদ্রা বর্মন

Traveler, Writer, Photographer 

নেমেছি শ্রীনগর এয়ারপোর্টে। নভেম্বর মাস। হওয়া কনকনে, কিন্তু রোদের দাপটে খুব একটা কষ্ট মালুম হচ্ছে না। ব্যাগ নিয়ে বেরোতে গিয়ে দেখি লম্বা লাইন। পর্যটকদের নাম নথিভুক্ত করা হচ্ছে। এরপর RTPCR  করতে হবে। যদি positive report না হয় তো কালই বেরিয়ে পড়বো। এই সময় কাশ্মীরের রূপ বলে বোঝানো যাবে না।

সারা শ্রীনগর জুড়ে প্রকৃতি যেন হোলি খেলে চিনারের ঝরা পাতা নিয়ে। বিকালটা ডাল লেকের চারপাশে পায়ে হেঁটে  ঘুরে বেড়ালাম দুরু দুরু বুকে। কি হয় কি হয়। না, কোনো ফোন এলো না। তার মানে কাল থেকে আমি ‘যেথায় খুশি যাইতে পারি!’  আঃ, ব্যাগ ভর্তি প্ল্যানিং। হোটেলে ফিরে কম্বলটা টেনে নিই পায়ের উপর। প্রথম যে কাগজটা হাতে এলো, গুরেজ উপত্যকা। ঠিক করলাম, গুরেজ দিয়েই শুরু করবো। দরজায় ঠক, ঠক। দরজা খুলে দেখি, বিলালভাই সঙ্গে আরেকজন। জানতে পারি এই দশদিন এই চালকই, থাকবে। নাম তার রইস। আমার প্ল্যান দেখে এ ওর মুখের দিকে তাকায়। আমতা আমতা করে জানায়, ওই রুটে কাশ্মীরিরা যেতে চায় না বড় একটা, রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য, কখন কি হয়! একটা প্রবাদ আছে, বোকাদের সাহসের ঘাটতি হয় না। সেই সুনাম থেকেই বললাম, কিছু হবে না। ওরা কাকে কাকে যেন ফোন করতে গেলো, আমি জেগে বসে গুরেজের স্বপ্ন দেখতে লাগলাম। রাত সাড়ে আটটার দিকে বিলালভাই এলো। এক আর্জি, বিলাল কোনোদিন গুরেজ যায় নি। ওর আরো দুই বন্ধু, তারাও কোনোদিন গুরেজ যায় নি। আমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে ওরাও যেতে চায়। গাড়ি ইনোভা, যাত্রী আমি একা। ভাবলাম ভালোই হলো।

বেরিয়ে পড়েছি। ঝলমলে মন আর উজ্জ্বল আবহাওয়াকে সঙ্গে নিয়ে। এই গুরেজ উপত্যকার নাম শুনেছি অনেকদিন, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সীমানা খুবই কাছাকাছি হওয়ায় উপদ্রুত অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত।। গুরেজ উপত্যকার বেশীর ভাগটাই পাক অধিকৃত কাশ্মীরে।  গাড়ি ছুটে চলেছে। বান্দীপোরা পার করে হালকা চড়াই রাস্তা। মাঝে মাঝে মিলিটারি ছাউনি। গাড়ি দাঁড় করিয়ে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ। আবার যাত্রা শুরু। পথে একটা পাস পেরোতে হবে। রাজদান পাস। সামনের সিটে আমি। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ। ঠান্ডা মালুম হচ্ছে বেশ। পাসে ওঠার আগে একটা ময়দান আছে। পীরবাবা ময়দান নামে পরিচিত। দেখতে দেখতে রাজদান পাস পৌঁছে গেলাম।

কনকনে হাওয়ার জন্য বেশীক্ষন বাইরে থাকা গেল না।  আবার গাড়ি চলতে লাগলো। প্রথমেই কিষেন গঙ্গা নদীর ওপর একটা ব্রিজ পার করলাম। নদীর ধার বরাবর রাস্তা। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে দাওয়ার গ্রাম। দাওয়ার পার করে দুটো বাঁক ঘুরতেই গুরেজ গ্রাম দেখা গেল।

পথে পড়লো ফিরোজা রঙের এক সরোবর। কিষেনগঙ্গা নদীর জলাধার। অপূর্ব সুন্দর।

আর দেখলাম হাব্বা খাতুন পাহাড় যা গুরেজ-বাসীর অনুভবে জীবন্ত।

রাতে খাওয়ার সময় কথায় কথায় জানতে পারলাম, ভারতীয় সেনার অনুমতি সাপেক্ষে এই উপত্যকার অন্দরমহলে যাওয়া যায়! শুনিয়াই, মন, আনন্দে বসন্তের কোকিলের মতো গাহিয়া উঠিল। অনুমতির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব গুছিয়ে নিলাম রাত্রেই। উত্তেজনায় ঘুম আসছিল না আর রাতটাও যেন কেমন বড় হয়ে গিয়েছিল।

সকাল হতেই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। দুদ্দাড় করে পৌঁছলাম গিয়ে ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ে। কাগজপত্র জমা দিয়ে অনুমতি পাওয়া গেলো শর্তসাপেক্ষে। পথের পরিস্থিতি যেহেতু আগে থেকে জানা যায় না তাই সেনা যেখান থেকে ফিরতে বলবে ফিরে আসতে হবে সেখান থেকেই। তাই সই। পথে প্রথম গ্রাম বার্নই। তারপর ছোট ছোট কত গ্রাম পেরিয়ে তুলেইল, পুরানা তুলেইল গ্রাম।

অপূর্ব সুন্দর, যেন আঁকা ছবি। সীমান্ত কাছে হওয়ার জন্য পথের দুধারে কাঁটাতারের বেড়া। পাহাড়ের গায়ে বাঙ্কার। সমগ্র হিমালয় জুড়েই শীতের আবাহন চলছে। সন্ন্যাসীর গৈরিক উজ্জ্বলতায়, গাম্ভীর্যে  হিমালয়, আপনি আপনাতে স্থিত। ক্রমশ এগিয়ে  চলেছি উপত্যকার আরো গভীরে। ছোট ছোট গ্রাম। কত মানুষ, নিজেদের কাজে ব্যস্ত। মাথায় কাঠের বোঝা, চোখে নিষ্পাপ, অবাক চাহনি, কখনো বা হাত নাড়া। যতদূর চোখ যায় আদিগন্ত কাঁটাতারের ভরা সংসার। চারপাশের সৌন্দর্য  বর্ণনার অতীত। সীমান্তবর্তী অঞ্চল, ছবি তোলায় বিধিনিষেধ আছে। আকাশের মুখ গম্ভীর হয়ে উঠছে, ক্রমশ। যে কোনো সময় বরফ পড়া শুরু হয়ে যাবে। প্রত্যেক একশো মিটারে সেনার জিজ্ঞাসাবাদ। এদিকে রাস্তার অবস্থাও ভালো নয়।  ঠিক তাই। জুরনাইল নামের গ্রামটি পেরোনোর সময় বরফ পড়তে শুরু করলো। গাড়িরও গতি কমে এলো। ফগলাইট জ্বেলে এগিয়ে চলেছে গাড়ি। এর মাঝে রাস্তা জুড়ে এক লোহার বড় গেট। কাঁটাতারের বেড়া পাহাড়ের উপর থেকে নেমে এসে নিচে নদী পর্যন্ত চলে গেছে। মাঝে পথজোড়া এই গেট।

আবার জিজ্ঞাসাপর্ব এবং বিপদ। না আর যাওয়া যাবে না। ড্রাইভার শ্রীনগরের শুনে আর এগোনো যাবে না জানিয়ে দিল। এ কী বিভ্রাটে পড়লাম! সমস্যাও গুরুতর। এই পথ চলে গেছে বর্ডার পর্যন্ত। চতুর্দিকেই বর্ডার। সামনে অনেকগুলো জায়গায় পথ ভাগ হয়েছে। স্থানীয় ড্রাইভার ছাড়া পথ ভুল হবার সম্ভাবনা আছে। কোনো ভাবে ভুল পথে ঢুকে গেলে বিপদের মুখে পড়তে হবে। কারণ এখানে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া আছে। স্থানীয় গাড়ির নম্বর সেনার কাছে আছে কিন্তু এই গাড়ি শ্রীনগরের। এখন কি করি, এসব কথা তো ভেবে দেখিনি। সেনা অধিকারিককে অনুরোধ করি, যদি গাড়ির চালককে পথটা একটু বুঝিয়ে দেন কাগজে এঁকে। অনেক কাকুতির পর কি বুঝলেন সেই অফিসার কে জানে। বিলালের ফোন নম্বর লিখে নিলেন আর পই পই করে বলেদিলেন সবসময় পথ বিভাজিকার ডানদিকের পথ ধরতে। কোনো ভাবেই যেন বাঁ দিকে না চলে যাই। বাঁ দিকের পথ সবই সীমান্তমুখী আর সব পথেই দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া আছে। সত্যি কথা বলতে কি, ভয় যে লাগছে না, তা নয়। কিন্তু আমার যে এক ভারতগ্রাসী লোভ। শেষ পর্যন্ত লোভের কাছে ভয় হার মানলো। ভদ্রলোক বারবার সাবধান করলেন।

তারপর সেই লৌহকপাট খুলিয়া গেল, আমরা স্বর্গপুরীতে প্রবেশ করিলাম। স্বর্গ কি এমনই হয়? ক্রমশঃ গাঢ় কুয়াশায় মুড়ে ফেলছে আমাদের। হালকা বরফ পড়ছে। বেশি বরফ পড়লে ফিরে যেতে হবে। চলতে চলতে পরের চেকপোস্টে পৌঁছে গেলাম। কাগজ পত্র দেখাতে নামতে হলো। এরমধ্যে চারপাশ একটু পরিষ্কার, বরফ পড়াও বন্ধ হয়েছে। অনেক নীচে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে কিষেনগঙ্গা আপন ছন্দে বয়ে চলেছে। পাহাড়ের শীতল স্তব্ধতার মাঝে শুধু জলধারার বয়ে চলাটাই জীবনের সাক্ষী দিচ্ছে। কাঁচা রাস্তায় আরো খানিক এগনো গেল কসরত করে, কিন্তু আর এগোনো যাবে না। পাহাড়ের গায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘর বাড়ি। অগত্যা নেমে পড়ি। হাঁটতে হাঁটতে গ্রামে গিয়ে পৌঁছই। একটা বড় ব্রীজ, কিষেন গঙ্গা নদীর  ওপর।

মেয়েরা  কেউ  নদীতে জামাকাপড় কাচছে, কেউ বাসন মাজছে।  ব্রিজের ওপরে অনেক মানুষ। অবাক চোখে আমাদের দেখছে। কথা বলে জানলাম এনারা সবাই  সিয়া সম্প্রদায়ের দর্দ গোষ্ঠীর মানুষ। এখানকার কথ্য ভাষা শিনা, এই ভাষা গিলগিট বালতিস্তানেরও কথ্য ভাষা। মানুষজন সরল।

ব্রিজটা পার করে মূল বাড়আব গ্রাম। যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেটাও গ্রামেরই অংশ। পৌনে চারটে বাজে। সারাদিন কিছুই প্রায় খাওয়া হয় নি কারোরই। খুব খিদে পেয়েছে। জিজ্ঞাসা করে জানা গেল এখানে চায়ের দোকান পর্যন্ত নেই! কি করি এখন। ভদ্রলোক বোধহয় বুঝতে পারলেন। নিজের বাড়িতে আপ্যায়ন করলেন। মাটির দোতলা বাড়ি। ভিতরে বুখারী জ্বলছে। মেঝেতে কার্পেট পাতা, বসার ব্যবস্থা। দেশি ঘি মাখানো কাশ্মীরি রুটি আর মাখন দেওয়া নোনতা চা। পেট ভরলো।  এত অল্প সময়ে এত আপন করে নিতে বোধহয় শুধু কাশ্মিরীরাই পারে। এতক্ষণ খিদের জন্য খেয়াল ছিল না। আমাদের কাছে একদিনেরই অনুমতি আছে। তার মানে আজকেই ফিরে যেতে হবে। নান্য পন্থা। আবার আসবো, কথা দিতে হলো। খুব ভরসা আছে ভগবানের উপর। তিনি নিশ্চয়ই আমাকে কথার খেলাপি হতে দেবেন না। পূর্নানন্দ হয়ে অমোঘ বাধ্যতায় ফেরার পথে ধরলাম।

ফেরার পথে আকাশের মুখে গম্ভীর ভাব। কি যে চাইছে সে, আধো অন্ধকারে বোঝার উপায় নেই। স্বর্গ দর্শনের ঘোর কাটেনি এখনো। গাড়ি পেরিয়ে চলেছে কুয়াশা ঢাকা পথ। গাড়ির আলোয় চিরে যাচ্ছে কুয়াশামাখা অন্ধকার। সেনা ছাউনিতে গাড়ি দাঁড়াচ্ছে, গাড়ির নম্বর বলতে হচ্ছে। সকালে এসেছিলাম, এখন বেরিয়ে যাচ্ছি। শত সমস্যা হলেও আর ফেরা যাবে না। বৃষ্টির সাথেই হালকা বরফ পড়া শুরু হলো। আসার সময়েই দেখেছি মাটি আর কাঁকরের কাঁচা রাস্তা। ড্রাইভারের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছে। ‘খতরনাক’ তার অস্ফুট স্বগতোক্তি শোনা গেল। পাশে বসে ষষ্ঠ ইন্দ্রিযের সাহায্যে মানে বোঝার চেষ্টা করলাম। গাড়ির যা গতি তাতে প্রায় ছ ঘন্টা লাগবে। এই বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে হঠাৎ, মনে পৃথিবীর মায়া ভর করলো। পিছুটান, ভয় সব মিশে গিয়ে এক মিশ্রভাব মনের মধ্যে আনাগোনা করতে লাগলো। একেই কি মনের বিকার বলে? পিচ্ছিল পথের মতোই স্বর্গীয় অনুভূতি পিছলে চলে যাচ্ছে মন থেকে। আর সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে সাংসারিক চিন্তা। মরসুমের প্রথম বরফপাত। আর এই লাগাতার বরফপাতের মধ্যে একাকী আমি মনে মনে পার্থিব সুখের জাবর কেটে চলেছি। আরো সে কতক্ষণ, অন্ধকার রাত, তুমুল তুষার পাত, মনের অলিগলি ধরে বিচিত্র বিভীষিকার যন্ত্রনা ভোগ করে একসময়ে ফিরে এলাম পরিচিত পৃথিবীর আবহে। গুরেজের গ্রামের অতিথিনিবাসে। চার দিকে আলো। কত মানুষ, হোক সে অপরিচিত।

স্বর্গ এখন এক শব্দ মাত্র। এই অভিজ্ঞতা আমায় যেন এক, অনেক পুরোনো অথচ পরিচিত অনুভূতি স্মরণ করিয়ে গেল। এই ভাবেই স্বর্গস্খলিত আত্মা অন্ধকার মাতৃজঠরের ভিতরে বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়। সে তখন স্বর্গ ভোলা এক অস্তিত্ব মাত্র। তার বেশি কিছু নয়।

*****************************

Rajasthan: A Historical and Cultural Heritage

Part 1

Jaisalmer: The Golden City

Papu Dhibar

Research Scholar, Jadavpur University

Rajasthan is not called “The Land of Kings” for its literal sense only, but for its ancient royalty too. The largest Indian state in terms of area in north-west India is enriched with royal palaces and forts which symbolize the sheer amount of history this land has witnessed. The Thar Desert (also known as the Great Indian Desert) forms the geomorphic border between India and Pakistan. These along with the oldest fold mountains in India ‘the Aravalli range’, the mysterious animal ‘camel’, the ruins and relics of Indus Valley Civilization and Vedic Civilization, diversified genre of music with complex rhythms, skilful and attractive folk dances originated from different tribes, fairs and festivals and of course the warm locals and their multi-coloured turbans make the state one of the most beautiful tourist destinations in India.

The glorious Golden city from the rooftop of Jaisalmer Fort

So, we, a group of five young enthusiasts, decided to travel over the land of history and culture and went on to explore six iconic cities and attractions that are as follows: Jaisalmer, Jodhpur, Mt. Abu, Udaipur, Chittore and Jaipur. Here in this series, we will revisit the mere ten days in the late December of 2014 and what better place to start than Jaisalmer.

Patwon Ki Haveli

We started from Howrah to take almost one and a half days journey to reach Jaisalmer. But before we could even set foot on the land the chilling cold of the night and the consummate heat of the day were an indication of what was to come. After taking a little rest the first thing in the morning we explored was the nostalgic Jaisalmer Fort, which the famous novelist and film maker Satyajit Ray based his detective novel “Sonar Kella” on and later filmed the movie there. The fort was believed to be built by Raja Rawal Jaisal, a Bhati Rajput, in 1156 CE and was included in UNESCO World Heritage Site list in 2013.

The Jaisalmer Fort aka Sonar Kella

The moment you go out in the city you notice a striking similarity in almost all the buildings and the fort which are constructed using yellow sandstone, gives the glowing golden-yellow colour to the town. This is the reason why Jaisalmer is phrased as “The Golden City of India”. The Jaisalmer Fort is one of the very few remaining living forts in the world because a large percentage of the city’s population still resides in the fort. Only when one reaches the top of the fort the spectacular golden yellow colour of the city under sunlight comes to life.

Outside of Patwon Ki Haveli

After embracing the majestic golden yellow aura of the city from the rooftop of the fort we went to a palace nearby named “Patwon Ki Haveli”. The palace is built using distinctive yellow sandstone with intricate works of mirrors and paintings. The palace now belongs to the government and has offices of Archaeological Survey of India and State Art and Craft Department. The palace was earlier occupied by merchants who dealt in gold and silver embroidered thread. Just outside the palace were shops of handmade miniature toys, made with cloths and woods, known as “Rajasthani puppet” or “Kathputli” and other home decors with the use oflocal and regional commodities and objects.

The local miniature ‘Kathputli’ shop

Then after hanging around a bit there exploring the palace and the outside, we had our lunch and went to the Gadisar Lake in the outskirts of Jaisalmer to enjoy some leisurely time. It is an artificial lake that was built by Raja Rawal Jaisal round about the same time as the Jaisalmer Fort. We waited around a little there and proceeded to grab a car which was arranged by the hotel to one of the main attractions of our trip, the Thar Desert. When we reached there the sun was still beating and at times it would be hard to believe that it was winter. I guess that’s what desert is all about, the extremes. The people also started pouring in there.

We hired some camels to dive a little deep into the desert for an hour and then the lights faded by marvelous golden-orange sunset over the sand dunes. But as soon as the sun went down the temperatures started falling rapidly. After the sunset we spent the evening in a program under the open sky where some regional and traditional folk songs and dance form were being performed by locals. We completed our dinner later in the evening in one of the desert camps and got back to the hotel to take our belongings as we geared up to catch our train in night for Jodhpur.

*****************************

‘মনসুনট্রেক’-এ হরিশ্চন্দ্রগড়

অভিজিৎ মণ্ডল

Traveler, Kolkata

TIFR -এ রিসার্চ করার সময়ে বর্ষা এলেই আমরা ক’জন মুম্বাইয়ের আশেপাশের পাহাড়ে ট্রেক করতে যেতাম। ভোর চারটেয় সবাই মিলে ট্যাক্সি ধরে পৌঁছাতাম ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস। তারপর লোকাল ট্রেনে চড়ে ট্রেকিং-স্পটের নিকটবর্তী ষ্টেশন। সবশেষে বাস, বা ট্যাক্সিতে বেস ভিলেজে পৌঁছতাম – যেখান থেকে হাঁটা শুরু। সারাদিন ট্রেক করে অনেক রাতে ফিরে আসতাম হোস্টেলে।

হরিশ্চন্দ্র গড়ে যাওয়ার ইচ্ছাটা অনেকদিনের। কারণটা সিনিয়র দাদাদের কাছে শোনা হরিশ্চন্দ্র গড়ের সুখ্যাতি। একাধিক ট্রেকিং রুট দিয়ে হরিশ্চন্দ্র গড়ে পৌঁছানো যায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন রাস্তায় ট্রেক করার সময় গিয়ে উপর থেকে গড়িয়ে আসা আলগা নুড়ি পাথরে মাথা ফাটার নামুনাও আছে।

তাই আমাদের লক্ষ্য ছিল সব থেকে সহজ রাস্তায় হরিশ্চন্দ্র গড় ঘুরে আসা। হরিশ্চন্দ্র গড়ে যেতে হলে ভোরের লোকালে যাওয়া যায় না। কাছের ষ্টেশন যেখানে মুম্বাই লোকাল যায়, সেই কাশারা থেকে এই হরিশ্চন্দ্র গড়ের বেস ভিলেজ, পাঁচনাই ১০০ কিলোমিটার দূরে। তাই চার-পাঁচ দিন আগে থেকে কাশারা ষ্টেশন থেকে পাঁচনাই যাওয়া, এবং ফেরত আসার জন্য একটা গাড়ি আগ্রিম ভাড়া করা হল।

মন্দিরে যেতে এই নদী পেরোতে হয়

এবার সবাই শুক্রবারের অপেক্ষা করতে লাগলাম। শুক্রবারে সকালে জানা গেল প্রবল টানা বৃষ্টিতে ওই জায়গাগুলোতে যাতায়াতে সতর্কতা নিতে বলা হয়েছে। যাই হোক, আমরা ড্রাইভারদার সাথে পরামর্শ করে শানিবারের ট্রেকে যাওয়ার প্ল্যান বজায় রাখলাম। সেইমতো আমরা সাতজন রাত সাড়ে এগারটায়  ষ্টেশনে চলে এলাম। শেষ মুম্বাই-কাশারা লোকাল ১২টা৮-এ। কাকতালীয় ভাবে, ওই রাবিবার ইমনের জন্মদিন ছিল। আমরা রেলের ঘাড়ি দেখে ঠিক কাঁটায় কাঁটায় ১২টার সময় সঙ্গে নেওয়া বাপুজি কেক কেটে জন্মদিন উৎযাপন করলাম।

ঠিক সময়ে লোকাল ছাড়ল। প্রায় তিন ঘণ্টার এই ট্রেন যাত্রার শুরুতে কিছু সময় তাস খেলে, আর বাকি সময় খোলা দারজায় দাঁড়িয়ে অন্ধকারে বৃষ্টি দেখতে দেখতে কেটে গেল। বাকি কেউ কেউ খালি কামরায় ট্রেনের সিটে লম্বা হয়ে শুয়ে রাত ঘুম সেরে নিল। ভোর সোয়া-তিনটে নাগাদ আমরা কাসারা ষ্টেশনে এলাম। বাইরে তখন জমিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের ড্রাইভারদা মাহিন্দ্রার এস-ইউ-ভিতে তুলে পাঁচনাই রওনা দিল। প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা কালো আন্ধকারে বাইরের বিশেষ কিছু দেখা গেল না। আবছা ভোরের আলোয় সংকীর্ণ রাস্তাটি দেখে ড্রাইভারদার প্রতি স্রম্ভাম, আর মনে মনে একটা চোরা ভয় অনুভব করলাম। রাস্তার বামদিকে খাড়া পাহাড় থেকে বৃষ্টির জল রাস্তার প্রায় সব নুড়ি-বালি ধুয়ে ডান দিকে অগভীর খাদে পড়ছে। 

আন্দাজ সাতটায় বেস ভিলেজে পৌঁছে গেলাম। অবিরাম বৃষ্টি আর কনকনে ঠাণ্ডা ঝড়ো হাওয়ায় মনের জোর বাড়িয়ে গাড়ি থেকে নামলাম। চোখে মুখে জল দিয়ে গরম চা-বিস্কুট খাওয়া হল। লোকাল গাইড খুজে দিতে বলাতে চায়ের দোকানদার দূরে একটা বড় ঝর্না দেখিয়ে ওদিকে সোজা যেতে বললেন। 

আমাদের ট্রেক শুরু হল। মোটামুটি সহজ রাস্তা। পাথরগুলো বেশি পিছল নয়। উপরি পাওনা বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। এবার প্রায় কুড়ি মিনিট হাঁটার পরে পাঁচনাই গ্রাম থেকে দেখা ওই ঝরনাটি স্পষ্ট দেখা গেল। পরে জেনেছিলাম পাঁচনাই থেকে কম করে পাঁচটি জলপ্রপাত দেখা যায় বলে ওর ওই নামকরন হয়েছে। আন্দাজ পাঁচশো ফুট উপর থেকে রাস্তার পাশের পাথরগুলোর উপরে ওর জল পড়ছে। কারা যেন জলের ট্যাপ খুলে তার নিচে একটা ফ্যান চালিয়ে দিয়েছে। ওই উপরে হাওয়ার জোর এত বেশি যে ঝরনার জলকে উড়িয়ে অন্য জায়গাতে ফেলছে। হাওয়ার জোর কমলে অত উঁচু থেকে একসঙ্গে যেন পঞ্চাশ বালতি জল নিচে আছড়ে পড়ছে। আমরা ওই পাথরে বসে যখন মাথা নিছু একসঙ্গে কয়েক বালতি জলের আভিঘাত সহার জন্য মনে মনে তৈরি হয়ে আপেক্ষা করছি, জল আর আসে না। যেই উপরের দিকে তাকিয়েছি ওমনি জলের আঘাত। সে এক অনন্য অভিজ্ঞতা বটে। 

পাঁচনাই থেকে

হরিশ্চন্দ্র গড় ট্রেকের শেষে হরিশ্চন্দ্রেশ্বর মন্দির। পৌঁছাতে সময় লাগে মোটামুটি আড়াই ঘণ্টা। পথে একটা পাহাড়ি নদী পার হতে হয়। বর্ষায় সেই নদী ছাপিয়ে বেশ বড় ঝরনার সৃষ্টি হয়েছে। দু’এক জায়গায় ঝর্নার জলের সঙ্গে ছোট থেকে মাঝারি আকারের পাথর রাস্তায় এসে পড়ে। সেইসব জায়গায় সময় নিয়ে বেশ সাবধানে পার হতে হল।

অবশেষে পথ ফুরোল। হরিশ্চন্দ্রেশ্বর মন্দিরের পাশেই বিষ্ণু এবং গণেশ মন্দির। বেশ দর্শনীয়। হরিশ্চন্দ্র গড় হেরিটেজ সাইট। পুরাতাত্ত্বিকরা অনুমান করেন মন্দিরের স্থাপনা ১৪০০ খৃষ্টাব্দে। অর্থাৎ ৬০০ বছরেরও বেশি। হরিশ্চন্দ্রেশ্বর মন্দির থেকে প্রায় ১০০ ফুট দূরে কেদারেশ্বর গুহা। এখানে বলে রাখা ভাল যে হরিশ্চন্দ্রেশ্বর মন্দিরের স্থাপত্যের সঙ্গে কেদারনাথ মন্দিরের মিল আছে।

কেদারেশ্বর গুহার মাঝখানে শিবলিঙ্গ। শিবলিঙ্গকে মাঝখানে রেখে চারটে স্তম্ভের উপর এই গুহাটি তৈরি হয়েছিল। এখন চারটে  স্তম্ভের একটি মাত্র দাঁড়িয়ে। স্থানীয়-শ্রুতি অনুসারে এই চারটে স্তম্ভ পৌরাণিক চার যুগের প্রতিনিধিত্ব করছে। প্রচলিত বিশ্বাস – কলিযুগের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে ওই স্তম্ভটি ভেঙ্গে পড়বে। মন্দিরের পাশে পাথর কাটা পুষ্করিণী। বেশ বড় জলাশয়। এর নাম সপ্ততীর্থ পুষ্করিণী। 

আশেপাশে ছোট-মাঝারি অনেকগুলি গুহা আছে। বর্ষা কাল ছাড়া অন্যসময় হরিশ্চন্দ্র গড়ে এলে এই গুহাগুলোতে রাত কাটানো যায়। এছাড়াও সেসময় কোঁকন কাড়া থেকে সূর্যাস্ত, তারামাছি চূড়া থেকে সূর্যোদয় দেখা যায়। তারামাছি চূড়া হরিশ্চন্দ্র গড়ের সব চেয়ে উঁচু স্থান (উচ্চতা প্রায় ৪৬০০ ফুট)।

পথে অস্থায়ী ছাউনি বানিয়ে স্থানীয়রা চা, বিস্কুট পরিবেশন করেন। চাইলে দুপুরের খাবারের বন্দোবস্তও করে দেন। 

মন্দির আসার পথে আমরা ওখানে সব্জি-ভাত খেয়ে এসেছিলাম। এখন এক কাপ চা খেয়ে ফেরার রাস্তা ধরলাম। দুপুর আড়াইটে নাগাদ পাঁচনাই ফিরে এলাম। ড্রাইভার দাদা আমাদের কাশারা ছেড়ে দেয়ে গেলেন। কাশারা হয়ে লোকাল ট্রেনে মুম্বাই। হোস্টেল পৌঁছালাম, তখন ঘড়িতে রাত নটা।

*****************************

Tales from Wild: Birds on the Phoktey Dara Trail (Part-II)

Soumyo Chatterjee

Senior Research Scientist, Opteev Technologies, Inc., Kolkata.

Rufous Vented Yuhina

Our Phoktey Dara trek began from Hilley, following the beautifully laid gravel path of Hilley-Barsey trekking trail through the Barsey rhododendron sanctuary. The rhododendron sanctuary is spread over more than hundred kilometers from Kanchenjunga Biosphere Reserve in the north to the Singalila National Park in the south and is enriched with a wide variety of flora and fauna including the famous Himalayan red pandas and a vibrant avian diversity. Apart from Hilley, the Barsey sanctuary can be also reached from Dentam and Soreng, but Hilley has so far been the most popular gateway since, it is approachable by road and the short trek to Barsey is relatively easier for the tourists.

After the official formalities regarding entry and camping in the trail were completed, we stepped into the sanctuary and the first bird that attracted my attention was a Rufous Vented Yuhina. Yuhina is the genus of birds in the white-eye family and this brightly colored member of the yuhina family got its name from the rufous color of its vent. Apart for this distinction mark, the yuhina species can also be identified with a bright orange patch on the back of the crest on a grayish head, brown wings, and from their soft high-pitched twitters. The species typically inhabits broadleaf forests at middle to high elevations along the northern parts of the Indian subcontinent, primarily in the Eastern Himalayas, and ranges across India and Nepal.

Verditer Flycatcher

The trail to Barsey is known for its mesmerizing variety of rhododendrons and as we continued our journey deeper into the forest we were greeted with vibrant patches of red, pink, and white rhododendron flowers. Such bloomed rhododendron trees are always interesting sites for birdwatchers as the flowers attract a large variety of birds and observing the birds’ movements and activities in such a natural habitat is a treat to the eye. In the branches of such a rhododendron tree I suddenly spotted the movement of a bright blue bird and without a closer inspection I was quite sure that it was a Verditer Flycatcher. The word verditer typically stands for a light blue or bluish-green pigment and the bird got its name from its distinctive plumage of turquoise blue. They have a vast habitat region ranging from the Himalayas to southeast Asia and even can be found in the parks of lower altitude cities such as Kolkata. Like a typical flycatcher, verditer flycatcher generally feed in mid to upper canopy of forests and other wooded areas and occasionally descend lower or even to the ground while hawking for insects.

Black-Faced Laughingthrush

Despite such a promising start of my bird-watching journey along the Hilley-Barsey trail, I was not very lucky for the rest of the path till I reached the Barsey campsite. The trek is so popular among the tourists that the entire trail was not only overcrowded but also the rattles of joy and excitement, frequent chattering of the trekkers effectively took away the natural silence of the forest trail which is necessary for bird watching. However, near the campsite a flock of Black-Faced Laughingthrush brought the smile back to my face. This shy and beautifully patterned member of the laughingthrush family is typically found in small groups in the dense undergrowth of mid to high elevations mountain forests and can be readily identified from their distinctive black-and-white head pattern and golden wing & tail panels on a brownish body plumage. Like other laughingthrushes, black-faced laughingthrushes also take insects such as beetles, spiders, however, it also eats fruits, seeds, nectar, and even small reptiles. Although their number is gradually decreasing, they are a common sight in these forests of Sikkim, foraging on the ground and tossing the leaf litter aside with its beak to uncover the hidden invertebrates.

After having a small break at the Barsey campsite and refueling ourselves with some snacks, we took the trail to Jorbutey, our campsite for the night. The path to Jorbutey is a less walked trail that passes through a dense forest of tall rhododendrons trees and offers trekkers the true beauty of this scenic trek route.

To be continued …

Resources:

1. Collins Field Guide, “Birds of India, Pakistan, Nepal, Bhutan, Bangladesh and Sri Lanka” (2015).

2. Salim Ali, “Birds of Sikkim” (1896).

3. Pranabesh Sanyal & Biswajit Roychowdhury, “Paschimbanglar Pakhi” (1994). 

4. Salim Ali and Ripley Dillon, “Handbook of the Birds of India and Pakistan: Vol 4” (1987).

Photo Courtesy:

Soumyo Chatterjee (Author)

*****************************

Tales from Street: Revisiting the lanes around Sealdah

Auishi Chatterjee

Student, Presidency University

We are all at a point where our lives are returning to the pre-pandemic routines. The schools are seeing the faces of the children, the colleges are welcoming the students, past and present. The offices which might have offered work-from-home from 2020 are returning to their old schedules of work from office. At such a time, when one is going back to familiar places, using the same old routes that had become a part of the routine, I also had the chance to go back to Sealdah, a place which was once a part of my daily life.

The station now looks different from the way it looked like before the lockdowns. It now has almost everything that a person could possibly ask for as an aspect of modernization. From multiple new expensive eateries and malls to shop from, to the shops of umbrellas and expensive gold jewelleries, there seems to be nothing missing here. However, the small nursery that was right in front of the south section, and the few small tea stalls inside the station area are now nowhere to be found, probably they are no longer relevant in the chaos of development and modernization.

Engaged with work under the flyover

To look back into the pages of history, Sealdah got its name because of its condition around 200 years ago. As P. Thankkapan Nair says, the term ‘Sealdah’ can be broken into two parts – ‘sial’, meaning jackal and ‘dihi’ meaning village. Sealdah received its name from the presence of jackals in the village at that time, for this part of the city, which connects almost a major part of Bengal now, was once filled with marshy lands and very less people. With the expansion of the business of the English East India Company, as H. E. A. Cotton writes, the place became important to be developed into a terminus. It was at this time that trains started operating, connecting the various parts of Darjeeling and East Bengal, slowly increasing the number of trains and expanding its reach to the southern parts of Bengal too. Walking through the station, I am reminded of the ignorance we have towards the routine, the mundane. It is the ordinary that we pay the least heed to, yet it was the ordinary which we craved for during the lonely lockdowns. 

Stepping outside the station, one can be baffled by the huge number and variety of shops that can cater to all kinds of buyers. Outside the North gate, in B.B. Ganguly street, I spot the freshest kinds of vegetables. Koley Market, adjacent to the station, is one of the largest wholesale vegetable markets of Kolkata, as well as India. It is filled with vendors from various parts of Bengal and beyond, who can be spotted carrying heavy sacks of vegetables to the wholesale market. However, I walk towards the otherside, where I see the Baithakkhana bazar, printing and selling unimaginable amounts of paper, exercise books, and other such things. I recall the days when I could buy as much stationery as I would like, without burning a hole in my pocket. These shops extend from the baithakkhana street to the whole stretch of Surya Sen street, thus making themselves accessible to all kinds of buyers. There are many other such shops under the flyover, and these shops sell various kinds of essential as well as luxurious items. If explored, this part of the city can turn out to be a place interesting like no other. 

Paper market extends from Baithakkhana bazar to Surya Sen street

Spending a few minutes here can easily make one realize that it is here where the social and economic barriers between people can get blurred, for almost everyone who has to board a train, or has to work here, has to be at peace with the other.  Although there was a lot of work to be done at that time, I stopped for a while, and walked through the busy lanes and roads of Sealdah. I also recalled the days before the pandemic, the days when I did not have the slightest wish to glance through the shops, for I was too preoccupied with my own world. The cacophony of the streets and lanes of Sealdah, the constant announcements and loud music would always be a disturbing experience for me earlier, and yet, it was this regularity of the lanes of Sealdah and my memory, that brought a smile on my masked face that day.

*****************************